ভারতে চাকরির প্রলোভনে কৌশলে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে কিডনি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৮ অপরাহ্ন, ১২ই মে ২০২৪
সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নিয়ে যায় একটি চক্র। এরপর পাসপোর্ট নিয়ে তাদেরকে জিম্মি করে টাকার লোভসহ ভিন্ন কৌশলে কিডনি হাতিয়ে নেয় চক্রটি।
রবিবার (১২ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে অবস্থিত ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপস) ড. খ: মহিদ উদ্দিন।
সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি থানায় চক্রটির বিরুদ্ধে রবিন নামে এক ভুক্তভোগী একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ধানমন্ডি থানা পুলিশ এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। গত ১১ মে ধানমন্ডি ইবনেসিনা ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের সামনে থেকে ও বাগেরহাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেফতাররা হলেন মো.রাজু হাওলাদার (৩২), শাহেদ উদ্দীন (২২) ও মো.আতাহার হোসেন বাপ্পী (২৮)। এ ঘটনায় পলাতক রয়েছেন মো.মাছুম (২৭), শাহীন (৩৫) ও সাগর ওরেফ মোস্তফা (৩৭) সহ অজ্ঞাতনামা ১০/১২ জন।
ড. খ: মহিদ উদ্দিন বলেন, গত ২০২৩ সালে এপ্রিল মাসের কোনো এক তারিখে মিরপুর-১০ নং শাহ আলী মার্কেটের পিছনে চায়ের দোকানে রবিন তার এক বন্ধুর সাথে চা খাচ্ছিল এবং সংসারের অভাব অনটন নিয়ে কথাবার্তা বলছিল। এই কথাবার্তা চলাকালীন পাশে বসা অভিযুক্ত পলাতক আসামি মাছুমও চা পান করছিল। এসব কথাবার্তা শুনে মাছুম নিজ থেকেই ভিকটিমকে বলে যে, ভারতে তার ব্যবসা আছে এবং ঐ প্রতিষ্ঠানে সে রবিনকে চাকরি দিতে পারবে। একপর্যায়ে মাছুমের সঙ্গে মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান করেন রবিন। এরপর মাছুমের সঙ্গে নিয়মিত কথা হতো রবিনের। একপর্যায়ে ভারতে গিয়ে চাকরির বিষয়ে রাজি হয় রবিন।
আরও পড়ুন: বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা, ভোগান্তিতে রাজধানীবাসী
তিনি বলেন, পরবর্তীতে মাছুম ভিকটিম রবিনকে বলে ভারতে তার প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য যেতে হলে ডাক্তারি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে ভিকটিমকে নিয়ে যায় মাছুম। সেখানে ভিকটিমের সঙ্গে গ্রেপ্তার আসামি মো.রাজু হাওলাদারের পরিচয় হয়। পরে আসামিরা ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তার পাসপোর্ট নিয়ে নেয় ভারতের ভিসার জন্য।
ভিসার পাওয়ার পর ভিকটিমকে মাছুম ও মো.রাজু হাওলাদার গ্রেপ্তার আসামি শাহেদ উদ্দিন (২২) ও মো. আতাহার হোসেন বাপ্পীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারা একে অপরের ব্যবসায়িক পার্টনার, বাংলাদেশ ও ভারতে তারা যৌথভাবে ব্যবসা পরিচালনা করে বলে ভিকটিমকে জানায় আসামিরা। পরবর্তীতে ভিকটিমকে ভারতের দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে রিসিভ করে পলাতক আসামি শাহীন (৩৫) ও সাগর। তারা ভিকটিমকে রিসিভ করে তার পাসপোর্ট হাতিয়ে নেয়। দিল্লি থেকে ভিকটিমকে ফরিবাদ নামে একটি এলাকার রাখা হয়।
আরও পড়ুন: ‘কাচ্চি ভাই’র মালিক গ্রেফতার
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে ফুসলিয়ে কাউকে কিছু না বলার শর্তে আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে গত ৪ মার্চ ভারতের গুজরাট কিডনি এন্ড স্পেশালাইজড অস্ত্রোপচারের ভিকটিমের একটি কিডনি নেওয়া হয়।
অপারেশন শেষে হাসপাতাল থেকে ৪ দিন পরে ছাড়া পায় ভিকটিম। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন মাধ্যমে ভিকটিম জানতে পারে যে, তার কিডনি আসামিরা দালাল চক্রের কাছে প্রায় ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করে। এক পর্যায়ে দালালচক্র ভিকটিমকে কিছু টাকা দেওয়ার কথা বলে। বাংলাদেশে অবস্থান করা চক্রের অন্য সদস্যরা ভিকটিমের স্ত্রী ইশরাত জাহানের বিকাশ নম্বরে ৩ লাখ টাকা দেয়। পরে এভাবে দেশে এসে ভিকটিম বুঝতে পারে যে, সে বড় দালালচক্রের খপ্পরে পড়ে তার কিডনি হারিয়েছে।
জেবি/এসবি