বিউবো’র মিটারেই ভূত


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ০৫:৪৫ অপরাহ্ন, ১১ই জুলাই ২০২৪


বিউবো’র মিটারেই ভূত
ছবি: জনবাণী

দরপত্রে অকৃতকার্য একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে বিপুল পরিমান ঘুষের বিনিময়ে একটি কোম্পানিকে কাজ দিয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো)। নিম্নমানের এসব মিটারে একদিকে সরকার যেমন রাজস্ব হারাবে, তেমনি অরক্ষিত মিটার সহজে খুলে সুযোগ থাকবে মিটার কারসাজি করে বিদ্যুৎ বিল পরিবর্তনের। সবচেয়ে অ্যালার্মি বিষয় হচ্ছে, মিটারের গুরুতর বেশকিছু হার্ডওয়্যার সংক্রান্ত সমস্যা থাকার পরেও রিপোর্ট পরিবর্তন করে সেই কোম্পানিকে কারিগরী মূল্যায়নে উত্তীর্ণ করানো হয়। দৈনিক জনবাণীর অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমন তথ্য।


অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড স্মার্ট প্রিপেইড মিটার ক্রয়ের জন্য ৫টি আন্তর্জাতিক দরপত্র ক্রয়সংক্রান্ত দরপত্রে পণ্যের মান নিশ্চিত করতে দেশের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী দরপত্রগুলো দুই ধাপে করেছিলো যাতে কেবলমাত্র কারিগরিভাবে উত্তীর্ণ হওয়া কোম্পানিগুলোরই মূল্য খোলা হয়। স্মার্ট প্রিপেইড মিটারের মতো কারিগরী পণ্য কারিগরি যোগ্যতা না থাকা কারিগরি মূল্যায়নে প্রাথমিকভাবে অকৃতকার্য হওয়া অবৈধভাবে একটি কোম্পানিকে পাশ করিয়ে দিয়ে তাদের দর খুলে তাদের কাজ দেওয়ার বিষয়টি আশঙ্কার। সূত্র জানায়, ৫০ হাজার সিঙ্গেল ফেজ ৪টি এবং ১০ হাজার থ্রি ফেজ ১টি-মোট ২ লাখ ১০ হাজার স্মার্ট মিটার সরবরাহের এই দরপত্রগুলোতে সানসিং নিংবো স্মার্ট ইলেকট্রিক কোম্পানি লিমিটেড নামক একটি কোম্পানির মিটারের গুরুতর বেশকিছু হার্ডওয়্যার সংক্রান্ত সমস্যা থাকার পরেও রিপোর্ট পরিবর্তন করে এই কোম্পানিকে কারিগরী মূল্যায়নে উত্তীর্ণ করানো হয় মূল্য খোলার জন্য। তাদের অফার করা যন্ত্রাংশ কমদামী ও নকল এবং তাই তাদের মূল্য কম হবে তা বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের কতিপয় অফিসাররা জানতো। তাই তাদের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে তাদেরকে চুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। 


সূত্র আরো জানায়, হার্ডওয়্যার সংক্রান্ত দরপত্রের সঙ্গে এইসব বিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও এই কোম্পানিকে কারিগরিভাবে রেসপন্সিভ করা হয় এর দর খোলার জন্য চিঠি দেয় বিউবো। অনিয়মের শীর্ষে গিয়ে গত ২৩ মে ২০২৪ সানসিং স্মার্ট ইলেক্ট্রিক কোম্পানি লিমিটেডকে একটি টেন্ডারের নোটিফিকেশন অফ এওয়ার্ড দেয় বিউবো। এদিকে  এই ঘটনা নিয়ে গত ২৭ জুন তদন্ত কমিটি করেন বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে। যার স্বারক নম্বর-২৭,০০,০০০০,০৭৩,৯৯.০১৮.১৭১৪৪। চিঠিতে বলা হয় বিষয়গুলো সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে এ বিভাগে প্রেরণের জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু ১৩ দিন পার হলেও তদন্ত কমিটির রিপোর্ট যায়নি মন্ত্রনালয়ে।  


দরপত্রের শর্ত লংঘন মিটার সুরক্ষিত নয়: বিউবোর দরপত্রে চাহিদা ছিল মিটার অবশ্যই সম্পূর্ণভাবে আলট্রাসনিক ওয়েলডেড হতে হবে অবৈধভাবে মিটার খোলা রোধ করার জন্য। কিন্তু ডেমোন্সট্রেশনে পাওয়া যায় যে নিংবো নামের মিটারের সিলিং পর্যাপ্ত সুরুক্ষিত না, মিটার না ভেঙে সহজেই খোলা যায় এবং বাইরে থেকে খোলা বা কাটার কোন দাগ দেখা যায় না। আল্ট্রাসনিক ওয়েল্ডিং না থাকার কারণে মিটার খুলে ভিতরে কারসাজি করে অসাধু গ্রাহক বিদ্যুৎ বিল এড়িয়ে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে। মিটারকে বলা হয়ে থাকে সরকারের ক্যাশবাক্স। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড তথা সরকারের রাজস্ব আয় ব্যহত হবে এধরনের নিম্নমানের মিটার গ্রাহক আঙ্গিনায় বসালে। 


গত ১৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের কাছে দেশীয় পণ্য প্রস্তুতকারক এসোসিয়েশনের সভাপতি শেখ রাসেল হাসান লিখিত ভাবে নানা অনিয়ম তুলে ধরা হয়েছে।  এ ছাড়া বিদ্যুৎ প্রতি মন্ত্রী ও বিদ্যুৎ সচিবের কাছে অভিযোগ তুলে ধরা হয়। 


অভিযোগে বলা হয়, যন্ত্রাংশে প্রতারণা-নিম্মমানের ননব্র্যান্ড রিলেঃ মিটারের গুরুত্বপূর্ণ ও দামী যন্ত্রাংশ রিলের ব্যপারে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে এই কোম্পানি। বিউবো এর দরপত্রের চাহিদা ছিল রিলে হতে হবে বিউবোর চাহিদা মোতাবেক খ্যাতনামা কিছু ব্র্যান্ডের। কিন্তু তাদের স্যাম্পল মিটারে রিলে প্রস্তুতকারকের নাম, উৎপত্তির দেশ, ব্র্যান্ড এবং নির্দিষ্টতা রিলেতে খোদাই করা বা সুস্পষ্ট চিহ্নিত করা ছিলো না যা নিয়ম বহির্ভূত।

প্রতারণার উদ্দেশ্যে নিংবো নামক এই কোম্পানী আলগা আলাদা একটি খাপ বানিয়েছে তাতে কেজি ব্র্যান্ডের নাম প্রিন্ট করা ছিলো মাত্র। রিলে ব্র্যান্ডের নাম রিলেতে এনগ্রেভড চাওয়া হলেও বিউবো ডেমোন্সট্রেশনের নির্ধারিত দিনের পরে আবারো মিটার খুলে অল্প কিছুতে কেজি রিলে পাওয়া গেছে বলে দাবি করে। এমনকি তাদের রিলে আদৌ কেজি কোম্পানির কিনা তা কেজি কোম্পানি থেকে অথেনটিকেশন ও করেনি কর্তৃপক্ষ।

প্রাথমিক মূল্যায়নে পাওয়া: বিদেশী এই কোম্পানি তাদের দরে দাবি করে তাদের রিলে উৎপাদন হবে আমেরিকা। পরবর্তীতে বিউবো সুযোগ দিলে তারা পরিষ্কার করে রিলে প্রস্তুত হবে চীনে। তাদের অফার করা রিলের কাগজ সঠিক কিনা তা প্রস্তুতকারকের কাছ থেকে যাচাই করার প্রয়োজণীয়তা অনুভব করেনি ক্রেতা সংস্থা।


টাইপ টেস্ট রিপোর্টে গোজামিল: দরপত্রে ডাবল বা ইন্টিগ্রেটেড রিলে চাওয়া হলেও জানা গেছে নিংবোর মিটারের টাইপ টেস্ট রিপোর্ট ডাবল বা ইন্টিগ্রেটেড রিলের নয় বরং সিঙ্গেল রিলের। দরপত্র বাতিলের বেশ কিছু আবশ্যকীয় শর্ত ভংগ করেছে এই কোম্পানী।


টেকনিকাল ইভালুয়েশনে পাওয়া হার্ডওয়্যারে বড় বিচ্যুতি: মিটারের উপরের কাভার অবৈধভাবে মিটার খোলা রোধে যথেষ্ট কার্যকর নয়। মিটার সহজেই খুলে ফেলা যায়। ল্যাচিং রিলে প্রস্তুতকারকের নাম, কান্ট্রি অব অরিজিন, ব্র্যান্ড, স্পেসিফিকেশন এনগ্রেভড বা মিটারে মার্কড নয়।


ডেমোন্সট্রেশন চেকলিস্ট রিপোর্ট পরিবর্তন: বিষয়গুলো তাদের ডেমোন্সট্রেশন চেকলিস্ট রিপোর্টে উল্লেখ ছিলো। কিন্তু বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মহাব্যবস্থাপক কমার্শিয়ালের নির্দেশে তার লোকজন এই রিপোর্ট পরিবর্তন করে। দরপত্র মূল্যায়নের গোপনীয়তা রক্ষা না করে ও মূল্যায়নের স্বচ্ছতা নষ্ট করে এই কোম্পানির রিপোর্ট পরিবর্তন করে অবৈধভাবে তাদের উত্তীর্ণ করে বিউবো।


অস্বাভাবিক বেশী সময় ধরে মূল্যায়ন: দরপত্রগুলো আগ্রহী সকল কোম্পানি ২০২৩ সালের জুন মাসে জমা দিলেও দরপত্র মূল্যায়নে অস্বাভাবিক বেশি সময় নেয় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। এর কারণ অনুসন্ধান করতে বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দর উন্মুক্ত করার জন্য বিউবো চিঠি দেয় সানসিং নিংবো স্মার্ট ইলেক্ট্রিক কোম্পানিকে। বাংলাদেশের পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও বিধিমালায় বলা আছে কোনো দরপত্র মূল্যায়নের সময়সীমা বৃদ্ধি করতে হলে প্রথমবার সংস্থা অনুমোদন করলেও পরবর্তীতে আবার মেয়াদ বৃদ্ধি করলে মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন নিতে হবে।


মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন নেই: পাঁচটি দরপত্র ছিলো যথাক্রমে ৫০ হাজার সিঙ্গেল ফেজ ক্রয়ের জন্য ৪ টি দরপত্র এবং ১০ হাজার থ্রি ফেজ মিটার ক্রয়ের জন্য ১টি দরপত্র। এই ৫টি টেন্ডারের জন্য মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন না নিয়ে প্রতিটি টেন্ডার আলাদা আলাদা প্যাকেজ হিসেবে দেখিয়ে বোর্ডের মাধ্যমে পাশ করিয়ে নেয়া হচ্ছে। বিউবো বোর্ডের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রেখে আলাদা আলাদা প্যাকেজের অনুমোদন নিয়ে কাজ দেয়া হচ্ছে এই কোম্পানিকে। বিউবো বোর্ডের ক্রয়ক্ষমতা ৩০ কোটি টাকা। আলাদা আলাদা করে প্যাকেজের দাম বিউবোর ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রেখে অনুমোদন নিয়ে কাজ দেয়া হচ্ছে। বোর্ড সদস্যরাও এই কাজগুলোকে বড় প্রকল্প হিসেবে মনে না করে ছোট স্বল্পসংখ্যক মিটার ক্রয়কাজ হিসেবে সহজেই অনুমোদন করে দিচ্ছে।


রিজেকশন ক্লজ অমান্য করার কারণে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন অনুযায়ী তাদের দরপত্র বাতিল করা উচিত ছিলো ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক গত ২৩, ২৪, ২৫ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে কারিগরী মূল্যায়নে উত্তীর্ণ ৪টি কোম্পানির দর উন্মুক্ত করা হয়। তাতে এই কোম্পানির দেয়া দাম ৫টি টেন্ডারেই সর্বনিম্ম মূল্য পাওয়া যায়। বিউবোর গত ২৪  এপ্রিল চিঠির সূত্রে জানা যায় বিউবো চিঠি দিয়ে তাদের এই কম মূল্যের কারণ জানতে চায়। নিম্মমানের হারমাটিকাল সিলিং এবং কমদামী নন-ব্র্যান্ড রিলে তারা ব্যবহার করেছে তাদের পণ্য কমদামে বানানোর জন্য।


অতীতের পারফরম্যান্স রেকর্ড: বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড অতীতে একবার এই কোম্পানির থেকে ১৫ হাজার মিটার কিনেছিলো। ১৫ হাজার মিটারের প্রতিটাতেই সমস্যা ছিলো এবং সমস্যা ঠিক করে পুনরায় ফার্মওয়ার পরিবর্তন করে পুনরায় ইন্সপেকশন করে প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রচুর সময় নষ্ট হয়। মিটারগুলো যেসব জায়গায় লাগানো হয় সেসব জায়গা থেকে একাধিক অভিযোগ আসে বিউবো বিক্রয় এবং বিতরণ কেন্দ্রগুলো  থেকে। সমস্যায় অতিষ্ট হয়ে প্রান্তীক বিউবোর বিক্রয় এবং বিতরণ কেন্দ্রগুলো চায় না এই কোম্পানির মিটার তাদের এলাকায় লাগিয়ে গ্রাহকের ভোগান্তি তৈরি করতে। তারা ইতোমধ্যে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে এই কোম্পানির মিটার তাদের এলাকায় না বসানোর জন্য। 


থাকছে ফ্রিতে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সুযোগ: আল্ট্রাসনিক ওয়েল্ডিং না থাকার কারণে মিটার খুলে ভিতরে অসাধু গ্রাহক বিদ্যুৎ বিল এড়িয়ে ফ্রিতে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে। রিলের উপর মিটারের নির্ভুলভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার আর খরচের হিসাব করা নির্ভর করে। কমদামী এসব নিম্নমানের রিলের মিটারে ব্যবহার করা হলে সঠিক বিল করা যাবে না এবং কোনো গ্রাহক বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাকে ফাঁকি দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে, অন্যদিকে কোনো কোনো গ্রাহক নিজ ব্যবহারের অতিরিক্ত বিল দিতে বাধ্য হবে। রাজস্ব আয় হারাবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড। 


ত্রুটি-বিচ্যুতি ধামাচাপা দেয়ার পিছনের দুর্নীতি: কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ত্রুটিপূর্ণ এসব মিটার কিনে দেশের মানুষের হয়রানি বয়ে নিয়ে আসতে চাচ্ছেন। নিংবো ও তাদের পিছনে থাকা একটি দেশীয় কোম্পানী ও বিউবো অফিসারদের সঙ্গে ঘুষের টাকা ভাগ-বাটোয়ারার চুক্তি হয় দুই ধাপে। চুক্তি হয় ঘুষের এক অংশ দেওয়া হবে পাশ করালে। আরেক অংশ দেওয়া হবে কাজ পেলে। উত্তীর্ণ হওয়ার পরপরই মফিজুর রহমানসহ কয়েকজনকে মোটা অংকের নগদ ঘুষ দেয় কোম্পানিটি।


প্রভাবিত করা হয়েছে মূল্যায়ণ: জানা যায়, বিউবো চেয়ারম্যান মো: মাহবুবুর রহমানের চাকরীর মেয়াদ দুই মাসের মধ্যে শেষ হচ্ছে। তার চাকরীর মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য সে বড় কর্তাদের খুশি করতে এই টেন্ডারগুলোর দূর্নীতিতে পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার নির্দেশেই দরপত্র মূল্যায়ন সাব কমিটির সিদ্ধান্ত বদলের মতো অবৈধ কাজ করা হচ্ছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেন। একই সংস্থায় গত অনেক টেন্ডারে এই কোম্পানির মিটার কারিগরি মূল্যায়নে অকৃতকার্য হলেও ক্ষমতাসীন দলের একজন সংসদ সদস্যের প্রভাবে বিউবো চেয়ারম্যান এবার নিজের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করতে মিটার লাগানোর টার্গেট পূরণের অযুহাত দিয়ে দ্রুত চুক্তি করে কাজ দিতে মরিয়া হয়ে লেগেছেন।


সূত্র বলছে, মিটারের রিলের উপর মিটারের নির্ভুলভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার আর খরচের হিসাব করা নির্ভর করে। কমদামী এসব নিম্নমানের রিলে মিটারে ব্যবহার করাতে সঠিক বিল করা যাবে না এবং কোনো গ্রাহক বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাকে ফাঁকি দিয়ে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারবে, অন্যদিকে কোনো কোনো গ্রাহক নিজ ব্যবহারের অতিরিক্ত বিল দিতে বাধ্য হবে।


অভিযোগ হওয়া স্যাম্পল মিটারগুলো বুয়েট, বিএসটিআই অথবা আমাদের এসোসিয়েশনের দেশীয় ইঞ্জিনিয়ারদের পরীক্ষা করতে দিলে প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে বলে বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেন। এসব ত্রুটিপণ্য প্রিপেইড মিটারের ভুল রিডিং, ভুয়া বিলের কারণে গ্রাহক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। নতুন এসব কোম্পানি কাজ পেয়ে মালামাল সরবরাহ করে বিল নিয়ে চলে গেলেও গ্রহক ভোগান্তির শিকার হবে বছরের পর বছর। বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীরা মানহীন এসব পণ্যের কারণে যথাযথ সেবা গ্রহন থেকে বঞ্চিত হবে এবং তাতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে।


কাজ দিতে ৬০ লাখ টাকা ঘুষ ভাগাভাগি: এই মিটার কেলেঙ্কারির সঙ্গে সরাসরি জড়িত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিউবো) চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক মো. মফিজুল ইসলাম। এবং দরপত্র মূল্যায়ণ কমিটি মো. মফিজুল ইসলামের পীড়াপীড়িতে সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হয়। রিপোর্ট পরিবর্তন করে উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রিন্স রেজা। মফিজুল ইসলাম বিউবো এই দরপত্রগুলো দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। ওই প্রভাবশালী কর্মকর্তা জিএম কর্মাশিয়াল মফিজুল গাড়ি-বাড়ি সবকিছু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় নিংবোর পিছনে থাকা এসকিউ গ্রুপ। এসকিউ গ্রুপ সহকারী পরিচালক নাফিসা ও নিংবোর মোরসালিন এবং সেলস ম্যানেজার ইডিং জিএম কর্মাশিয়াল মফিজুলকে নগদ ৩০ লাখ টাকা দিয়েছে। কারণ খুজতে গিয়ে জানা গেছে, দরপত্র মূল্যয়ে কারিগরি পরিক্ষায় পাশ করতেই এই ঘুষ নিয়েছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেন। ১ম সর্বনিম্ম দরদাতা করতে এবং দ্রুত নোটিফিকেশন অফ এওয়ার্ডের জন্য নিংবো সানসিং ও এসকিউ গ্রুপ মিলে আরো ৩০ লাখ টাকা ভাগ করে দেয় ক্রয় পরিদপ্তর, জিএম কমার্শিয়াল দপ্তর এবং ডিজাইন দপ্তরে।


সর্বনিম্ম দরদাতা হতে নন-ব্র্যান্ড যন্ত্রাংশ দেয়: নিংবো সানসিং স্মার্ট ইলেকট্রিক কোম্পানি লিমিটেডের দাখিল করা স্যাম্পল মিটারে দরপত্র দলিলের চাহিদা মোতাবেক ল্যাচিং রিলেতে রিলে কোম্পানির নাম, ব্র্যান্ড, মডেল ইত্যাদি এনগ্রেভড ছিলো না। আবার কিছু স্যাম্পল মিটারের  আলগা একটি খাপে নামমাত্র ল্যাচিং রিলে ব্র্যান্ডের নাম, মডেল ইত্যাদি প্রিন্ট করা ছিলো। এই কোম্পানি মিটারে কমদামী নন-ব্র্যান্ড যন্ত্রাংশ দেয় কম দরে ১ম সর্বনিম্ম দরদাতা হতে।


এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব(উন্নয়ন) ড. সৈয়দ মাসুম আহমেদ চৌধুরী এনডিসি দৈনিক জনবাণীর বলেন, বিষয়টি জানার জন্য বিউবোকে চিঠি দিয়েছে। চিঠির উত্তর পেলেই ঘটনা জানতে পারবো। কেউ ঘুষ নিয়েছে কিনা আমাদের জানার কথা না। 


এ ব্যাপারে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক মো. মফিজুল ইসলাম দৈনিক জনবাণীকে বলেন, টাকা নিলে নিয়েছে। আপনি প্রমান করেন। আমি এই বিষয় কথা বলতে চাই না। আপনি যা ইচ্ছে তাই লিখেন। 


জেবি/এসবি