বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় রেমাল


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১:২২ অপরাহ্ন, ২১শে মে ২০২৪


বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় রেমাল
ফাইল ছবি

দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে বুধবার (২২ মে) লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এরপর যদি লঘুচাপটি ঘনীভূত হয়ে শক্তিশালী হয়, তাহলে ঘূর্ণিঝড়েরও সম্ভাবনা রয়েছে। আর যার প্রভাব দেশের উপকূলীয় এবং দক্ষিণাঞ্চলে পড়তে পারে।


মঙ্গলবার (২১ মে) আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। 


তিনি বলেন, বর্তমানে লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে উত্তরপশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অর্থাৎ বুধবার দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে। লঘুচাপটি শক্তিশালী হলে পরবর্তী সময়ে সাইক্লোনে রুপ নিতে পারে। লঘুচাপের প্রভাবে সারা দেশেই বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।


পাশাপাশি লঘুচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনার কথা বলছে বাংলাদেশ আবহাওয়ার অবজারভেশন টিমও। এর প্রধান আবহাওয়া গবেষক মো. খালিদ হোসাইন বলেন, গত ২৩ এপ্রিল থেকেই আমরা ধারণা করছিলাম যে, মে মাসের তৃতীয় থেকে চতুর্থ সপ্তাহের মাঝে একটি সিস্টেম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে পারে। এটি মূলত, মৌসুমি বায়ু বিষুব রেখা অতিক্রম করে উত্তর ভারতীয় মহাসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে ইতোমধ্যে প্রবেশ করতে শুরু করেছে। 


আরও পড়ুন: ১২ অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস


তিনি বলেন, এর প্রভাবে দক্ষিণ ভারত, শ্রীলঙ্কা ও এর আশপাশে সাগরে একটি ঘূর্ণিবাত্যা (ভর্টেক্স) গত বেশ কয়েকদিন ধরেই অবস্থান করছে, যা ক্রমেই দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-মধ্য বঙ্গোপসাগরের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি রসভি ওয়েভ, কেলভিন ওয়েভ ও এমজেও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে একটি সুস্পষ্ট লঘুচাপে পরিণত হতে পারে বুধবার (২২ মে) নাগাদ।


এ সময় তিনি আরও বলেন, এটি শুরুতে শক্তি বৃদ্ধি করে উত্তর পূর্বে সঞ্চালিত হলেও পরবর্তী সময়ে উত্তর পশ্চিমমুখী হয়ে তার গতিপথ বজায় রাখতে পারে। এই সময়কালে এটি ঘূর্ণিঝড় রিমালে পরিণত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টি ভারতের পূর্ব উপকূলের লোগো উড়িস্যা রাজ্য থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সুন্দরবন এরিয়ার মধ্যে যেকোনো জায়গায় আঘাত হানতে পারে। তবে মূল সম্ভাবনা থাকবে ভারতের উড়িস্যা রাজ্যের আশেপাশেই।


আবহাওয়াবিদ খালিদ হোসাইন সম্ভাব্য এই ঘূর্ণিঝড়ের গতিপথ সম্পর্কে বলেন, আমার ধারণা মতে, এটি ক্যাটাগরি-২ সাইক্লোনের ওপরে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ পর্যায়ে রয়েছে। এর গতি থাকতে পারে প্রতি ঘণ্টায় ৯৫ থেকে ১৪৫ কিলোমিটারের মধ্যে।


আরও পড়ুন: ঘূর্ণিঝড় নিয়ে সর্বশেষ যে তথ্য জানাল আবহাওয়া অধিদপ্তর


এমন ধারণার পেছনে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও দিয়েছেন খালিদ হোসাইন। তার মতে, ওয়েস্ট্রার্ন উইন্ড বার্স্ট’র অবস্থানজনিত প্রেসার ও উপরের স্তরে পূবালি বাতাস প্রবাহের জন্যে এটি পশ্চিমে মুভ করতে পারে। অন্যদিকে, আপার লেভেল জেটস্ট্রিম এই সময়ে উত্তরে থাকায় এর দ্বারা সিস্টেমকে পূর্বদিকে নিয়ে যাওয়াটা কম সম্ভবপর করে তুলতে পারে। ঊর্ধ্ব স্তরের পূবালি বাতাস প্রবাহের কারণে উলম্বীয় বায়ু শিয়ার বেড়ে যেতে পারে। যার কারণে সিস্টেমের শক্তিমত্তা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেতে পারবে না। তাই অন্যান্য প্যারামিটারের যথেষ্ট উপস্থিতি বজায় থাকা সত্ত্বেও এটি ক্যাটাগরি-১ এর শক্তিমত্তার মধ্যেই অবস্থান করতে পারে।


ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলে বাংলাদেশে পড়তে পারে যেরুপ প্রভাব 


উপকূলে লঘু চাপের কারণে সৃষ্ট সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড়ে দুই ধরনের প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।


প্রথম সম্ভাবনা হিসেবে তিনি বলেন, যদি এটি বাংলাদেশের পশ্চিমে তথা সুন্দরবন উপকূলে আঘাত করে, তবে সিস্টেমের ডান পার্শ্ব তথা খুলনা ও বরিশালের উপকূলবর্তী নিচু এলাকা কয়েক ফুট জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। এছাড়া প্রায় সারা দেশেই মোটামুটি বৃষ্টিপাত সংগঠিত হতে পারে।


আরও পড়ুন: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হচ্ছে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়, আঘাত হানতে পারে যে সময়


আর দ্বিতীয় সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি বলেন, যদি এটি উড়িশ্যার আশপাশে ল্যান্ডফল করে, তবে এর একটা আউটার কনভারজেন্স জোন চট্টগ্রাম ও বরিশালে অনেক বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে। অন্যদিকে খুলনা অঞ্চলে সাইক্লোনের প্রভাব সরাসরি পড়তে পারে। আর দূরবর্তী প্রভাবের কারণে একটা দুর্বল কনভারজেন্স অঞ্চল সারা দেশেই বিদ্যমান থাকতে পারে। যার ফলে বর্ষাকালের মত টিপ টিপ বৃষ্টি লক্ষ্য করা যেতে পারে প্রায় সারা দেশেই।


আবহাওয়াবিদ বলেন, সিস্টেম যত বেশি শক্তিশালী হয়, ততো এটি কেন্দ্রের দিকে সংকুচিত হয়ে আসে। যার ফলে মেঘের ব্যাসার্ধ কমে যায়। অন্যদিকে যত কম শক্তিশালী হয়, মেঘ তত দূরে ছড়ানো থাকে, যা একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে। এসব কারণে বাংলাদেশে মোটামুটি বৃষ্টিপাত হবে বলেই ধারণা করা যাচ্ছে।


এমএল/