মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ ৩১ হাজার কর্মীর স্বপ্নভঙ্গ


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:৪০ পূর্বাহ্ন, ৩১শে মে ২০২৪


মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ ৩১ হাজার কর্মীর স্বপ্নভঙ্গ
ফাইল ছবি

মালয়েশিয়ায় কর্মী ভিসায় যাওয়ার সময় শুক্রবার (৩১ মে) রাতেই শেষ হচ্ছে। তাই ভিসা ও অনুমোদন পেলেও বিমানের টিকিট না পাওয়ায় বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ৩১ হাজার ৭০১ জন শ্রমিকের মালয়েশিয়ায় যাওয়ার স্বপ্ন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। গত মার্চের মালয়েশিয়ার ঘোষণা অনুযায়ী, ৩১ মে অর্থাৎ শুক্রবারের পর আর কোনো নতুন বিদেশি শ্রমিক সেখানে যেতে পারবে নাহ।


বাংলাদেশ জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য মতে,মঙ্গলবার (২১ মে) পর্যন্ত প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ৮৩৪ জন কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেয়। ২১ মে পর আর অনুমোদন দেওয়ার কথা না থাকলেও বিএমইটির তথ্য বলছে, মন্ত্রণালয় আরো এক হাজার ১১২ জন কর্মীকে দেশটিতে যাওয়ার অনুমোদন দিয়েছে। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার (৩০ মে) পর্যন্ত পাঁচ লাখ ২৪ হাজার ৯৪৬ জন কর্মীকে মালয়েশিয়া যাওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার (৩০ মে) পর্যন্ত দেশটিতে চার লাখ ৯১ হাজার ৭৪৫ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় গেছেন।


হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তথ্য থেকে জানা গেছে, শুক্রবার বাংলাদেশ থেকে মাত্র এক হাজার ৫০০ জন কর্মী মালয়েশিয়ায় যেতে পারবেন। অর্থাৎ অনুমোদনকৃত ৩১ হাজার ৭০১ জন কর্মীর যাত্রা বাতিল হয়ে যাচ্ছে।


আরও পড়ুন: পরিবারসহ দেশ ছাড়া বেনজীর, অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা


কুয়ালালামপুরের দুটি আন্তর্জাতিক বিমান টার্মিনালের ফ্লোরে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৪টি দেশ থেকে আসা প্রায় ২০ হাজার কর্মী অবস্থান করছিলেন। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ হাজার কর্মী বাংলাদেশের নাগরিক।


এই মুহূর্তে কুয়ালালামপুর বিমানবন্দরে কর্মীর উপচে পড়া ভিড়। ক্রমেই দুর্ভোগ বাড়ছে কর্মী ও নিয়োগকর্তাদের। নিজেদের কর্মী শনাক্তে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নিয়োগকর্তাদের। কর্মীরা বলছেন, তারা তিন-চার দিন ধরে বিমানবন্দরে অবস্থান করছেন। কেউ নিয়োগকর্তার খোঁজ পাচ্ছেন, আবার কেউ খোঁজ পাচ্ছেন না।


হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তথ্য বলছে, শুক্রবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সাতটি ফ্লাইট মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশের দুটি, ইউএস-বাংলার দুটি, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের একটি, এয়ার এশিয়ার একটি এবং বাতিক এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।


মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধের সময় ঘনিয়ে আসায় বাড়তি দামে টিকিট বিক্রির অভিযোগ করেছে বিভিন্ন রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো। বিমান বাংলাদেশের বিশেষ ফ্লাইটের টিকিটের দামও এক লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে।


আরও পড়ুন: যেসব জলদস্যু ফিরে আসেননি তাদের ক্ষমা নেই: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী


মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগপ্রক্রিয়ার দুর্নীতি নিয়ে গত ২৮ মার্চ মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারকে চিঠি দেয় জাতিসংঘের চারজন স্বাধীন বিশেষজ্ঞ। তবে দুই দেশের সরকারই এই চিঠির কোনো উত্তর দেয়নি বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।


রবিবার (২৬ মে) জাতিসংঘের হাইকমিশনার ফর হিউম্যান রাইটস (ওএইচসিএইচআর) এই চিঠি প্রকাশ করেন। জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ টোমোয়া ওবোকাটা, রবার্ট ম্যাককরকোডালে, গেহাদ মাদি ও সিওবান মুল্লালি এই চিঠি দেন।


চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশি কর্মীদের জনপ্রতি সাড়ে চার থেকে ছয় হাজার ডলার পর্যন্ত নিয়োগ ফি দিতে হচ্ছে, যা ২০২১ সালে এই দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষর হওয়া সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) খেলাপ। ওই এমওইউ অনুযায়ী, এই ফি হবে ৭২০ ডলার পর্যন্ত।


জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উভয় সরকারের কাছে এ বিষয়ে তদন্ত, অপরাধীদের বিচার এবং নৈতিক নিয়োগের নীতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। তবে ৬০ দিনের মধ্যে কোনো সরকার থেকে জবাব না আসায় এই চিঠি মানবাধিকার কাউন্সিলে উপস্থাপন করা হবে বলে জানানো হয়।


এমএল/