রাবিতে এবছর ভর্তির সুযোগ পেলেন ১৮ জন বিদেশি শিক্ষার্থী
ক্যাম্পাস প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯:৩২ অপরাহ্ন, ১লা অক্টোবর ২০২৪
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথমবর্ষে ৯ জন। ভর্তি হওয়া সকলেই নেপালের নাগরিক। এছাড়া এ বছর স্নাতকোত্তরে ৬ জন ও পিএইচডি করতে ৩ জন বিদেশি শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এ নিয়ে এই শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হয়েছেন মোট ১৮ জন বিদেশী শিক্ষার্থী। বর্তমানে রাবিতে অধ্যয়নরত মোট বিদেশী শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ জনে।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) এসব তথ্য জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক অফিস শাখার সেকশন অফিসার শামসুল আলম।
একাডেমিক শাখা সূত্রে জানা যায়, চলতি শিক্ষাবর্ষ ২০২৩-২৪ এ স্নাতক প্রথম বর্ষে কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ১জন ও ভেটেনারি এন্ড এনিমেল সাইন্স বিভাগে ৮ জন নেপালি শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এছাড়া স্নাতকোত্তরে ৫ জন সোমালিয়ান ও ১ জন নেপালি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। সোমালিয়ান শিক্ষার্থীদের মধ্যে মধ্যে ৩ জন রসায়ন বিভাগে, ২ জন প্রাণিবিদ্যা বিভাগে এবং নেপালি শিক্ষার্থীটি ভেটেনারি এন্ড এনিমেল সাইন্স বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। রাবিতে এ বছর পিএইচডি করতে এসেছে ৩জন। তারা সবাই ভারতীয়।
আরও পড়ুন: রাবির অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলোর বেহাল দশা
রাবিতে স্নাতক শ্রেণিতে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ২ জন, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ৪ জন, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে ১জন রাবিতে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সংখ্যাটি শূন্যে নেমে যায়। এরপর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ৮জন এবং সর্বশেষ ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ৯জন বিদেশি শিক্ষার্থী স্নাতক প্রথম বর্ষে ভর্তি হয়েছেন। ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে রাবির স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন মোট ২৪ জন শিক্ষার্থী। যাদের মধ্যে ১জন শুধু ভারতীয় আর বাকি ২৩ জনই নেপালি।
বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা সীট বরাদ্দ আছে কিনা সে বিষয়ে একাডেমিক সেকশনের প্রধান উপ রেজিস্ট্রার এ. এইচ. এম আসলাম হোসেন বলেন, না তাদের জন্য কোনো আলাদা সীট বরাদ্দ থাকেনা। তাদেরকে আমরা অতিরিক্ত ধরে ভর্তি সম্পন্ন করি যা পরবর্তিতে বিভিন্নভাবে পূর্ণ হয়ে যায়। কারণ আমাদের এমন অনেক বিভাগ রয়েছে যেখানে প্রতিবছরই কিছু সিট গ্যাপ থাকে আবার অনেক বিদেশি শিক্ষার্থীও চলে যায় বা, অকৃতকার্য হয়। যেমন অনেক সোমালিয়ান শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তারা না পারে ভালো ইংরেজি, না পারে বাংলা। তারা প্রায়ই উচ্চশিক্ষা শেষ করতে পারে না ৷ এভাবেই পরবর্তী সময়ে সীট বরাদ্দ হয়ে যায়।
সার্বিক বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা ড. আমিরুল ইসলাম কনক বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী বৃদ্ধি পাওয়া মানে এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইতিবাচক দিক। কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীবান্ধব করা যায় এবং বিদেশি শিক্ষার্থীরা যেন আমাদের এখানে পড়তে আসে, সে বিষয়ে আমরা পদক্ষেপ নিবো। আমরা চাই বিদেশি শিক্ষার্থী যারা আসবে, তারা যেন একাডেমিক কারিকুলাম ঠিকমতো সম্পন্ন করতে পারে। পাশাপাশি চাইবো, তারা যেন কোনো সেশনজটে না পড়ে। অর্থাৎ তারা যেন হতাশ না হয়।
আরও পড়ুন: রাবি সফরে চীনের হোংহে বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফ্যুসিয়াস ইনস্টিটিউটের প্রতিনিধিদল
তিনি আরও বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীরা এখানে আসার প্রক্রিয়া কীভাবে আরও সহজ করা যায়, তা নিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্কুলারগুলোকে সেই উপযোগী এবং একাডেমিক কারিকুলাম তাদের জন্য সুবিধাজনক করা যায় কিনা সেদিক নিয়ে কাজ করবো। যেহেতু তারা বাংলা পারেনা, সেহেতু আমরা চাইবো আমাদের শিক্ষকদের ইংরেজিতে আরও দক্ষ করে তুলতে। যেন ইংরেজিতে তারা তাদের কোর্স শেষ করতে পারে।
অনেক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা শেষ করার আগেই চলে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, তারা যেহেতু বাংলা জানেনা। তাদের সম্পূর্ণ কোর্স ইংরেজিতে করতে হয়। আবার আমাদের দেশে বেশিরভাগ কোর্স বাংলা ও ইংরেজিতে হয়। আমাদের অনেক শিক্ষক আছে ইংরেজিতে তেমন দক্ষ না। আবার কিছু শিক্ষার্থী পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াইতে না পেরে চলে যায়। আমরা দেখেছি, নেপালের কয়েকটি শিক্ষার্থী মাদকে জড়িয়ে যাওয়ার কারণে ঝড়ে পড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভিসা জটিলতার যে বিষয়টি আমার মনে হয় তারা দূতাবাস থেকে সঠিক পরামর্শ পায়না। যদি দূতাবাসগুলো আরও বন্ধুত্বসুলভ হয়, তাহলে বিষয়টি আরও সহজ হয়ে যাবে। আমরা দূতাবাস এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোতে লিখবো যাতে আমাদের ফরেইন অ্যাফেয়ার্সগুলোকে ঠিকমতো নির্দেশনা দেয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ আছে। এক নেপালী শিক্ষার্থী প্রতিমাসে ২ হাজার টাকা পায়। দরিদ্র কোটায় সে তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা উল্লেখ করেছিলো। বিদেশি শিক্ষার্থীরা যাতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে, সে বিষয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবদিক দিয়েই সচেষ্ট।
এমএল/