ঈদের পরে দুইদিন ছুটি পাচ্ছে জাবি শিক্ষার্থীরা, বন্ধের মধ্যেও চলবে টিউটোরিয়াল


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫:৩৬ অপরাহ্ন, ২৬শে মার্চ ২০২৪


ঈদের পরে দুইদিন ছুটি পাচ্ছে জাবি শিক্ষার্থীরা, বন্ধের মধ্যেও চলবে টিউটোরিয়াল
ফাইল ছবি

পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ১৫ দিনের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। রবিবার (২৪ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ ছুটির ঘোষণা দেয়া হয়। তবে এবার ঈদের পূর্বে পর্যাপ্ত ছুটি থাকলেও পরে ছুটি কম থাকায় শিক্ষার্থীদের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। একদিকে যেমন বাস-ট্রেনের টিকেট পেতে ভোগান্তি পোহাতে হবে, অন্যদিকে পরিবারের সাথে ভালোভাবে সময় কাটানোরও সুযোগটাও হবে না বলে মন্তব্য করছেন শিক্ষার্থীরা।


বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পবিত্র রমজান, শবে কদর, জুমাতুল বিদা, পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে ৩১ মার্চ থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তবে অফিস বন্ধ থাকবে ৫ এপ্রিল থেকে ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত। ছুটি শেষে ১৫ এপ্রিল থেকে ক্লাস ও অফিসের সকল কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে।’


আরও পড়ুন: পহেলা বৈশাখে ঢাবিতে মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ, আছে আরও নির্দেশনা


উল্লেখ্য, এ বছর গত ১২ মার্চ থেকে রমজান শুরু হয়েছে। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করায় ঈদের সম্ভাব্য তারিখ ১০ অথবা ১১ এপ্রিল। সে হিসেবে ঈদের পরে শিক্ষার্থীরা ঈদের পর ছুটি পাচ্ছেন মাত্র দুইদিন। ঈদের পর এতো দ্রুত সময়ের মধ্যে শ্রেণি কার্যক্রম শুরুর ঘোষণাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হঠকারী সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া এমন সিদ্ধান্তে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে।


ঈদের ছুটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিবুল হোসাইন বলেন, ঈদের তিনদিন পরেই ক্লাস করার জন্য ক্যাম্পাস ফিরে আসতে হবে। নিজ পরিবার ভাই-বোন আপনজন ছেড়ে আমরা সারাবছর ক্যাম্পাসের হলে অবস্থান করি। স্বাভাবিকভাবেই আমরা আশা করি ঈদের সময়টা একটু পরিবারের সাথে থাকবো মা-বাবাকে একটু সময় দিব। কিন্তু জাবি প্রশাসন ঈদের ছুটির ব্যাপারে যে সিধান্তটা নিয়েছে এইটা খুবই হতাশাজনক। বিশেষ করে যারা মুসলিম সারামাস রোজা রাখার পর বাসায় গিয়ে একটু বিশ্রামও নিতে পারবে না তার মধ্যেই ক্যাম্পাস ফিরে আসতে হবে। প্রশাসনের উচিত হবে ছুটি কিছুদিন বাড়িয়ে দেয়া।


প্রশাসনের ছুটির সিন্ধান্তকে দায়ছাড়া দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আবরার হামিম নিয়াজ মন্তব্য করে বলে, আসলে ঈদ-উল-ফিতর ও ১লা বৈশাখের (বাংলা নববর্ষ) ছুটি নিয়ে কি আর বলবো। প্রশাসন যারা চালায় তারা মনে হয় গুটি কয়েক শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে সিধান্ত নিয়েছে। শিক্ষকরা তো পরিবারের সাথেই থাকে তাই পরিবারের আসল মর্মটা বোঝে না। যদি পরিবার থেকে দূরে থাকতো তাহলে শিক্ষার্থীদের কষ্টটা বুঝতে পারতো। যারা এই ছূটির সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাদের নিজ পরিবার থেকে কয়েকমাস দূরে রাখা উচিত তাহলে বুঝতে পারবে। ঈদের সময় ছুটিটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ।


আরও পড়ুন: ২৫ মার্চের গণহত্যায় শহীদদের স্মরণে ইবিতে ব্ল্যাকআউট


বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রকিব হাসান প্রান্ত জানান, আমাদের শিক্ষকরা কখনোই শিক্ষার্থীবান্ধব না। ঈদের পরে বন্ধ মাত্র দুইদিন পেয়েছি। আমাদের অনেকেরই বাসা বাংলাদেশের একদম শেষ প্রান্তে। অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করতে হয়। আসা যাওয়া করতেই দুইদিন সময় চলে যায়। ঈদের সময় যানবাহনের চাপটাও বেশি থাকে। গাড়ির ভাড়াটাও নাগালের বাইরে চলে যায়। ঈদের দুইদিন পরে গাড়ি পাওয়া অনেকটাই আকশ-কুসুম কল্পনা করার মতো তার মধ্যে প্রশাসন ঈদের পর ক্যাম্পাস মাত্র দুইদিন বন্ধ ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের সাথে প্রহসন ছাড়া আর কিছুই না।


নাম গোপন রেখে এক শিক্ষার্থী ফেসবুক গ্রুপে তার মন্তব্য উল্লেখ করে বলেন,এবার রমজান ও ঈদের ছুটি মাত্র ১৫ দিন। ১১ তারিখ ঈদ হলে ঈদের ৩ দিন পর থেকেই ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু। এমন অবস্থায় যেখানে ২৮ মার্চ ছুটি শুরু, সেখানে অফিসিয়ালি ছুটি হয়ে যাওয়ার পরেও ৪-৫ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দিয়ে আটকে রাখাকে প্রশাসন কিভাবে দেখেন? বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করার পরেও এভাবে ক্লাস-টিউটোরিয়াল নেওয়া কতটা বৈধ ও মানবিক? এমনিতে অধিকাংশ শিক্ষকই সারা বছর টিউটোরিয়ালগুলো না নিয়ে রমজান মাস আসলেই টিউটোরিয়াল-প্রেজেন্টেশন নিয়ে আমাদের রোজার কষ্ট দ্বিগুণ করে দেন যাতে রোজা পালন করে তাদের ক্লাসে লেকচার দিয়ে কষ্ট করা না লাগে। আমাদেরও পরিবার আছে। সারা বছর হলে থেকে আমাদের পরিবারের সাথে ঈদের সময় কিছুদিন কাটানোর ইচ্ছা থাকে। কিন্তু আমাদের শিক্ষকরা আমাদের পরিস্থিতি বোঝার মত যথেষ্ট মানবিক না।


ছুটি পুনর্বিবেচনার করা সম্ভব কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার আবু হাসান বলেন, এখন তো আর ছুটি পুনঃবিবেচনা করা সম্ভব না সার্কুলার হয়ে গেছে।   এটা তো আসলে সিন্ডিকেট ছাড়া হয় না আর এখনতো সিন্ডিকেট করারো সুযোগ নেই। ক্যালেন্ডার সিডিউল ধরে গত বছরের সিন্ডিকেট এই সিদ্ধান্তটা হয়েছে। এখন আর এটা এডজাস্ট করার কোন সুযোগ নেই। তবে এই ব্যাপারে আগামীকাল আমি প্রশাসন এবং উপাচার্যের সাথে কথা বলব।


জেবি/এসবি