জাবিতে প্রতিবাদী গানের মিছিল


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:২৩ অপরাহ্ন, ১লা আগস্ট ২০২৪


জাবিতে প্রতিবাদী গানের মিছিল
ছবি: প্রতিনিধি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষকদের উপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ন্যাক্কারজনক হামলা এবং কোটা আন্দোলনকে ঘিরে দেশব্যাপী গণহত্যা, গণগ্রেফতার ও মিথ্যা মামলা দায়েরের প্রতিবাদে এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আরিফ সোহেলের মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদী গানের মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এতে সংহতি জানিয়ে অংশ নেন বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষকরাও।


বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে একটি প্রতিবাদী গানের মিছিল বের করেন তারা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ঘুরে পুরানো ফজিলাতুন্নেসা হল সংলগ্ন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নিহতদের স্বরণে নবনির্মিত ছাত্র-জনতা শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে যায়। পরে সেখানে এক মিনিট নিরবতা পালন কররেন।


আরও পড়ুন: জাবি শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল


এরপর সেখান থেকে পুনরায় মিছিলটি একই পথে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও একই দাবিতে একই স্থানে ‘পারফরমেন্স আর্ট’ পরিবেশন করেন চারুকলা ও নাটক এবং নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা।


সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আরিফ সোহেল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থী লিয়নসহ গ্রেফতারকৃত সকল শিক্ষার্থীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানানো হয়। এছাড়া বক্তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের উপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।


আরও পড়ুন: ডিবি পরিচয়ে জাবির এক সমন্বয়ককে তুলে নেওয়ার অভিযোগ


সমাবেশে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘বর্তমান সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে যে ত্রাস এবং ভয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশের মানুষ ছাত্র-জনতা সেই ভয়কে জয় করেছে। তারা এখন বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে জানে। এই যে সমস্ত ভয়কে উপেক্ষা করে সমস্ত কর্তৃত্ববাদকে অকার্যকর করে দিয়ে আজকে নতুন করে আমাদের স্বাধীন হওয়ার পথ সুগম হচ্ছে, ছাত্ররাই বৈষম্যের বিরুদ্ধে ন্যায্য আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সেটি শুরু করেছিল। এখন শুধু ছাত্ররা না যাদের সন্তান প্রাণ হারিয়েছে, আহত হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছে তারা এই আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে। এ আন্দোলনে ষড়যন্ত্র খুঁজে কোন লাভ নেই। আমাদেরকে নতুন করে নতুন পথ সৃষ্টি করতে হচ্ছে।’


তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান সরকার যে ভয়ের রাজত্ব সৃষ্টি করেছে, সেটি সবাই উপেক্ষা করছে কিন্তু এখনো সরকার সেটি উপলিব্ধী করতে পারছে না। নায্য আন্দোলনের উপর তারা টিয়ার শেল নিক্ষেপ করছে। তাদেরকে দমন করার চেষ্টা করছে, ধরপাকড় করছে। এমনকি যে সাঈদ বাংলাদেশের প্রতিরোধের প্রতিক হয়ে উঠেছে সেই সাঈদের হত্যা মামলায় একজন কিশোরকে গ্রেফতার করে কারাগারে রাখা হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে মিথ্যা মামলা দিয়ে নানা ধরনের ট্যাগ দিয়ে আন্দোলনকারীদের যেভাবে গ্রেফতার, জুলুম করা হচ্ছে আমরা সেটির নিন্দা জানাই। সবাই আজ জেগে উঠেছে, ভয় সন্ত্রাসকে জয় করে এই গণঅভ্যুত্থান নিশ্চয়ই জুলুমবাজ সরকারের পতন ঘটাবে।’


দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশ আজ শিক্ষাঙ্গন। সবাই সরকারের চাল বুঝে গিয়েছে, ‘দিনে নাটক, রাতে আটক’ খেলা খেলছে তারা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে দুই শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে, আমরা তাদের মুক্তি চাই। আর না হলে যেখানে তাদের আটকে রাখা হয়েছে, আমরা সেখানে আসবো। এর জন্য যে সমস্যা হবে তার দায় সরকারকেই নিতে হবে।’


আরও পড়ুন: কোটা আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে জাবিতে বিক্ষোভ


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আপনি এখনও মিথ্যা বলছেন, মিথ্যা বলতে বলতে আপনি সারা বিশ্বকে জানিয়েছেন আপনি একটা মিথ্যুক। আপনি যে কান্না করেন তাকে বিশ্ব মিডিয়া ‘কোকডাইল টিয়ারস’ বলে আখ্যায়িত করেছে। আপনার লজ্জা থাকা উচিত ক্রমাগতভাবে বিশ্বমিডিয়া আপনাকে যা বলছে আপনি তা বুঝছেন না।’


তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের ছাত্ররা যে পথ দেখিয়ে গেছে আমরা শিক্ষকরা সেই পথে হাটবো, আপামর জনতাও হাটবে। মনে করি, আমরা যে রাষ্ট্র নির্মাণে করতে চাই, আপনি সেই পথে বাঁধা হিসেবে উপনিত হয়েছেন। আপনার বিদায় ছাড়া এই দেশ আর শান্তি পাবে না। যতক্ষন না আমরা আপনাকে বিদায় করে ছাড়বো ততক্ষন পর্যন্ত আপনার হুস হবে না। লজ্জা থাকলে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা উচিত ছিলো। আগামীতে যদি এভাবে জেলে নিতে থাকেন তাহলে আমরা স্বেচ্ছায় কারাবরণ করবো। প্রয়োজনে জেল ঘেরাও করবো। তবুও আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে কুন্ঠিত হবো না।’


সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম বলেন, ‘আন্দোলনের শুরুতে আমরা দেখলাম ওবায়দুল কাদের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করার জন্য ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দিলো। দেশের প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের বললেন রাজাকার। তার প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা যখন স্লোগান দিচ্ছিলো ‘আমি কে তুমি কে, রাজাকার, রাজাকার’, তখন আপনারা শুধুমাত্র স্লোগানই দেখলেন, কিন্তু এরপর সরকারকে স্বৈরাচার বলে সম্ভোধন করলো সেটা দেখেননি। প্রধানমন্ত্রী, ওবায়দুল কাদের ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের উপর হামলার নির্দেশ দিলেন আবার তারাই নাকি কান্না শুরু করেছেন। অর্থাৎ জুতা মেরে, গরু দান করছেন।’


আরও পড়ুন: জাবি’র উপাচার্য ও প্রক্টরের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের উপর হামলা: ইউএনও সাভার


বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির নাহিদ কায়সার বলেন, ‘আমাদের প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীরা তাদের কিছু দাবি নিয়ে পথে নেমেছিলো। সংগত কিংবা অসংগত দাবি যাই হোক তাদের দাবিগুলো শোনার সময় দেওয়া উচিত ছিলো। তবে উলটো তাদের উপর অত্যন্ত অত্যাচার করা হয়েছে। আমি একজন শিক্ষক ও একজন অভিভাবক হিসেবে এই আন্দোলনে সংহতি জানাতে এসেছি। আমি চাই, শিক্ষার্থীরা ন্যায় পাক, তাদেরকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার হোক।’


এসডি/