মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ:
সীমান্তের ওপারে দিনভর বিকট শব্দ
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৮:০৮ অপরাহ্ন, ৮ই এপ্রিল ২০২৪
মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের মংন্ডু টাউনশিপের উত্তরে বলিবাজার ও পেরাংপুরু নামের দুইটি গ্রামকে ঘীরে সোমবার ( ৮ এপ্রিল) দিনভর টানা বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শোনা গেছে।
সীমান্তবর্তী এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, রবিবার (৭ এপ্রিল) মধ্যরাত থেকে সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এই দুইটি গ্রামকে ঘীরে থেমে থেমে মর্টার শেল বিস্ফোরণ হয়েছে। যা শুনতে পেয়েছেন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং, হ্নীলা, সাবরাং ইউনিয়ন ও টেকনাফ পৌরসভার সীমান্ত এলাকার লোকজন।
এর আগে শনিবার (৬ এপ্রিল) দিনভর থেমে থেমে অন্তত ৪০টি মর্টারশেল বিস্ফোরিত হয়। এরপর রবিবার রাত ১১টা থেকে শুরু হয় বিকট শব্দ। যা আজ ভোর থেকে বাড়তে থাকে।
সীমান্তের ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, মিয়ানমারের মংন্ডু টাউনশিপের উত্তরে বলিবাজার ও পেরাংপুরু গ্রামে আরকান আর্মির দখলে যাওয়া চৌকি উদ্ধারে জান্তা চেষ্টা করছে। এর জের ধরে সংঘাত বেড়েছে।
সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওযার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ শরীফ জানান, সোমবার দিনভর থেমে থেমে মর্টার শেল বিস্ফোরণ হচ্ছে। ভয়ে আতঙ্ক বাড়ছে এ পারে। কেঁপে উঠে টেকনাফের বিভিন্ন বাড়িঘর।
আরও পড়ুন: ভারতে সাজা খেটে দেশে ফিরলেন ২ বাংলাদেশি
হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, বিকট বিস্ফোরণের শব্দ নাফ নদীর এপারে হ্নীলা ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উত্তরপাড়া, লম্বাবিল, উনচিপ্রাং, কাঞ্জরপাড়া, হ্নীলা, মৌলভীবাজার, ওয়াব্রাং, ফুলের ডেইল, চৌধুরীপাড়া, পুরান বাজারসহ কয়েকটি গ্রামে শোনা গেছে। এ্ই পবিত্র রমজানে অনেকে ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটান।
হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওযার্ডের ইউপি শাহ জালাল বলেন, সীমান্তের ওপারে বিকট শব্দ আতংক তৈরি করেছে। ঈদের আগমূহুর্তেও চিংড়ি ঘেরে যাচ্ছে না চাষীরা।
সাবরাং ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য রেজাউল করিম জানান, টানা কয়েকদিন বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। নাফনদীর ওপারে আবারও সংঘর্ষ চলছে।
ব্যবসার কাজে এ দেশে আসা মিয়ানমারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আরাকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলের একটি এলাকা ও বেশ কিছু থানা দখল করে নিয়েছে। ওই এলাকাগুলোতে নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া সেদেশের সেনাবাহিনী। এ জন্য সংঘাত বাড়ছে। মাঝেমধ্যে বিমান ও হেলিকপ্টার থেকে ও মটার সেলের হামলা চালাচ্ছেন।
আরও পড়ুন: উখিয়ায় বন কর্মকর্তা হত্যা মামলার প্রধান আসামি চট্টগ্রামে গ্রেফতার
সংঘাতের কারণে সরকারি বাহিনীর বেশ কিছু সদস্য কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। সর্বশেষ গত ৩০ মার্চ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ৩ জন সদস্য নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। এর আগে ১১ মার্চ আশ্রয় নেন আরও ১৭৭ জন বিজিপি ও সেনাসদস্য। তারা সবাই নাইক্ষ্যংছড়ি সদরে ১১ বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) হেফাজতে রয়েছেন। এর আগে কয়েক দফায় বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছিলেন আরও ৩৩০ জন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ৩৩০ জনকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ওপারের দুই মাসের সংঘাতে টেকনাফ সীমান্তের লোকজন আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। মিয়ানমারের কিছুদিন বন্ধ থাকার পর নতুন করে মর্টার শেলের বিস্ফোরণে টেকনাফের কয়েকটি গ্রাম কেঁপে ওঠে। সত্যিই বিকট শব্দ শোনলে ভয়ে চমকে উঠে অনেকে।
রাখাইন পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে জানিয়েছেন টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, শনিবার থেকে আবারও গোলাগুলি সংঘর্ষ শুরু হয়েছে মিয়ানমারের। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে বিজিবির টহল বাড়ানো হয়েছে।
এমএল/