সংবাদ প্রকাশের জের

সাংবাদিকের হাড্ডি-মাংস এক করে ফেলতে চান হাদী


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ১২:৫৪ অপরাহ্ন, ২৯শে জুন ২০২৪


সাংবাদিকের হাড্ডি-মাংস এক করে ফেলতে চান হাদী
ছবি: জনবাণী

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের জিটুজি প্রজেক্টের ডন হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠা দুর্নীতিবাজ নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিবুল হাদী’র বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় লোকজন নিয়ে মাঠে নেমেছেন। ভয়-ভীতি আর সংসদ সদস্যের আত্মীয় পরিচয় হিসেবে পরোক্ষভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন তিনি। এ কাজে দুজন সাংবাদিকে ভাড়া করেছেন তিনি, যাদের দিয়ে তার মিশন বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছেন। সংসদ সদস্যর জামাইয়ের দোহাই দিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিবুল হাদী তার কর্মযজ্ঞে ত্রাস সৃষ্টি করেছেন এরই মধ্যে। তার নির্দেশনার বাইরে গেলেই বিপদের মধ্যে পড়তে হচ্ছে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের। বড় কর্মতারা চলে ইশারায়। মিডিয়ার সামনে মুখ খুলতে চান না ডিপিডিসির কর্তারা। প্রশ্ন উঠছে, হাদীর খুটির জোর কোথায়?


ডিপিডিসি’র বেশ কয়েকটি সূত্র বলছে, সংবাদ প্রকাশের পরই হাদীর ভাড়া করা সাংবাদিকরা মাঠে নেমেছেন। তারা ইতোমধ্যে প্রকাশিত সংবাদ নামাতে নানা মাধ্যমে চাপ দিচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) সকালে ডিপিডিসির এক কর্মকর্তার রুমে বৈঠক করেন হাদীসহ আরো দুইজন সাংবাদিক। সেই সময় দায়িত্ব নেন ওই দুই সাংবাদিক। যাতে করে হাদীর বিরুদ্ধে আর কেউ সংবাদ প্রকাশ না করেন। ওই বৈঠকে দম্ভ করে হাদী বলেন, ‘চাইলে আমি ওই সাংবাদিকে হাড্ডি-মাংস এক করে ফেলতে পারি। আমার পুরানো রূপ কেউ জানেন না। আমি নারায়নগঞ্জ প্রভাবশালী এক সংসদ সদস্যর ভাগনী জামাই। তাদের দিয়ে আমি ব্যবস্থা নিতে পারি। কিন্তু কিছু বলছি না।’


এ ব্যাপারে ওই নারায়গঞ্জের প্রবাভশালী সংসদ সদস্য ওসমান পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা পরিস্কার করে বলে দেন, এই নামে আমার কোনো ভাগনী জামাই নাই। তাই আমাদের নাম ব্যবহার করার সুযোগ নাই।


জানা গেছে, হাদী ঘুষ ও দুর্নীতির টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তিনি এক সময় যশোরের ছাত্রশিবিরের ক্যাডার ছিলেন। ভোল পাল্টে ক্ষমতার ছায়াতলে থাকায় কোনো কিছুই পরোয়া করে না এই দাপুটে কর্মকর্তা। টাকা ছাড়া কিছুই বোঝেন না এই মাফিয়া ডন। তিনি একজন নির্বাহী প্রকৌশলী হয়ে কীভাবে তিনি এত সম্পদের মালিক হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজিবুল হাদী দুর্নীতির টাকায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ দেশের বাইরে পাচার করেছেন কোটি কোটি টাকা। যশোরে সরকার দলীয় এক এমপির ভাগ্নে পরিচয় দিয়ে রাম রাজত্ব কায়েম করে ডিপিডিসিতে। সরকার দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব থাকার কারণে রাজিবুল হাদী সকল কর্মকর্তাকে জিম্মি করে রাখেন বলে অনুসন্ধানে উঠে আসে।


আরও পড়ুন: কালো টাকায় ডিপিডিসির হাদীর সম্পদের পাহাড়


ডিপিডিসির কর্মকর্তা রাজিবুল হাদীর নামে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একাধিক প্লট, রূপায়নে ফ্ল্যাট ও যমুনা ফিউচার পার্কে একাধিক দোকান রয়েছে। ঢাকা শহরে বিভিন্ন জায়গায় নামে বেনামে ফ্ল্যাট রয়েছে। যশোরের গ্রামের বাড়িতে হাদী  ও স্ত্রীর নামে বিপুল পরিমান স্থাবর অবস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। শাহ নিজাম নামে একজন আওয়ামী লীগ নেতার নাম ব্যবহার করে বিভিন্নজনকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, তার বিরুদ্ধে লিখে কিছু করতে পারবেন না। তিনি দীর্ঘদিন ধরে জিটুজি প্রজেক্টে দায়িত্ব পালন করছেন। ডিপিডিসির কর্তাদের সাহসেই সে আজ দুর্নীতিবাজ। তিনি চাকরীর শুরুতে এমন অবস্থা ছিলো না। তিনি এখন অনেক ক্ষমতাধর। তার কথায় অনেকের চাকরিতে ঝামেলা হয়েছে। তাই তাকে নিয়ে কেউ কথা বলে না।


সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, হাদীর এখন অনেক টাকা। আছে জমি, ফ্ল্যাট। চলাফেরা আলিশান জীবন-যাপন। তিনি প্রথম চাকরিতে যোগদান করেছেন। তখন চলাফেরা ছিলো খুব সাদামাঠা। এখন তার ক্ষমতা ও টাকার দম্ভ। 


এ ব্যাপারে জিটুজি প্রজেক্টের নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিবুল হাদীকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ক্ষুদ্রে বার্তা পাঠিয়ে  উত্তর পাওয়া যায়নি।


জেবি/এসবি