কোটা সংস্কারের দাবি

মোড়ে মোড়ে বিক্ষোভ, আজও চলবে ‘বাংলা ব্লকেড’


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১:২৩ পূর্বাহ্ন, ৮ই জুলাই ২০২৪


মোড়ে মোড়ে বিক্ষোভ, আজও চলবে ‘বাংলা ব্লকেড’
ছবি: সংগৃহীত

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা চার দফা থেকে সরে এখন এক দফায় নেমে এসেছেন। তারা দাবি করেছেন, সব গ্রেডে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করতে হবে। এ দাবিতে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা আজ সোমবারও ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন।


এর আগে রবিবার বিকেলে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নামেন আন্দোলনকারীরা। রাজধানীর শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত, বাংলামটর, ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা রাজধানীর আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সড়কেও বিক্ষোভ করেন। 


আরও পড়ুন: এবার এক দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা


বিভিন্ন মোড়ে অবরোধের কারণে যানজটে এক রকম স্থবির হয়ে পড়ে পুরো ঢাকা। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস হওয়ায় নগর ভোগান্তি মাত্রা ছাড়ায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানবাহনে বসে থাকতে দেখা গেছে অফিস ছুটির পর ঘরমুখো নগরবাসীকে। বাধ্য হয়ে অনেকে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দেন।


এদিকে কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে ৪ ঘণ্টা ধরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বরিশাল-পটুয়াখালী সড়ক অবরোধ করেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। ময়মনসিংহে শিক্ষার্থীরা রেলপথ অবরোধ করেন। সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক অবরোধ করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।


এদিকে রাজধানীতে কর্মসূচি চলাকালে রবিবার সন্ধ্যার দিকে সরকারের তরফ থেকে আলোচনার জন্য কোটা আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র হাসনাত আবদুল্লাহ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের নাহিদ ইসলাম ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সারজিস আলমকে শাহবাগ থানায় ডেকে নেওয়া হয়। প্রায় ৩০ মিনিট আলোচনা শেষে তারা সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার কিছু সময় পরে অবরোধস্থলে ফিরে আসেন।


হাসনাত আবদুল্লাহ জানান, প্রধানমন্ত্রীর একদল প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করতে তাদের ডেকে নেওয়া হয়। আলোচনার বিষয়ে আর কিছু বিস্তারিত জানাননি তিনি।


তবে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে নাহিদ ইসলাম বলেন, কোনো আলাপ বা গোলটেবিল হবে না। আমরা অনেক আলাপ করেছি, আলাপের দিন শেষ হয়ে গেছে। বিনিময়ে আমরা পেয়েছি প্রহসন। এবার আর প্রহসন মেনে নেওয়া হবে না। আমাদের বলা হচ্ছে, এটা সাব-জুডিশিয়ারি ম্যাটার। নির্বাহী বিভাগের কাছে জানতে চাই, কেন পরিপত্র বাতিল হলো, কেন তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণিতে কোটা বাতিল হয়নি। সরকারের কাছে নতুন পরিপত্র জারির সুযোগ রয়েছে। সব গ্রেডে কোটার সংস্কার করতে হবে।


এদিকে আজ সোমবারও সারাদেশে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। পাশাপাশি অনির্দিষ্টকাল ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ছাত্র ধর্মঘট অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। গতকাল রাত ৮টার দিকে নতুন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।


সরকারকে উদ্দেশ করে নাহিদ বলেন, ‘আমাদের দাবি মেনে নেন। না হয় ১০০ শতাংশ কোটা দিয়ে দেন। ঘোষণা করে দেন– এটা কোটাধারীদের দেশ।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আজ কারওয়ান বাজার পর্যন্ত গিয়েছি, কালকে ফার্মগেট পেরিয়ে যাবে আমাদের ব্লকেড। সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হয়ে শাহবাগে ব্লকেড কর্মসূচি পালন করব। সারাদেশে সব স্থানে শিক্ষার্থীরা ব্লকেড করবেন।’


নাহিদ আরও বলেন, ‘আমরা সংবিধান স্বীকৃত বিষয়ে কথা বলছি। সংবিধানে সমতার কথা বলা আছে।’ কোটা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘আমাদের আদালত দেখিয়ে লাভ নেই। আমরা সংবিধান স্বীকৃত বিষয়ে আন্দোলন করছি।’


এখন দাবি এক দফা 

কোটা আন্দোলনের চার দফা দাবি থেকে সরে এসে এক দফা ঘোষণা করেছেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে এনে সংসদে আইন পাস করতে হবে।


তিনি বলেন, আমরা নাতিপুতি-পৌষ্য কোটাকে অযৌক্তিক কোটা মনে করছি। দাবি মেনে নিলে আজকেই আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যাব।


কোটা নিয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী 

এদিকে কোটা আন্দোলনের সপ্তম দিন রবিবারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে নিষ্পত্তি করা উচিত। তিনি বলেন, ‘হাইকোর্টের রায়, এটার বিরুদ্ধে এভাবে আন্দোলন করা, এটা তো সাবজুডিস। কারণ, আমরা সরকারে থেকে এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারি না। কারণ, হাইকোর্ট রায় দিলে সেটা হাইকোর্ট থেকেই আবার আসতে হবে।’ গতকাল সকালে যুব মহিলা লীগের ২২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নেতারা গণভবনে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে এলে তিনি এ কথা বলেন। 


অন্যদিকে রবিবার এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, কোটাবিষয়ক সিদ্ধান্ত আদালতের, আমাদের কিছু করার নেই। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আলাদা এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, কোটা আন্দোলনের পেছনে কোনো ষড়যন্ত্র আছে কিনা, খতিয়ে দেখা উচিত।


আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে রাজধানীজুড়ে 

রবিবার পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের সামনে একত্রিত হন। পরে তারা মিছিল নিয়ে মল চত্বর, ভিসি চত্বর ও রাজু ভাস্কর্য হয়ে শাহবাগ মোড়ে যান। পরে শিক্ষার্থীরা ৩টা ৫০ মিনিটে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড় অবরোধ করেন। পরে এক দল ফার্মগেট, আরেক দল মোতালেব প্লাজা পর্যন্ত যান। 


আরও পড়ুন: কোটা আন্দোলন নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে পুলিশ


বেলা ১টা ৪০ মিনিটে নীলক্ষেত থেকে মিছিল নিয়ে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগারগাঁও মোড়ে অবস্থান নেন। ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীরা বিকেল ৩টার দিকে নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেন। এতে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 


সেখানে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী নাজমুল হাসান বলেন, এটি আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি। আমাদের দাবি একটাই, কোটা বাতিল। তিনি বলেন, সংবিধানে সমতার কথা বলা আছে। কিন্তু কোটার মাধ্যমে বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। ছাত্রসমাজের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একটি বিশেষ শ্রেণিকে যে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে, তা বাতিল করতে হবে। অন্যথায় সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া এ আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।


জেবি/এজে