যেকোনো পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকাররের পাশে থাকব: সেনাপ্রধান


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন, ২৪শে সেপ্টেম্বর ২০২৪


যেকোনো পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকাররের পাশে থাকব: সেনাপ্রধান
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামান.

আগামী ১৮ মাসের মধ্যে বাংলাদেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে সে জন্য দেশে প্রধান প্রধান সংস্কার সম্পূর্ণ করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামান।


সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকায় তার কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক বিরল সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন তিনি।


গেল জুলাই ও আগস্টে দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিলে একপাশে সরে দাঁড়ান জেনারেল ওয়াকের-উজ-জামান ও তার সেনারা। এতেই ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা ও তার সরকারের ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়। পরে ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা গণভবন অভিমুখে লংমার্চ শুরু করলে হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান।


রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারকে পূর্ণ সমর্থন দেয়ার পাশাপাশি সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করার একটি রূপরেখার কথা জানান সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, আমি তার পাশে থাকবো। যাই হোক না কেন। যাতে তিনি তার মিশন সম্পন্ন করতে পারেন।


সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের হাল ধরেছেন বিশ্বব্যাপী ক্ষুদ্রঋণ আন্দোলনের অগ্রদূত ড. ইউনূস। এরই মধ্যে ১৭ কোটির মানুষের দেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পথ প্রশস্ত করতে বিচার বিভাগ, পুলিশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।


আরও পড়ুন:  দুর্গাপূজায় নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা থাকবে: আইজিপি


সংস্কারের পর, সেনাপ্রধান বলেন,“এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে গণতন্ত্রে উত্তরণ করা উচিত। তবে এমন সময়সীমার কথা বলার পরপরই ধৈর্য ধরার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি। বলেন, আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, তাহলে আমি বলব যে সময়সীমার মাধ্যমে আমাদের একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রবেশ করা উচিত।”


বাংলাদেশের প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দলই—হাসিনার আওয়ামী লীগ এবং তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)—আগস্টে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানিয়েছিল।


গেল জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে রাজপথে নেমে আসে লাখ লাখ শিক্ষার্থী। এ সময় তাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনের নামে পুলিশ দমন-পীড়ন চালালে আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ছাত্রদের সঙ্গে সাধারণ মানুষ যোগ দিলে কোটা সংস্কার আন্দোলন রূপ নেয় সরকারবিরোধী গণঅভ্যুত্থানে। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারের আন্দালেনে সর্বোচ্চ ১ হাজারে বেশি মানুষ শহিদ হন।


১৯৭১ সালে এক রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। তবে ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হলে বাংলাদেশে সামরিক শাসন শুরু হয়। এরপর নানান চড়াই-উৎরাই পার হয়ে ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন সামরিক শাসক হোসেন মোহাম্মদ এরশাদ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়।

 ‍

আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে শতভাগ শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেবে চীন


তবে গত ২০০৭ সালে দেশে সেনা অভ্যুত্থান হয়। গঠিত হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার। একে সমর্থন দেয় সেনাবাহিনী। ২০০৯ সালে হাসিনা ক্ষমতায় আসার আগ পর্যন্ত দুই বছর দেশ শাসন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার।


বাংলাদেশের এই পট-পরিবর্তনের পুরো সময় জুড়ে একজন সেনা কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন জেনারেল জামান। তিনি বললেন, “তার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী রাজনৈতিকভাবে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। তিনি বলেন, আমি এমন কিছু করব না যা আমার প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্ষতিকর হয়। আমি একজন পেশাদার সৈনিক। আমি আমার সেনাবাহিনীকে পেশাদার রাখতে চাই।”


সেনাপ্রধান জানান, “হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশ ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এসব সরকারি সংস্কারের সঙ্গে মিল রেখে সেনা সদস্যদের বিরুদ্ধে অন্যায়ের অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু সেনাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে।”


জেবি/এসবি