সৈকতে ভেসে এলো বিষধর সামুদ্রিক সাপ


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮:৫৯ অপরাহ্ন, ৫ই জুন ২০২৪


সৈকতে ভেসে এলো বিষধর সামুদ্রিক সাপ
ছবি: জনবাণী

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে দেখা মিলেছে বিষধর সামুদ্রিক সাপের।


বুধবার (৫ জুন) বিকেলে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে ভেসে আসে হলুদ পেটযুক্ত এই সাপ।


মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর জনবাণীকে বলেন, হলুদ-পেটযুক্ত সামুদ্রিক সাপ প্রশান্ত মহাসাগরীয় এবং ভারত মহাসাগরের গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে ১৮-২০ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বসবাস করে। এটি সারা বিশ্বের সবচাইতে বিস্তৃত সাপ। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের সাগরেও এটির বিস্তৃতি রয়েছে। এই সাপটি সাধারনত সৈকত থেকে দূরে সাগরের মুক্ত জলে সাঁতার কাটে। এরা সাগরের উপরের স্তরে অর্থাৎ পেলাজিক স্তরে বসবাস করে এবং সাগর তলে এদের দেখা পাওয়া যায়না।


আরও পড়ুন: কক্সবাজারে নারী পর্যটক ধর্ষণ মামলার আসামি গ্রেফতার


তিনি জনবাণীকে জানান, হলুদ-পেট সামুদ্রিক সাপ ইয়েলো বেলিড হাইড্রোফিনি সাবফ্যামিলির একটি বিষধর সাপ। সাপটির মাথা লম্বা যা আকৃতিতে শরীর থেকে আলাদা। শরীরের উপরের অর্ধেক কালো থেকে গাঢ় নীলাভ-বাদামী রঙের এবং নীচের অর্ধেক হলুদাভ থেকে তীব্রভাবে চিত্রিত। লেজ প্যাডেল আকৃতির এবং গাঢ় দাগ বা বার সহ হলুদ। দেহের নীচের এই হলুদ রংয়ের জন্যই একে ইয়েলো বেলিড নামে ডাকা হয়। দৈহিক আঁশ ছোট, মসৃণ এবং ষড়ভুজ আকারের, মাথার আঁশ বড় এবং নিয়মিত। বড় চোখের একটি নীলচে-কালো আইরিস আছে। উপকূল এবং প্রবাল প্রাচীর থেকে দূরে খোলা সমুদ্র এদের আবাসস্থল, ফলে উপকূলের লোকজন সচারাচর এদের দেখতে পান না বলে অনেকেই এই সাপটিকে বিরল প্রজাতির মনে করেন। সাগরের প্রাকৃতিক পরিবেশে এদের প্রধান খাদ্য মাছ। সাগরের উপরের স্তরে এরা চুপচাপ শিকারের জন্য অপেক্ষা করে এবং নীচ থেকে কোন মাছ কাছাকাছি আসলেই এরা হঠাৎ আক্রমন করে থাকে। হলুদ-পেটযুক্ত সামুদ্রিক সাপ দেহের পার্শ্বীয় ভারসাম্য দ্বারা সাঁতার কাটে এবং সামনে ও পিছনে উভয় দিকে যেতে পারে। ডাইভিং, পালানোর এবং খাওয়ানোর সময় তারা প্রতি সেকেন্ডে ১ মিটার পর্যন্ত গতিতে ছুটতে পারে। দ্রুত সাঁতার কাটার সময় তারা কখনও কখনও তাদের মাথা জল থেকে বের করে দেয়। স্থলভাগে এই সাপ সোজা থাকতে পারে না এবং কার্যকরভাবে চলতে পারে না। এই সাপটি সারা বছরই প্রজনন করতে পারে। স্ত্রী ইয়েলো বেলিড একসাথে ২ থেকে ৬টি বাচ্চার জন্ম দেয়, যার মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ২৫০ মিমি। অল্পবয়সীরা যথেষ্ট চর্বিযুক্ত দেহ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে এবং জন্মের প্রথম দিন থেকেই শিকার করতে পারে।


মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর জনবাণীকে আরও বলেন, উপকূল থেকে দূরে বসবাস করে বিধায় শুধুমাত্র অসুস্থ বা আহত হয়ে উপকূলে ভেসে এলেই কেবল হলুদ পেটযুক্ত সামুদ্রিক সাপের মুখোমুখি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। উপকূলে ভেসে আসা সাপটি সতর্কতার সাথে নাড়াচাড়া না করলে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করতে পারে এবং  কামড়ের সম্ভাবনা থাকে। এদের বিষদাঁত বা ফ্যাংগুলি বেশ ছোট (১.৫ মিমি) এবং খুব সামান্য পরিমানে বিষ ঢালতে পারে। সামুদ্রিক সাপের মধ্যে হলুদ-পেটের সামুদ্রিক সাপটি সবচেয়ে বেশি ভয়ঙ্কর।এই সাপটি অত্যন্ত বিষধর এবং এতে শক্তিশালী নিউরোটক্সিন এবং মায়োটক্সিন রয়েছে। এনভেনোমেশন বা বিষক্রিয়ার লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে পেশী ব্যথা এবং শক্ত হয়ে যাওয়া, চোখের পাতা ঝুলে যাওয়া, তন্দ্রা এবং বমি হওয়া ইত্যাদি। এ সাপের একটি গুরুতর কামড় সম্পূর্ণ পক্ষাঘাত এবং মৃত্যুর কারণ হতে পারে। হলুদ পেটের সামুদ্রিক সাপে কামড়ানোর সন্দেহ হলে এমনকি কামড়টি তুচ্ছ মনে হলেও যে কারোরই অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। উল্লখ্য যে সামুদ্রিক সাপের কামড় প্রাথমিকভাবে ব্যথাহীন এবং ফোলা বা বিবর্ণতার কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। তবে এই সাপটির কামড়ে প্রাণহানির ঘটনা বিশ্বব্যাপি খুবই বিরল।


আরও পড়ুন: সৈকতের নিকটবর্তী ৫ ভবন নিমার্ণ বন্ধ করেছে প্রশাসন 


সৈকতের লাইফ গার্ড কর্মী জয়নাল আবেদীন জনবাণীকে বলেন, গেলো এক সপ্তাহে কক্সবাজার সৈকতে ভেসে আসে ৩টি অসুস্থ সামুদ্রিক সাপ। প্রতিটি সামুদ্রিক সাপই ইয়েলো বেলিড। বুধবার সৈকতের লাবনী পয়েন্টে একটি এসেছিল তা উদ্ধার করে ফের সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে। আর সোমবার ১টি সাপকে পর্যটকরা পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। আর এখন সাপটি উদ্ধার করে অবমুক্ত করেছি। কারণ প্রতি বর্ষা মৌসুমে এই সাপের দেখা মিলছে। যা জানতে পেরেছি খুবই বিষাক্ত। তাই এব্যাপারে পর্যটকদেরও সতর্ক করা হয়।


কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, সৈকতের পর্যটকদের বিভিন্ন সতর্কতা দেয়া হয়। একদিকে বিচ কর্মীরা যেমন মাইকিং করে, ঠিক তেমনি হোটেল ও সৈকতের প্রবেশদ্বারগুলোতে ডিজিটাল ডিসপ্লেতে নানা নির্দেশনাও দেয়া হয়। যেহেতু সৈকতে বর্ষা মৌসুমে সামুদ্রিক সাপের দেখা মিলছে তাই এব্যাপারে নির্দেশনার পাশাপাশি মাইর্কিংও করা হবে। যাতে পর্যটকরা সতর্ক হয়।


এমএল/