ডিপিডিসি’র সোনা মনি’র চেয়ারে এতো মধু!


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ০১:৩২ অপরাহ্ন, ২৯শে সেপ্টেম্বর ২০২৪


ডিপিডিসি’র সোনা মনি’র চেয়ারে এতো মধু!
ছবি: জনবাণী

নিজেকে রক্ষায় মরিয়া হয়ে উঠেছেন ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক (এডমিন এন্ড এইচ আর) সোনা মনি চাকমা। একের পর এক দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশের পরেও নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন বড় কর্তারা। অনিয়ম দুর্নীতির সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। দাপটের সঙ্গে চলছে সোনা মনি’র দুর্নীতির কালো থাবা। অভিযোগ রয়েছে সোনামনি চাকমা নিজেদের রক্ষা করতে ডিপিডিসি’র বড় কর্তাদের ম্যানেজ করেছেন। 


খোদ ডিপিডিসি’র  দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, সোনামনি চাকমাকে রক্ষা করে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট উল্টো ভাবে উপস্থাপন করা হবে। যাতে সব দায় গিয়ে পড়ে কাকরাইল ডিভিশনের টেকনিক্যাল সুপারভাইজার মো. ইউসুফ আলী’র মাথায়। এ ছাড়া সোনা মনি নিজেই অন্য গ্রাহক দিয়ে মো. ইউসুফ আলী’র বিরুদ্ধে আরো মিথ্যা অভিযোগ দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। অন্য গ্রাহকরা অভিযোগ দিলে তদন্ত রিপোর্ট যাবে ইউসুফ আলী’র বিরুদ্ধে। কিন্তু তদন্ত কমিটি ইউসুফ আলীর কোনো অনিয়মের প্রমাণ এখনো পায়নি বলে জানা গেছে।


 সূত্র বলছে, তদন্ত কর্মকর্তারাও সোনা মনির সঙ্গে এক জোট হয়েছেন। যাতে করে সোনা মনি’র চেয়ার টিকে যায়। এখন প্রশ্ন উঠেছে সোনা মনি’র চেয়ারে এতো মধু।


আরও পড়ুন: সোনা মনি চাকমার মদদে মাঈন উদ্দিনের হাতে সোনার চাবি!


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন,ইউসুফ আলীর কোনো দোষ পাওয়া যায়নি। এখানে সব নাটের গুরু কাকরাইলের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান। তিনি সোনা মনি চাকমার নির্দেশে নানা অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তার অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেই গ্রাহক দিয়ে ডিপিডিসির প্রধান কার্যালয়ে একটা মিথ্যা অভিযোগ দেওয়া হয়। এভাবে সৎ কর্মকর্তাদের অন্যায় মাথায় নিয়ে চাকরি থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়।


দুদকের অভিযোগ সূত্র বলছে, ফতুল্লা’র ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ রহমান সরদারকে ঘুষ কেলেঙ্কারির দায়ে সাময়িক বহিস্কার করা হয়। এক বছরের মধ্যে ২২ লাখ টাকা চুক্তিতে বহিস্কার প্রত্যাহার করে স্ক্যাডা থেকে সেফটি ইনভারমেন্ট  দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদের দুর্নীতি ও অনিয়মের প্রমাণও মেলে তদন্তে। তদন্ত কমিটির রিপোর্টে প্রকৌশলী মাহমুদকে চাকরি থেকে অব্যহতির সুপারিশ করা হয়। প্রধান প্রকৌশলী তারিকুল হক তদন্ত কমিটির প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। তদন্ত রিপোর্টেও তার সাক্ষর রয়েছে। সেই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা টাকার বিনিময়ে পার পেয়ে গেছেন।


 সাত মসজিদ ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানকে আজিমপুরে ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এ জন্য তার গুনতে হয়েছে ১৮ লাখ টাকা। স্বামীবাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হয়ে দুইটি ইনক্রিমেন্ট আটকে দেওয়া হয়। কিন্তু  প্রাইস পোস্টিং হিসেবে ১০ লাখ টাকার লেনদেন করেই স্বামীবাগ ডিভিশনে বহাল রয়েছেন তিনি। একই ডিভিশনের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মুশফিকুর রহমান। 


আরও পড়ুন: ডিপিডিসির দুর্নীতির সোনার হরিণ সোনা মনি চাকমা’র হাতে


গত ২২ জানুয়ারি গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেন তার শ্বশুর মো. হান্নান। অভিযোগ রয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী মোটা অংকের লেনদেনের কারণে ওই কর্মকর্তাকে বাচাঁতে কৌশল অবলম্বন করেছিলেন। যে সময় স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন মুশফিকুর। ঠিক তখন নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছিলেন মুশফিকুর ছুটিতে। দীর্ঘ লম্বা সময় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় তাকে বহিস্কার করা হয়েছে। পরে থাকে স্ক্যাডায় বদলি করা হয়। এ জন্য তার গুনতে হয়েছে ৫ লাখ টাকা।


এ ব্যাপারে ভুক্তভোগি এক কর্মকর্তা বলেন, সোনা মনি স্যার টাকা ছাড়া কিছু বোঝে না। টাকা দিলেই সব মাফ পেয়ে যাওয়া সম্ভব। সে শুধু টাকা চেনে। এ ব্যাপারে প্রধান প্রকৌশলী তারিকুল হক বলেন, আমি তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে সঠিক রিপোর্ট দেই। এবং সেটাই দিয়ে আসছি সব সময়। সততা নিয়ে কাজ করি। মাঠ তদন্ত যা পাই তাই রিপোর্র্টে দেই। তার পরে যদি উপরের জাজমেন্ট রিপোর্ট পাল্টে যায় সেই ক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না।


এ ব্যাপারে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক (এডমিন এন্ড এইচ আর) সোনা মনি চাকমা’র মুঠো ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে উত্তর পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী আবদুল্লাহ নোমান বলেন, এ সব ঘটনা তো আমার জানা নেই, তাই তার সঙ্গে আলোচনা করে ঘটনা জেনে দেখবো।  খোঁজ নিয়ে দেখবো, আসলে ঘটনা কি হয়েছে।  


এ ব্যাপারে টিআইবি নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন,  দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। অনেক সময় ছোটোখাটো কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, কিন্তু এর সঙ্গে যে অন্যান্য প্রভাবশালীরা জড়িত থাকে তাদেরকে ছাড় দেওয়া হয়। জড়িত সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে দুর্নীতি বন্ধ হবে।


জেবি/এসবি