মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন, ২রা মে ২০২৪


মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
ছবি: সংগৃহীত

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়। অভিযোগ নিয়ে তাকে আটকের কারণ জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।


বুধবার (১ মে) সন্ধ্যায় ডিবি পুলিশের একটি দল ঢাকার মিরপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করে। এরপর রাতে গণমাধ্যমের কাছে ব্রিফ করেন হারুন অর রশিদ।


আরও পড়ুন: আলোচিত মিল্টন সমাদ্দার গ্রেফতার


ডিবিপ্রধান বলেন, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিল্টন সমাদ্দারকে নিয়ে অনেক লেখালেখি হচ্ছে। এছাড়া আমাদের কাছে বেশকিছু অভিযোগ এসেছে। সেগুলোর প্রেক্ষিতে আমরা তাকে তার পাইকপাড়ার কার্যালয় থেকে আটক করেছি। তার বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে। আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ডে এনে তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ উঠেছে এগুলো তদন্ত করে দেখবো।


তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে তার বিরুদ্ধে মানবপাচার, শিশু ও বৃদ্ধদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি করার অভিযোগ আছে। এগুলো আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করে দেখবো। এছাড়া তিনি যে অনুদানের টাকা পেতেন তা যথাযথভাবে খরচ করা হতো কিনা, তার শেল্টার হোমে শিশু ও বৃদ্ধ যারা আশ্রিত থাকতেন, তাদের অভিভাবকরা এলে তাদের যে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে সেগুলোও খতিয়ে দেখা হবে।


একইসঙ্গে তিনি যে ৯০০ লাশ দাফন করার কথা প্রচার করেছিলেন এবং ডেথ সার্টিফিকেটে নিজেই সিল বানিয়ে চিকিৎসকের স্বাক্ষর দিতেন, এসব অভিযোগও আমরা বিস্তারিত তদন্ত করে দেখবো, বলেন হারুন।


মিল্টন সমাদ্দারের সংস্থার অপারেশন থিয়েটারের লাইসেন্স ছিল না, সেখানে অবৈধভাবে অপারেশন করা হতো- এই তথ্য উল্লেখ করে ডিবিপ্রধান বলেন, বরিশালের উজিরপুরের মিল্টন সমাদ্দারের উত্থান নিজ পিতাকে পিটিয়ে। এই অপরাধে এলাকাবাসী তাকে বাড়ি ছাড়া করেন। এরপর ঢাকার শাহবাগে এসে একটি ফার্সেমিতে কাজ শুরু করেন তিনি। ওষুধ বিক্রির টাকা চুরি করায় সেখানেও বেশিদিন টিকতে পারেনি মিল্টন। এরপর মিঠু হালদার নামের এক নার্সকে বিয়ে করে সে। বিয়ের পর ওল্ড অ্যান্ড চাইল্ড নামের একটি কেয়ার সেন্টার স্থাপনের স্বপ্ন দেখে তারা। পরবর্তীতে মিরপুর এলাকায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার নামের একটি কেয়ার সেন্টার স্থাপন করে। সে খুঁজে খুঁজে গরিব, বৃদ্ধ ও বাচ্চা শিশুদের সেখানে নিয়ে আসতো। বিভিন্ন মিডিয়ায় সে জানিয়েছে, তার কেয়ার সেন্টারে অপারেশন থিয়েটার আছে এবং সেখানে সে মানুষের সেবা দেয়। অপারেশন থিয়েটার থাকলে তো লাইসেন্স থাকতে হবে, তার লাইসেন্স ছিল না।


আরও পড়ুন: জানাজায় গিয়ে মোবাইল খোয়ালেন ধর্মমন্ত্রী


তিনি আরও বলেন, মিল্টনের বিরুদ্ধে আমরা অজস্র অভিযোগ পেয়েছি। সে বলেছে তার দুইটা আশ্রম রয়েছে৷ সাভারের আশ্রমে ৫ থেকে ৭ শত লোক রয়েছে৷ কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেখানে ২০ থেকে ৩০ জনের বেশি লোক নেই। আমরা তাকে নিয়ে এসেছি। কিছু অভিযোগকারী রয়েছে তারাও মামলার রুজু করবে। আমরা মিল্টনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবো কত সংখ্যক মানুষ কাছে চিকিৎসার জন্য গিয়েছিল, কত সংখ্যক মানুষ মারা গেলো। তার আশ্রমে যে অপারেশন থিয়েটার রয়েছে এর মাধ্যমে কিডনি বিক্রি করেছেন কিনা সেটাও তদন্ত করা হবে।


প্রসঙ্গত, গত ২৫ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে প্রতারণার নানা অভিযোগ উঠে আসে। এতে বলা হয়েছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ১৬টির বেশি নম্বর এবং তিনটি ব্যাংক হিসাবে প্রতি মাসে প্রায় কোটি টাকা জমা হয়। এর বাইরে অনেকেই তার প্রতিষ্ঠানে সরাসরি অনুদান দিয়ে আসেন। এই অর্থের অপব্যবহার করেন তিনি।  মানবিক কাজের জন্য এ পর্যন্ত তিনি তিনটি রাষ্ট্রীয় পুরস্কারও পেয়েছেন মিল্টন সমাদ্দার। 


জেবি/এজে