কালো টাকায় ডিপিডিসির হাদীর সম্পদের পাহাড়


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন, ২৭শে জুন ২০২৪


কালো টাকায় ডিপিডিসির হাদীর সম্পদের পাহাড়
ছবি: জনবাণী

দুর্নীতি, অনিয়ম আর ক্ষমতার অপব্যবহারের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের জিটুজি প্রজেক্টের নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিবুল হাদী। অনিয়মকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া হাদীর আঙুলে ইশারায় চলেন বিদেশি ঠিকাদাররাও। সিন্ডিকেট করে এক আধিপত্য দেখিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন ডিপিডিসির ‘মোস্ট করাপটেড’ হিসেবে পরিচিত হাদী। কিন্তু ভোল পাল্টে ক্ষমতার ছায়াতলে থাকায় কোনো কিছুই পরোয়া করে না। টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না এই দাপুটে কর্মকর্তা।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজিবুল হাদী দুর্নীতির টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। ডিপিডিসি’র বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণও শক্তিশালী করণ প্রকল্পের লোপাটের নায়ক এই কর্মকর্তা। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ দেশের বাইরে পাচার করেছেন কোটি কোটি টাকা। ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবিরে রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। তিনি যশোরের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। বিএনপির এক নেতার সুপারিশে ডিপিডিসিতে চাকরি পান। ওয়ান ইলেভেনের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতেই বোল পাল্টে ফেলেন তিনি। যশোরে সরকার দলীয় এক এমপির ভাগ্নে পরিচয় দিয়ে রাম রাজত্ব কায়েম করে ডিপিডিসিতে। দেশের স্বার্থ ক্ষুন্ন করে অর্থের লোভে চীনাদের হয়ে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে।


তিনি চীনের বেসরকারী ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান তেবিয়ান ইলেকট্রিক এ্যাপাবাটাস কোম্পানী লিমিটেডের (টিবিইএ) সঙ্গে মিলে পছন্দের অযোগ্য ঠিকাদারকে কাজ ভাগাভাগি করেন। তাদের মধ্যে প্রথমে মধ্যস্থতা করেন পাপ্পু নামের এক ঠিকাদার। অথচ সাধারণ ও অভিজ্ঞ ঠিকাদাররা বছরের পর পর বছর ঘুরেও কাজ পায়নি। তার সহযোগী জনৈক পারভেজ একটি সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। তাদের সঙ্গে যোগ দেন মি. শাও ও মি. লি নামে আরও দুই জন। হাদী সিন্ডিকেট করে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ তাদের পছন্দ ও অযোগ্য ঠিকাদারদের দিয়ে দিচ্ছেন। এক্ষেত্রে তারা সিন্ডিকেট করে ৫/৬ টি কোম্পানী দরপত্র ফেলছে। অথচ তারা সবাই একই সিন্ডিকেট।


সরকার দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব থাকার কারণে রাজিবুল হাদী সকল কর্মকর্তাকে জিম্মি করে রাখেন বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে। কমিশনের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে পারভেজের সঙ্গে দাপুরে এই কর্মকর্তার বিরোধ দেখা দিয়েছে বলে জানা গেছে। ডিপিডিসির কর্মকর্তা রাজিবুল হাদীর নামে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একাধিক প্লট, রূপায়নে ফ্ল্যাট ও যমুনা ফিউচার পার্কে একাধিক দোকান রয়েছে। ঢাকা শহরে বিভিন্ন জায়গায় নামে বেনামে ফ্ল্যাট রয়েছে। তিনি ডিপিডিসির কর্মকর্তা হয়েও টিবিইএ'র প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তাদের নামে ও নিজের বেনামে ২টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে এমা কনস্ট্রাকশন ও বেসিক। এসব কোম্পানী অন্য নামে থাকলেও মূল মালিক হচ্ছেন দাপুরে কর্মকর্তা হাদী ও ডিপিডিসির মশিউর। যশোরের গ্রামের বাড়িতে হাদী  ও স্ত্রীর নামে বিপুল পরিমান স্থাবর অবস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। শাহ নিজাম নামে একজন আওয়ামী লীগ নেতার নাম ব্যবহার করে  বিভিন্নজনকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। প্লানিং শাখায় দায়িত্ব পালনকালে ঘুষ দুর্নীতি হুমকি ও অসদাচরণের জন্য ওএসডি করা হয়েছিলো। হাদী নিজ সার্থে জি টু জি প্রকল্পের সকল গোপন নথী অর্থের বিনিময় চাইনিজ ও দেশীয় ঠিকাদারদের সঙ্গে পাচার করে দেন। একারনে ডিপিডিসির সাবেক এমডি বিকাশ দেওয়ান ও সাবেক প্রকল্প পরিচালক মাহাবুব রহমান কয়েক দফায় মৌখিকভাবে সতর্ক করেন।


এছাড়াও তিনি চাইনিজ বেসরকারি কোম্পানীগুলোকে বিভিন্ন কাজের নকশা, ড্রইং ডিজাইন করে দেন। ডিজাইনে নয়ছয় করে প্রকল্পের শতশত কোটি টাকার ক্ষতিসাধণ করেন। সিনম নামে একটি চাইনিজ কোম্পানীকে দুই শত কোটি টাকার ঠিকাদারী কাজ পেতে সহায়তা করেন। যার বিনিময়ে তিনি সেখান থেকে ৫ ভাগ কমিশন নেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যার বেশিরভাগ অর্থ নগদ ডলার ও ইউরোতে পরিশোধ করা হয়েছে। তিনি অধীনস্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনেকের চাকরি খাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। কেনাকাটাসহ দৈনন্দিন বিভিন্ন কাজে দুর্নীতি ও প্রতারণার আশ্রয় নেন এই কর্মকর্তা। বিপুল পরিমান অর্থ আমেরিকা ও দুবাইতে পাচার করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও তিনি মতিঝিলে জনৈক হুন্ডি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে তিনি এসব অর্থ পাচার করেন। এবিষয়ে বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাধ্যমে তদন্ত করছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেন।


এ ব্যাপারে ডিপিডিসির জিটুজি প্রজেক্টের নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিবুল হাদী সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিপ করেননি। এমনকি ক্ষুদ্রে বার্তা পাঠিয়ে উত্তর পাওয়া যায়নি।


এ ব্যাপারে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যাদের ক্ষমতার অপব্যবহারের চিন্তা থাকে তখনই দুর্নীতি হয়। আর দুর্নীতিকে রোধ করতে নিজেদের মনোভাবকে পরিবর্তন করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। না হলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না।


জেবি/এসবি