Logo

দুর্নীতিবাজের হাতেই ডিপিডিসি’র পরিচালনা

profile picture
জনবাণী ডেস্ক
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২২:৪৬
88Shares
দুর্নীতিবাজের হাতেই ডিপিডিসি’র পরিচালনা
ছবি: সংগৃহীত

ডিপিডিসির দায়িত্বশীলরা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে মৌন থাকলেও

বিজ্ঞাপন

সারাদেশে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান হলেও ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিতে (ডিপিডিসি) এর ছোয়া লাগছে না। বরং দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত ব্যক্তিরাই থাকছেন প্রতিষ্ঠানটির চালকের দায়িত্বে। এ নিয়ে ডিপিডিসির ভেতরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে ডিপিডিসি পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে সংস্থাটির দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তাদের অপসারণ ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ।  

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত ১৬ বছরে সুবিধা নেয়া ডিপিডিসির কর্মকর্তারা নিজেকে রক্ষা করতে ভোল পাল্টিয়ে বিএনপি’র তকমা লাগিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকার আমলে যে কর্মকর্তারা দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। আর এসব সংবাদ প্রকাশ করায় তাদের বিরাগভাজন হচ্ছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।

বিজ্ঞাপন

ডিপিডিসি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত নির্বাহী পরিচালক (টিকনিক্যাল) অপারেশন শফিকুল ইসলামের (আইডি-২২৫৮৮) নেতৃত্বে দুর্নীতিবাজরা এক জোট হয়েছেন। নিজের আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছেন এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। তার দুর্নীতির লাগাম টানার কেউ নেই। সবাই নিশ্চুপ। আওয়ামী লীগের ১৬ বছর শাসনামলে দুর্নীতি অনিয়মের কারিগর ছিলেন তিনি, রাতারাতি ভোল পাল্টে নতুন উদ্যমে দুর্নীতির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, এ বছরের ৩০ জানুয়ারি তাকে ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক হিসেবে  দুই বছরের জন্য পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। ডিপিডিসিতে যোগদানের আগে শফিকুল ইসলাম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। ঐ প্রকল্প থেকেও শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। প্রকল্প পরিচালক থাকাকালীন প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় দফায় দফায় বাড়িয়েছেন। এমনকি প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছিলো সাবেক প্রতিমন্ত্রীর আস্থাভাজন ঠিকাদারকে। শফিকুল ইসলাম প্রকল্প থেকে শত কোটি টাকা নয়-ছয় করে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। এর আগে সে পিডিবিতে অ্যাসিষ্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ডিপিডিসি সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ জানুয়ারী নিয়োগ পেয়েই ডিপিডিসিতে ‘সিন্ডিকেট’ তৈরি করেন। ডিপিডিসির ডিএসএস, সিএসএস ঠিকাদার নিয়োগ, গ্রাহকের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ, নীতিমালা ভঙ্গ করে বিদ্যুৎ সংযোগ ও বদলি বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করেন। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক এবং ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক হওয়ার সুবাধে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেন শফিকুল। ঢাকায় এই কর্মকর্তার একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট, ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ টাকা এবং নওগাঁতে একাধিক সম্পদ রয়েছে। ঢাকার আফতাব নগরে রয়েছে আলিশান ফ্ল্যাট। 

বিজ্ঞাপন

সূত্র মতে, গত দুই বছরে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে একাধিক অভিযোগ করার পরও কোন পদক্ষেপ নেয়নি দুদক।  আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের আস্থাভাজন কর্মকর্তা থাকায় কেউ তার বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ডিপিডিসির দায়িত্বশীলরা প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে মৌন থাকলেও এসব কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করছে দুদক। তাদের বিরুন্ধে মাঠে নেমেছেন দুদকে অনুসন্ধানী টিম।

বিজ্ঞাপন

সূত্র বলছে, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে ডিপিডিসি পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দিয়ে সংস্থাটির দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তাদের অপসারণ ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ। বিগত সরকারের আমলে সংস্থাটির পদোন্নতিবঞ্চিত সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তাদের উপযুক্ত পদে পদায়নেরও দাবি জানিয়েছে তারা। একইসঙ্গে, দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তাদের পাচারকৃত অর্থ যৌক্তিক সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদের সমন্বয়ক প্রকৌশলী নাঈম হোসাইন বলেন, ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক মো. গোলাম মোস্তফা ও কিউ এম শফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বদলি, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্যসহ অনিয়ম ও শত শত কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। যার ফলে পাওয়ার সেক্টরের গুরুত্বপূর্ণ কোম্পানি-ডিপিডিসি প্রতিবছর শত শত কোটি টাকা আর্থিক লোকসান গুনছে।

তিনি বলেন, এই কর্মকর্তারা বিগত স্বৈরাচার সরকারের মদদপুষ্ট হয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, যা বর্তমান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মাধামে অর্জিত স্বাধীনতার পরিপন্থী এবং শহীদদের সঙ্গে চরম প্রতারণা। তাই দ্রুততম সময়ে দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তাদের ডিপিডিসির গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে অপসারণ, দুর্নীতির তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা, শাস্তি নিশ্চিতকরণ ও লোপাটকৃত অর্থ যৌক্তিক সময়ের মধ্যে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানানো হয়।

বিজ্ঞাপন

বৈষম্যবিরোধী প্রকৌশলী পরিষদ ডিপিডিসির যেসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে তারা হলেন, নির্বাহী পরিচালক (অর্থ) মো. গোলাম মোস্তফা, নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন্স) কিউ এম শফিকুল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক (এইচআর) সোনামণি চাকমা, জিটুজি প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাজিবুল হাদী, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মো. কাওসার আমির আলী। এদিকে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা সরকারের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর আস্থাভাজন দুর্নীতিবাজ ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক (অপারেশন) কিউ এম শফিকুল ইসলাম, নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) মোরশেদ আলম খান এবং নির্বাহী পরিচালক (প্রশাসন) সোনা মণি চাকমা চক্রান্ত করছে চেয়ারে থাকার জন্য।

বিজ্ঞাপন

ডিপিডিসি সূত্রে জানা গেছে, দুর্নীতিগ্রস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার কারণে কিছু সংখ্যক সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাকে দীর্ঘ সময় অফিসিয়াল পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়েছে, যার কারণে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন। পদোন্নতিবঞ্চিত সেই সব সৎ, দক্ষ ও দেশপ্রেমিক কর্মকর্তাদের উপযুক্ত পদসমূহে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে পদোন্নতি দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোরালো দাবি উঠেছে। এসংক্রান্ত প্রস্তাবনা প্রধান উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। ভবিষ্যতে যেন দুর্নীতি না হয়, সে বিষয়ে কঠোর তদারকি থাকবে।

বিজ্ঞাপন

জেবি/এসবি

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ

মোঃ শফিকুল ইসলাম ( শফিক )

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ৫৭, ময়মনসিংহ লেন, ২০ লিংক রোড, বাংলামটর, ঢাকা-১০০০।

ফোনঃ 02-44615293

ই-মেইলঃ dailyjanobaninews@gmail.com; dailyjanobaniad@gmail.com

জনবাণী এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত। কপিরাইট © ২০২৫

Developed by: AB Infotech LTD