এক দফা দাবি আদায়ে কঠোর অবস্থানে বিসিআইসির কর্মচারীরা


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬:৫২ অপরাহ্ন, ১৯শে আগস্ট ২০২৪


এক দফা দাবি আদায়ে কঠোর অবস্থানে বিসিআইসির কর্মচারীরা
ছবি: জনবাণী

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সবচেয়ে বড় ভারী শিল্প সংস্থা। সার উৎপাদন ও সুষ্ঠু বিতরণের মাধ্যমে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণ করাই এর মূল লক্ষ্য। কিন্তু বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে বিভিন্ন সময়ে প্রেষণে নিয়োগকৃত দুর্নীতিবাজ পরিচালকদের রাজত্ব কায়েমের ফলে প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব এখন হুমকির সম্মুখীন।


১১ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গত ১৫ আগস্ট থেকে লাগাতার ধর্মঘটে বসেছে বিসিআইসির কর্মকর্তা কর্মচারীরা। বর্তমানে তাদের দাবি ১ দফায় নেমে এসেছে।


এ সময় বক্তারা জানান, প্রেষণে নিয়োগকৃত ঐ সকল পরিচালকরা বিসিআইসিতে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিগত দিনের যৌক্তিক দাবীসমূহ বাস্তবায়ন না করে এবং বিসিআইসি’র অগ্রগতি চিন্তা না করে তারা নিজেরা অনিয়মের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা লোপাটে ব্যস্ত ছিল। প্রতিবাদ করলেই প্রতিবাদীর ভাগ্যে দমন নিপীড়ন ও বঞ্চনা ছাড়া কিছুই জোটেনি।


বিশেষকরে বিদায়ী আওয়ামী সরকারের পদায়নকৃত আমলারা যখন এসবের নের্তৃত্ব দেন তখন আর বলার কিছু থাকে না। আমলাদের অতি উচ্চবিলাসীতা ও ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার দৌরাত্মে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) আজ হুমকীর সম্মুখীন।


আরও পড়ুন: বিসিআইসিতে সংস্কার এখন সময়ের দাবি



আমলাদের কোটি কোটি টাকা কমিশনের বিনিময়ে উৎপাদন থেকে সরে এসে সংস্থাটি ধীরে ধীরে আমদানি নির্ভর হয়ে পড়েছে। আগে যখন বিসিআইসি থেকে নিয়োগকৃত পরিচালকের সংখ্যা ০৫ জন ছিল তখন উৎপাদন হতো ১৮ থেকে ২০ লক্ষ মেট্রিক টন। বিসিআইসি থেকে নিয়োগকৃত পরিচালকের সংখ্যা কমিয়ে যখন আমলাদের বসানো শুরু হলো তখন উৎপাদনও কমতে শুরু করলো। নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতা থাকা সত্বেও ৬-৮ লক্ষ মেট্রিক টনের বেশি উৎপাদনে ঐ সকল পরিচালকদের আগ্রহ নেই। প্রায় ২০ লক্ষ মেট্রিক টন সার এখন আমদানি করতে হয়। আমদানির কারণে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা দেশ থেকে চলে যাচ্ছে। বিসিআইসি’র এই অচলাবস্থা দ্রুত নিরসনকল্পে বিগত দিনগুলোতে বিসিআইসি পরিচালনা পর্ষদের নিকট মৌখিকভাবে বিভিন্ন দাবি দাওয়া পেশ করা হয়েছিল।


কিন্তু বিসিআইসি’র পরিচালনা পর্ষদ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবিসমূহ বাস্তবায়নে কর্ণপাত করেনি। এমনকি ফেডারেশনের মাধ্যমে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবীসমূহ মৌখিকভাবে উপস্থাপন করা হলেও বিসিআইসি পরিচালনা পর্ষদ তা আমলে নেয়নি। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৩ ও ১৪ আগস্ট ২০২৪ তারিখে লিখিতভাবে ১১ দফা দাবি বিসিআইসি কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করা হয়।


এ ব্যাপারেও বিসিআইসি পরিচালনা পর্ষদ কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় ১১ দফা দাবি বিদায়ী আওয়ামী সরকারের প্রেষণে নিয়োগকৃত পরিচালকবৃন্দের পদত্যাগের ১ দফা দাবিতে রূপ নেয়। ১ দফা দাবী আদায়ের লক্ষ্যে বিসিআইসি ও এর নিয়ন্ত্রণাধীন কারখানাসমূহের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী উৎপাদন ও সার বিতরণ স্বাভাবিক রেখে ১৫ আগস্ট থেকে একযোগে আন্দোলন শুরু করেছে।


আন্দোলন ধীরে ধীরে তীব্র আকার ধারণ করছে। এখনই ১ দফা দাবি বাস্তবায়িত না হলে এর প্রভাব সার উৎপাদন ও বিতরণের উপর পড়তে পারে বলে বিশিষ্টজনেরা মনে করছেন। বিশিষ্টজনদের বক্তব্য, এর ফলে দেখা দিতে পারে সার সংকট ও বিশৃঙ্খল সার বিতরণ ব্যবস্থা। নিশ্চিত করে বলা যায় কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়ে খ্যাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়বে।


আরও পড়ুন: ১৭ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১১৩ কোটি ৪২ লাখ মার্কিন ডলার


দেশের সংকটময় মুহুর্তের ঠিক এই সময়ে বিগত সরকারের আমলে প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচালকবৃন্দের বিসিআইসি'র সর্ব স্তরের শ্রমিক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়ানো উচিৎ হয়নি। এ থেকে প্রমাণিত হয় প্রেষণে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচালকবৃন্দ এখনো বিদায়ী সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ব্যর্থ প্রমাণ করে তারা জাতিকে মেসেজ দিতে চায় আগের সরকারই ভাল ছিল। তাদের এই ষড়যন্ত্র নস্মাৎ করা হয়েছে বলে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা মন্তব্য করে বলেন যে, বিদায়ী ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রেষণে নিয়োগকৃত পরিচালকবৃন্দের বদলী এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।


ফেডারেশন অব বিসিআইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. দেলোয়ার হোসেন জনবাণীকে বলেন, আমাদের দাবি ছিল খুবই সামান্য, যৌক্তিক ও বৈধ। দাবিগুলো সংস্থার একান্ত অভ্যান্তরীণ বিষয়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বিদায়ী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের প্রেষণে নিয়োগকৃত দালালেরা শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করে আসছিল। বিভিন্ন বঞ্চনার মধ্যে শ্রমিক, কর্মচারী, কর্মকর্তাদের পদোন্নতি বন্ধ রেখে অন্যায্য ভাবে একে একে তারা পরিচালকের সব পদ প্রায় দখল করে নিয়েছে। এছাড়া দাবি দাওয়ার বিষয়ে কোন সুরহা না করেই গত ১৪ আগস্ট বিসিআইসির চেয়ারম্যানসহ পরিচালকবৃন্দ কাউকে না জানিয়ে অভদ্রভাবে অফিস ত্যাগ করে। তাদের এই অফিস ত্যাগকে পলায়ন বলা যাবে কি না তা বুঝে উঠতে পারছি না। অফিস ত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে এবং তার পর পরই তাদেরকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে। কিন্তু সমসাময়িক সময়ে বিসিআইসি'র একজন পরিচালক নিয়মিত অফিস করছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিৎ হবে বিসিআইসি’র শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তাদের দাবি মেনে নিয়ে প্রেষণে নিয়োগ পাওয়া পরিচালকদের দ্রুত অপসারণ করে ০১ দফা দাবির আলোকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি ও প্রচলিত নিয়মে বিসিআইসি’র কর্মকর্তাদের নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।


জেবি/এসবি