টেকনাফে পাওনা টাকার জেরধরে বন্ধুর গুলিতে বন্ধু নিহত


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪:৩৯ অপরাহ্ন, ৩০শে মার্চ ২০২৪


টেকনাফে পাওনা টাকার জেরধরে বন্ধুর গুলিতে বন্ধু নিহত
ছবি: প্রতিনিধি

কক্সবাজারের টেকনাফে ‘মাত্র ৫০০ টাকা পাওনার’ বিরোধের জেরে ‘ইফতার প্রস্তুতির’ সময় ঘরে ঢুকে গুলি করে এক যুবককে খুন করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।


স্বজনদের দাবি, ঘটনাটি পাওনা টাকার বিরোধকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছে বলে বিভিন্ন মহলে প্রচার করে মূলত জমি জবরদখলের ঘটনাকে আড়াল করার চেষ্টা চালাচ্ছে ভূমিদস্যু একটি চক্র। আর চক্রটির প্রধান হোতা স্থানীয় ইউপি সদস্য এনামুল হক ওরফে এনাম মেম্বারের ইন্ধনে এই হত্যাকান্ডটি ঘটেছে।


টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ ওসমান গনি জানান, শুক্রবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যায় ইফতারের আগ মুহুর্তে টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাজির পাড়ায় এ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।


নিহত মোহাম্মদ জুবায়ের (২২) একই এলাকার মৃত আব্দুল খালেকের ছেলে। তিনি পেশায় একজন দর্জি শ্রমিক।


স্বজনদের বরাতে ওসমান গনি বলেন, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের নাজির পাড়ার স্থানীয় মো. কায়েসের দোকান থেকে বাকিতে মোহাম্মদ জুবায়ের কিছু মালামাল কিনছিলেন। এ নিয়ে বুধবার (২৭ মার্চ) উভয়ের মধ্যে তর্কাতর্কির ঘটনা ঘটে। পরে স্থানীয়ভাবে ওই বিরোধের মিমাংসাও হয়। 


“নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, ঘটনার ব্যাপারে দোকানি কায়েস তার মামা নজমুদ্দিনকে জানায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় কোন ধরণের উসকানি ছাড়া নজমুদ্দিনের নেতৃত্বে কয়েকজন লোক মোহাম্মদ জুবায়ের এর বাড়ীতে হামলা চালায়। হামলাকারিরা এক পর্যায়ে জুবায়েরকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়। এতে তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।’’


আরও পড়ুন: উলু ফুলে স্বপ্ন পুরন পাহাড়ের মানুষের


ওসি বলেন, পরে গুলিবিদ্ধ জুবায়েরকে স্বজনরা উদ্ধার করে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। তার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন। রাতে সেখানে আনা হলে তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) পাঠান।


পরে রাত ১১ টার দিকে চমেকে নেওয়ার পথে রামু উপজেলার চাবাগান এলাকায় জুবায়ের মারা যান বলে জানান ওসমান গনি।


নিহতের বড় ভাই আব্দুস সাত্তার বলেন, স্থানীয় দোকানি কায়েস তার ভাই জুবায়ের এর কাছে বাকিতে মালামাল ক্রয় বাবদ ৫০০ টাকার কিছু বেশী পাওনা ছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাদানুবাদের ঘটনা ঘটলেও পরে স্থানীয়ভাবে বিরোধের মিমাংসাও হয়েছে। পরে ঘটনার ব্যাপারে দোকানি কায়েস তার মামা নজমুদ্দিনকে জানায়।


“ শুক্রবার সন্ধ্যায় জুবায়ের বাড়িতে খাবার সামগ্রী নিয়ে ইফতারের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এসময় স্থানীয় ইউপি সদস্য এনামুল হক ওরফে এনাম মেম্বারের ইন্ধনে নজমুদ্দিন ও তার ভাই ফিরোজের নেতৃত্বে ৮/১০ জন আমাদের বাড়ীতে হামলা চালায়। হামলাকারিরা এক পর্যায়ে জুবায়েরকে লক্ষ্য করে পর পর দুইটি গুলি ছুড়ে। এতে সে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়েছে।’’


তিনি অভিযোগ করে বলেন, “ দীর্ঘদিন ধরে তাদের মালিকানাধীন কিছু পরিমান জমি জবরদখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে ইউপি সদস্য এনামুল হকের নেতৃত্বে প্রভাবশালী একটি চক্র। মূলত সেটাকে আড়াল করতে চক্রটি ঘটনাটি পাওনা টাকার বিরোধকে পুঁজি করে ঘটেছে বলে বিভিন্ন মহলে প্রচারে নেমেছে।’’


আরও পড়ুন: আখাউড়ায় ৫০ লাখ টাকার ভারতীয় আতশ বাজি উদ্ধার করেছে বিজিবি


নিহতের নিকটাত্মীয় ও প্রতিবেশী রবিউল আলম বলেন, স্থানীয় ইউপি সদস্য এনামুল হকের নেতৃত্বে একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র সক্রিয় রয়েছে। আর চক্রটির সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় জমি জবরদখল, মাদকপাচার ও সাগরে দস্যুতাসহ নানা অপরাধ সংঘটন করে আসছে। এলাকার সাধারণ মানুষ ভয়ে কোথাও তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পায়। 


কেউ বিরুদ্ধাচরণ করলে খুন ও মিথ্যা মামলায় আসামিসহ নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় বলে অভিযোগ করেন স্থানীয় এ বাসিন্দা।


ঘটনায় অভিযোগের ব্যাপারে জানতে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এনামুল হকের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলে তিনি সাড়া দেননি। 


পরে ক্ষুদে বার্তা পাঠানোর পরও কোন ধরণের সাড়া না দেওয়ায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।


ওসি ওসমান গনি জানান, ঘটনার প্রকৃত কারণ উদঘাটনের পাশাপাশি জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে।


নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।


এমএল/