কাজে নেই ভারতীয়রা: আশুগঞ্জ-আগরতলা সড়ক নির্মাণে অনিশ্চয়তা


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৬:০৩ অপরাহ্ন, ১০ই সেপ্টেম্বর ২০২৪


কাজে নেই ভারতীয়রা: আশুগঞ্জ-আগরতলা সড়ক নির্মাণে অনিশ্চয়তা
ছবি: প্রতিনিধি

স্থলপথে আন্তঃদেশীয় বাণিজ্য বাড়াতে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ অর্থায়নে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় চলমান আশুগঞ্জ-আগরতলা চারলেন সড়ক প্রকল্প নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই প্রকল্পে নিয়োজিত ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের তিনশত কর্মকর্তা-কর্মচারী নিজ দেশে চলে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে চারলেন মহাসড়কের কাজ। কবে নাগাদ এই প্রকল্প কাজ পুনরায় শুরু হবে- সে সম্পর্কে কোনো তথ্য নেই সংশ্লিষ্টদের কাছেও। এদিকে, সড়কটিকে খানাখন্দ দেখা দেওয়ায় দিন দিন তা হয়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ। সড়কে লেগে থাকে দীর্ঘ যানযট।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নদীবন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত বিদ্যমান সড়কটি চারলেনের জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণের প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৭ সালে। তবে ভূমি অধিগ্রহণ, করোনা মহামারি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় বিলম্বিত হয় প্রকল্পের কাজ। প্রায় ৫১ কিলোমিটারের এ মহাসড়ক নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা। যা বাস্তবায়ন হচ্ছে ভারতের ঋণ সহায়তা ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে।


তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে করা প্রকল্পের প্রথমটি আশুগঞ্জ থেকে সরাইল, দ্বিতীয়টি সরাইল থেকে আখাউড়ার তন্তরবাজার এবং তৃতীয় প্যাকেজটি তন্তরবাজার থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত। সবকটির কাজই দেয়া হয়েছে ভারতীয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এফকনস্ ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডকে। এর মধ্যে তৃতীয় প্যাকেজের কাজ এখনও শুরুই করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। তিন দফায় বাড়ানো প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী বছরের জুনে। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি মাত্র ৫০ শতাংশ।


আরও পড়ুন: টেকনাফ এখন রোহিঙ্গা ভাড়াটিয়ার শহর


গত আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর নিরাপত্তাজনিত কারণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রায় তিনশ কর্মকর্তা-কর্মচারী কারণে ভারতে চলে যান। ফলে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে সেতু, বিরাসার থেকে পুনিয়াউট পর্যন্ত ফ্লাইওভার ও কালভার্ট নির্মাণ অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে নির্মাণ সামগ্রী ও দামী যন্ত্রাংশ। প্রতিদিন চুরি হচ্ছে সড়ক ও নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের মালামাল।


এদিকে, নির্মাণাধীন এই মহাসড়কের কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কিছু অংশ খানাখন্দভরে যাওয়ায় যানচলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। এই সড়কে প্রতিদিন ঘটছে দূর্ঘটনা এবং সড়কে লেগে থেকে দীর্ঘ যানযট ৷ পাশাপাশি সড়কের তীব্র ধুলার কারণে চলাচল কষ্টকর। আশপাশের বাসা-বাড়িসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্রেতা সংকটে অনেকটাই লাটে উঠেছে।


এই বিষয়ে সড়কের পাশের পীরবাড়ি এলাকার বাসিন্দা মাসুদুর রহমান ওয়াসিম বলেন, ভাবছিলাম সড়কটি হলে আমাদের অনেক উন্নতি হবে। কিন্তু এর কাজই শেষ হওয়ার নাম নেই। এখন এরজন্য আমাদের অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। ধুলোবালির জন্যে চলাচল করা কষ্টকর।


রফিকুল ইসলাম নামে এক ট্রাক চালক বলেন, সড়কটি নির্মাণ হলে মালামাল পরিবহনে অনেক সুবিধা হবে। দীর্ঘদিন যাবত দেখছি কাজ করেই যাচ্ছে, শেষ হওয়ার নাম নেই। এই সড়কটিতে কিছু স্থানে খানাখন্দের কারণে ট্রাক নিয়ে চলা ঝুঁকিপূর্ণ। বিরাসার, রাধিকা ও উজানিসার এলাকায় অনেক সময় ট্রাকের এক্সেল ভেঙে পড়ে থাকতে হয়। ফলে সড়কে ২/৩ ঘন্টার যানযট লাগে। এখন শুনলাম ভারতীয়রা কাজ ফেলে চলে গেছে। তাহলে এর বাকি কাজ করবে কে?


আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১১ পরিবার পেল পৌনে ৬ লাখ টাকা


আশুগঞ্জ-আখাউড়া চারলেন জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্পের ব্যবস্থাপক শামীম আহমেদ বলেন, ভারতীয় শ্রমিকরা চলে যাবার পর থেকে আমাদের প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি বন্ধ আছে। ভারতীয় হাইকমিশন থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে পুনরায় বাংলাদেশে এসে কাজ করার অনুমতি দেয়া হচ্ছে না। এর ফলে কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে সেটিও স্পষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। ফলে প্রকল্পের মেয়াদ আরও বাড়তে পারে।


এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পুরো কাজ যেহেতু ভারতীয় ঠিকাদারের অধীনে ছিল, তাই রাস্তার বর্তমানে মেরামতের দায়িত্বও তাদের ছিল। যেহেতু তারা নেই, তাই রাস্তা মেরামত করার মত জনবল বা যন্ত্রপাতি আমাদের হাতে নেই। আমরা রাজস্ব খাত থেকে টাকা দিয়ে মানুষের ভোগান্তি কমানোর জন্য চেষ্টা করছি।


এমএল/