রাবির হলে তালা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, ভাঙচুর


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:২০ অপরাহ্ন, ২৭শে মে ২০২৪


রাবির হলে তালা দিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, ভাঙচুর
ছবি: প্রতিনিধি

তুচ্ছ ঘটনায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আবাসিক হলের গেটে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন ও ভাঙচুর করেছে শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় প্রাধ্যক্ষকেও অপদস্তের অভিযোগ উঠেছে।


সোমবার (২৭ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলে এ ঘটনা ঘটেছে। 


এ ব্যাপারে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ঝামেলার কথা জেনে গেলে আমাকে হলে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ছাত্রলীগ সহ শিক্ষার্থীরা গেটে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করছিল। তখন ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদ, ইমরান, মাসুদ সহ তাদের অনুসারীরা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করেছে। ফলে বাধ্য হয়ে হল থেকে চলে এসেছি। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবিহিত করেছি। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়া হলে দায়িত্ব থেকে পদত্যাগের কথা জানান তিনি। 


আরও পড়ুন: মহানবী (সা:) কে নিয়ে কটুক্তি, স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি শিক্ষার্থীদের


প্রাধ্যক্ষ বলেন, ক্যাম্পাসে আন্তঃহল খেলাধুলা শুরু হচ্ছে। তাই ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদ ১৫ জন ও মাসুদ ১৫ জনের তালিকা দেয় এবং তাদেরকে খেলাধুলার পোষাক দেয়ার কথা বলেন। কিন্তু হলের আবাসিক শিক্ষকরা খেলোয়াড়দের তালিকা তৈরি করেছেন। তাই তাদের পোষাক দিতে অস্বীকৃতি জানাই। এ ঘটনার জেরে পূর্বপরিকল্পিতভাবে আজকের ঘটনা ঘটতে পারে। 


অভিযোগের ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা তৌহিদ বলেন, জার্সির জন্য প্রাধ্যক্ষকে কোন তালিকা দেয়নি। আজকের ঘটনায় আমি সম্পৃক্ত নই। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিদাওয়া ভিন্নখাতে নিতে এমন অভিযোগ তুলছেন তিনি। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে আরেক নেতা মাসুদের সঙ্গে একাধিকবা ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা করা সম্ভব হয়নি।

 

জানা গেছে, দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব আব্দুল লতিফ হলে ডাইনিংয়ে খাওয়ার সময় খাবারে সিগারেটের অংশ পান এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনার জেরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অতিথি কক্ষ ও প্রাধ্যক্ষের কক্ষে ভাঙচুর চালান এবং হলগেটে তালা দিয়ে আন্দোলন শুরু করেন। পরে ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম সাউদ ও সহকারী প্রক্টর ড. জাকির হোসেন ও আল মামুন ঘটনাস্থলে যান এবং শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শোনেন। কিন্তু বিশৃঙ্খলা হলে ছাত্র উপদেষ্টা ফিরে আসেন। তখন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব হলে আসেন। পরে প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক এসে শিক্ষার্থী অভিযোগ শোনেন এবং দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থী চলে যান। এছাড়া তৌহিদের বিরুদ্ধে সিট দখল, মারধর সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। 


আরও পড়ুন: তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হবার আগেই শিক্ষক সমিতির আপত্তি, যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন


শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হলে ক্যান্টিন সংকট, ইন্টারনেট সমস্যা, ডাইনিং অস্বাস্থ্যকর খাবার, টয়ালেটের দরজা ঠিক নেই, খেলার সরঞ্জাম নেই, হল অপরিষ্কারসহ নানা সমস্যা। বিষয়গুলো প্রাধ্যক্ষকে জানালেও কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেই। 


এ ব্যাপারে প্রাধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, ইন্টারনেট সমস্যা পুরো ক্যাম্পাসে। এটা বিশ্ববিদ্যালয় দেখে। অন্য সমস্যাগুলোও প্রতিনিয়ত সমাধান হচ্ছে।


ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, আমি সেখানে শেষ মুহুর্তে গেছিলাম। সাধারণ শিক্ষার্থীরা খাওয়ার সময় ডালের মধ্যে সিগারেটের কিছু অংশ পাওয়ায়, সেটা নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। পরে প্রাধ্যক্ষ এসে কোনো সমাধান না দিয়েই চলে যায়। পরে আমরা গিয়ে প্রক্টর স্যারকে ডাকি। পরে প্রক্টর স্যার শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন থেকে সরে আসে।


আরও পড়ুন: ক্যান্সারের কাছে পরাজিত হলেন জবি অধ্যাপক


ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, এখানে ছাত্রলীগের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিলোনা। এটা হলের সকলের আন্দোলন ছিল ৷আন্দোলনে সাধারণ শিক্ষার্থীরাই ছিলেন।


প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের বড় কোন অভিযোগ নেই। কার খাবারে সিগারেটের অংশ পাওয়া গেছে সেটাও কেউ জানায় নি। হলের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সহ খাবারের মান বৃদ্ধির বিষয়গুলো জানিয়েছে। সেগুলো সমাধানে প্রাধ্যক্ষকের সঙ্গে আমরা কথা বলব।


এমএল/