বাসে জাবি ছাত্রী হেনস্তার প্রতিবাদে ১৬ টি বাস আটক
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৭:৪৫ অপরাহ্ন, ১৫ই মে ২০২৪
ঢাকা-সাভারগামী মৌমিতা পরিবহনের বাসে হেল্পার কর্তৃক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির ঘটনাকে কেন্দ্র করে মৌমিতা পরিবহনের ১৬ টি বাস আটকে রেখেছে শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৪ মে) সাভার থেকে টিউশন করিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার পথে সাভারের রেডিও কলোনী এলাকায় হেনস্তার শিকার হন ওই ছাত্রী। এ ঘটনায় বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে তিনি।
অভিযোগ পত্র সূত্রে জানা যায়, আমি গতকাল (মঙ্গলবার) সন্ধ্যা ৬:১৫ এর দিকে ব্যাংক টাউন থেকে টিউশন করিয়ে মৌমিতা বাসে করে ক্যাম্পাসের উদ্দেশ্যে আসছিলাম। বাসের হেল্পার বাস ভাড়া চাইলে আমি টাকা দেই। হেল্পার বলে তার কাছে ভাংতি নাই, পরবর্তীতে আমাকে ভাংতি টাকা ফেরত দিবে। কিন্তু বাস রেডিও কলোনির কাছাকাছি আসার পর হেল্পার জানায় বাস আর সামনে যাবে না। বাসের যাত্রীরা সবাই তখন নেমে চলে যায়।আমি তখন হেল্পারকে ভাংতি টাকা ফেরত দেয়ার জন্য বললে হেল্পার বলে, আপনাকে ঢাকা নিয়ে যাই।
ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী আরও জানান৷ তখন বাসে মাত্র তিনজন লোক ছিলো৷ বাসের চালক,হেল্পার এবং ওদের সাথের একজন৷ ঢাকা নিয়ে যাবে বলেই, তারা আমাকে বাজেভাবে ইঙ্গিত দেয়। আমি খুব ভয় পেয়ে যাই। আর তখনই তাড়াহুড়ো করে বাস থেকে নামতে চেষ্টা করলে বাস ছেড়ে দেয়। আমি তখনই কিছু না ভেবে বাস থেকে লাফ দেই এবং তখন আমার হাঁটুতে প্রচুর ব্যথা পাই। এই ঘটনার পরে আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। আমার ব্যাচমেটদের বিষয়টি জানালে ওরা আমাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
এই ঘটনার জেরে বুধবার সকাল আটটা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক (ডেইরী গেট) এলাকায় ঢাকা- নবীনগরগামী মৌমিতা পরিবহনের ১৬ টি বাস আটক করে শিক্ষার্থীরা। তবে আটককৃত বাসের চালক ও হেল্পারদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থসহ মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগ করেছেন বাস কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: জাবির তিন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জরিমানা
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বন্ধু ও প্রাণরসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী সোহেল রানা জানান, মঙ্গলবার আমাদের বান্ধবীর সাথে একটা খারাপ ঘটনা ঘটেছে। প্রতিবাদে আমরা মৌমিতা পরিবহনের বাস আটকিয়েছি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর স্যার ও আশুলিয়া থানার পুলিশকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে সব সিসিটিভি ফুটেজ থাকলেও ৬.১০ থেকে ৬.১৮ পর্যন্ত সময়ের কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
আটককৃত বাসের চালক মোজাম্মেল ও হেল্পার বাবলু জানান, সকাল সাড়ে আটটা থেকে আমাদের বাসগুলো ছাত্ররা আটক করে। ঘটনা আমরা জানতাম না। ছাত্ররা বাস আটকে আমাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ নিয়ে নেয়। তখন আমরা বলি, আপনারা বাস আটকান- সমস্যা নাই। বাস মালিকের সম্পত্তি, কিন্তু ফোন তো আমাদের পার্সোনাল জিনিস। ফোন না দেয়ায় আমাকে চার-পাঁচটি চড় মেরে ফোন ছিনিয়ে নেয় ছাত্ররা।
আরও পড়ুন: জাবিতে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের মানববন্ধন
সহকারী প্রক্টর মনির উদ্দিন শিকদার বলেন, আমরা আশুলিয়া থানার পুলিশসহ ছাত্রদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। কিন্তু সিসিটিভি দেখে কোনো ঘটনা শনাক্ত করতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমরা খুব সিরিয়াসলি বিষয়টা দেখছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা কর্মকর্তা সুদীপ্ত শাহীন বাদী হয়ে মামলা করবেন। ঘটনা সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত বাসগুলো এখানেই থাকবে। তবে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন,উত্তেজিত অবস্থায় ছাত্ররা এ কাজ করেছে। পরে আমি উপস্থিত হয়ে এক ঘন্টার মধ্যে মোবাইলগুলো ফিরিয়ে দিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড.আলমগীর কবির বলেন, ছাত্ররা ও আশুলিয়া থানার পুলিশসহ আমরা ঘটনা স্থলে গিয়েছি। কিন্তু সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা কিছু শনাক্ত করতে পারি নাই। আমরা বাস কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি দ্রুত ওই বাসের হেল্পার ও চালককে শনাক্ত করে আমাদের জানাতে। পুলিশ ও চেষ্টা করতেছে তাদেরকে শনাক্ত করার জন্য।
জেবি/এসবি