গুলিবিদ্ধ কিশোরকে নিজের রিকশায় তুলতে গিয়ে দেখেন, সে তাঁরই ছেলে


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১:২৬ পূর্বাহ্ন, ২রা আগস্ট ২০২৪


গুলিবিদ্ধ কিশোরকে নিজের রিকশায় তুলতে গিয়ে দেখেন, সে তাঁরই ছেলে
ফাইল ছবি।

ঢাকার যাত্রাবাড়ীর ধনিয়া এলাকায় রিকশা নিয়ে ওবায়দুল ইসলাম অনাবিল হাসপাতালের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় গুলিবিদ্ধ এক কিশোরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাকে অনুরোধ জানান কিছু  পথচারী। তিনি রাজি হলে, গুলিবিদ্ধ কিশোরকে অটোরিকশায় তোলার সময় মুখ দেখে চমকে  তিনি। গুলিবিদ্ধ কিশোরকে জড়িয়ে ধরে বুকফাটা চিৎকার করে ওবায়দুল বলেন, ‘এ তো আমার ছেলে’আমিনুল ইসলাম। এ সময় তার আহাজারিতে ভারী হয়ে এলাকা।


একমাত্র সন্তান আমিনুল ইসলাম আমিনকে (১৬) নিয়ে দ্রুত ছুটে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। কিন্তু জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানালেন হাসপাতালে নেওয়ার আগেই আমিন মারা গিয়েছে।


আরও পড়ুন: সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে কাদের


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওবায়দুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সেলিনা বেগম একমাত্র ছেলে আমিনকে নিয়ে ঢাকার কদমতলী থানাধীন দক্ষিণ দনিয়ায় নতুন এ কে স্কুল রোডের একটি টিনশেডের বাসায় ভাড়া থাকতেন। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর ২০২০ সালে করোনাকালীন সময়ে পড়াশোনা থেমে যায় আমিনের। পরে পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে ঢাকার ‘ওয়ান টাচ’ নামের একটা বৈদ্যুতিক সুইচ তৈরির কারখানায় গত ৪ বছর ধরে কাজ করত।


এলাকাবাসীর সহায়তায় সেদিন রাতেই অ্যাম্বুলেন্সে করে আমিনের মরদেহ নিয়ে আসেন গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কেশবপুর ইউনিয়নের ভরিপাশা গ্রামে। ২২ জুলাই সকাল ৯টায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় আমিনের মরদেহ।


আমিনের মা সেলিনা বেগম বলেন, তাঁর ছেলের বয়স হয়েছিল ১৬ বছর। ছোটবেলায় মাদ্রাসায় পড়ত। পরে পড়া বন্ধ করে কাজে যোগ দিয়েছিল। স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করত। ২১ জুলাই ভালো লাগছে না বলে কাজে যায়নি সে। সারা দিন ঘুমিয়ে ছিল। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে ভাত খায়। মায়ের কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছিল। সেই ২০ টাকা তার পকেটেই ছিল।


আমিনের বাবা ওবায়দুল ইসলাম কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, গত ২১ জুলাই বিকেল ৫টার দিকে আমিন ঘুম থেকে উঠে দোকান থেকে চাল এনে দেয়। পরে বাসার সামনে বের হলে আন্দোলনের মধ্যে পড়ে যায়। বাসার সামনে থাকা একটি দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে আন্দোলন দেখছিল আমিন। হঠাৎ একটি গুলি এসে আমিনের বুকের বাম দিকে হৃৎপিণ্ড বরাবর লাগে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আমিন বাসার দিকে ছুটে আসতে চাইলে কিছুটা দৌড়ে এসে রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে। 


আরও পড়ুন: জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি


ওবায়দুল ইসলাম বলেন, আমিনকে রিকশায় তোলার সময় আমি চিনে ফেলি, এটা যে আমারই কলিজার টুকরা।


আমিনের গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বাউফল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বশির গাজী বলেন, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন থেকে নিহতদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমরা বাউফল উপজেলার সকল নিহতের তথ্য সেখানে পাঠিয়েছি। নিহতের পরিবার যাতে সরকারের পক্ষ থেকে সহায়তা পায় সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন সর্বোচ্চ সহায়তা করবে।



আরএক্স/