এক নজরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশটি আবাসিক হল


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫:৪০ অপরাহ্ন, ১৯শে অক্টোবর ২০২৪


এক নজরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশটি আবাসিক হল
ফাইল ছবি।

সজীবুর রহমান, জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য ১১টি এবং ছাত্রীদের জন্য ১০টি মোট ২১টি আবাসিক হল রয়েছে। দেখে নেয়া যাক জাবির একুশটি হল এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রভোস্টগণ। 


এক নজরে ছাত্রীদের হল:

ফজিলতুন্নেসা হল

চলতি বছরের ২০২৪ সালে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের নতুন তিনটি আবাসিক হলের মধ্যে একটি হলের নামকরণ করা হয়েছে ১ঌ৮৬ সালে স্থাপিত 'ফজিলতুন্নেসা' হলের নাম অনুসারে। ২০২৪ সাল থেকে হলটির আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয়। ফজিলতুন্নেসা হলের বর্তমান প্রভোস্ট গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ নজরুল ইসলাম।


নওয়াব ফয়জুননেসা হল

১ঌ৭৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে নওয়াব ফয়জুননেসা হলটি চালু হয়। এটি স্বতন্ত্র হল ও ১৪ এপিল সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুসারে এই হলটির নামকরণ করা হয় 'নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল'৷ হলটি এক নম্বর হল বলেও পরিচিত। হলটির বর্তমান প্রভোস্ট অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।


প্রীতিলতা হল

স্থাপতি ফয়সাল মাহবুব এর নকশাকার ১৯৯৪ সালে স্থাপিত হয় প্রীতিলতা হল। ১ঌঌ৭ সালের ৩১ আগস্ট অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের বিশেষ সভার এটি “প্রীতিলতা হল” নামে নামকরণ করা হয়৷ দুদিকে লেক বেষ্টিত এ হলে ৫০৪ জন ছাত্রীর আসন রয়েছে৷ প্রীতিলতা হলে হল প্রভোস্টের দায়িত্বে আছেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা।


জাহানারা ইমাম হল

বাংলাদেশী লেখিকা, কথাসাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল বিরোধী আন্দোলনের নেত্রী জাহানারা ইমামের নামে এই হলের নামকরণ করা হয় 'জাহানারা ইমাম হল'। এই হলটি ১ঌঌ৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করা হয়৷ জাহানারা ইমাম হলের বর্তমান প্রভোস্ট গনিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুরশেদা বেগম।


বেগম খালেদা জিয়া হল

বিএনপির চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নামানুসারে এই হলের নামকরণ করা হয় বেগম খালেদা জিয়া হল। এই হলের আসন সংখ্যা ৬০০+ এবং স্থাপিত হয় ২০০৫ সালে। বেগম খালেদা জিয়া হলের বর্তমান প্রভোস্ট দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মনজুর ইলাহি।


শেখ হাসিনা হল

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের ৬ষ্ঠ হল হিসেবে শেখ হাসিনা হল ২০১৪ সালের ১২ জুন থেকে যাত্রা শুরু করে। শেখ হাসিনা হলের বর্তমান প্রভোস্ট দর্শন বিভাগের অধ্যাপক তারেক চৌধুরী।


বেগম সুফিয়া কামাল হল

বাংলা সাহিত্যে কবি বেগম সুফিয়া কামালের অবদানকে স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের ৭ম হল হিসেবে ২০১৫ বেগম সুফিয়া কামাল হল যাত্রা শুরু করে। এই হলের আসন সংখ্যা ৭৭০। বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রভোস্ট ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) অধ্যাপক কে এম আককাছ আলী।


বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেসা হল

বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এর স্ত্রী শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব -এর নামে মেয়েদের ৮ম হল হিসেবে ২০১৭ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেসা হল যাত্রা শুরু করে। এই হলের আসন সংখ্যা ৮৫০। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের বর্তমান প্রভোস্ট উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শামীমা নাসরীন জলি।


রোকেয়া হল

বাঙালি মুসলিম নারী জাগরণের অগ্রদূত এবং প্রথম বাঙালি নারীবাদী বেগম রোকেয়া শাখাওয়াত হোসেনের নামে ২০২৪ সালে চালু করা হয় 'রোকেয়া হল'। শুরুতে হলের নাম "বেগম রোকেয়া হল" নির্বাচিত হলেও পরবর্তীতে 'বেগম' বাদ দিয়ে শুধু "রোকেয়া হল" রাখা হয়। নবনির্মিত ছয়টি হলের মধ্যে এটি একটি। রোকেয়া হলের বর্তমান প্রভোস্ট মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক নিগার সুলতানা।


বীর প্রতীক তারামন বিবি হল

সর্বশেষ চালুকৃত হল এটি। বীরপ্রতীক তারামন বিবি হলের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম উদ্বোধন করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান। ২০২৪ সালে ১৬ই অক্টোবর ১০-তলা বিশিষ্ট নবনির্মিত এই হল চালু হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর নারী মুক্তিযোদ্ধার নাম অনুসারে এই হলের নামকরণ করা হয় বীর প্রতীক তারামন বিবি হল। এই হলের বর্তমান প্রভোস্ট গনিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আবেদা সুলতানা।


এক নজরে ছাত্রদের হল:

আল বেরুনী হল

বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্মলগ্ন থেকে সবথেকে পুরনো যে হল সেটি হচ্ছে আল বেরুনী হল। এই হল স্থাপিত হয় ১৯৭০ সালে। ১ঌ৭ঌ সালে খ্যাতনামা জ্ঞানসাধক `আল-বেরুনী'র নামানুসারে এই হলের নামকরণ করা হয়৷ বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রভোস্ট হলেন বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শরিফ হোসেন।


মীর মশাররফ হোসেন হল

"মীর মশাররফ হোসেন হল, (প্রজাতি হল)" ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে নির্মিত হয়েছে ১৯৭৩ সালে। ১ঌ৭৮ সালের ১৪ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তে বিশিষ্ট কথাশিল্পী মীর মশাররফ হোসেনের নাম অনুসারে ১৯৭৮ সালে এই প্রজাপতি হলের নাম নির্ধারণ করা হয় 'মীর মশাররফ হোসেন হল'৷ তৎকালীন সময়ে আয়তনে ও ধারণক্ষমতায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় হল এটি। প্রজাপতির প্রতিকৃতিতে নকশাকৃত এই হলটির স্থপতি ছিলেন, মাজহারুল ইসলাম। হল'টির বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রভোস্ট হলেন লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. মাহমুদুর রহমান।


আ. ফ. ম. কামালউদ্দিন হল

কামালউদ্দিন হল স্থাপিত হয়েছে ১৯৮৬ সালে। ১ঌ৮৫ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি এ হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আ ফ ম কামালউদ্দিন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচিত উপাচার্য ছিলেন। তার অকাল মৃত্যুতে উপাচার্যের প্রতি সম্মান জানিয়ে ১ঌ৮৮ সালের ১০ নভেম্বরে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেটের সভায় তার নামে এই হলের নামকরণ করা হয়৷ এই হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রভোস্ট হলেন পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং বর্তমান প্রক্টর ড. এ. কে. এম. রাশিদুল আলম।



শহীদ সালাম-বরকত হল

শহীদ সালাম-বরকত হল স্থাপিত হয় ১৯৮৭ সালে। দুজন ভাষা আন্দোলনে শহীদের নামে এই হলের নামকরণ করা হয় শহীদ সালাম-বরকত হল৷ ভবনটি দুটি ব্লকে চারতলা বিশিষ্ট। বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রভোস্ট হলেন উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল হালিম।



মওলানা ভাসানী হল

মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নামে ১৯৯২ সালে নির্মিত হয় ছেলেদের পঞ্চম হল। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিখ্যাত বটতলার পশ্চিমেই এই হলের অবস্থান। হলের সামনেই রয়েছে একটি বিখ্যাত পুকুর। যা ভাসানীর পুকুর নামেই বহুল পরিচিত। পুকুরঘাট, হলের আকৃতি ও অবস্থানের কারনে হলটিকে "রাজবাড়ি" বলা হয়। হলের বর্তমান প্রভোস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আমিনুর রহমান খান।


বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল স্থাপিত হয় ২০০১ সালে। এই হলের অবস্থান সিএসই ভবনের পাশেই। হলের দক্ষিন পাশে আছে একটি খেলার মাঠ যা 'সিডনি ফিল্ড' হিসেবে পরিচিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের বর্তমান প্রভোস্ট ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ রেজাউল রকিব।


শহীদ রফিক-জব্বার হল

৫২'এর ভাষাশহীদ রফিক ও জব্বারের নামে এই হলের নামকরণ করা হয় শহীদ রফিক-জব্বার হল। এটি স্থাপিত হয় ২০১০ সালে। হলটির পেছনে সুন্দর একটি আম বাগান রয়েছে। এছাড়াও পাশে রয়েছে নবনির্মিত তিনটি হল। রফিক-জব্বার হলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রভোস্ট হলেন দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আবদুছ ছাত্তার।



বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল ১৯ আগস্ট, ২০১৭ সালে ছাত্রদের বসবাসের জন‍্য উম্মুক্ত করে দেয়া হয়।সৌন্দর্যময় ও দৃষ্টিনন্দন জায়গা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ছায়াময় 'শান্তিনিকেতন' এই হলের পাশেই অবস্থিত। হলটির বর্তমান প্রভোস্ট হচ্ছেন অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম।



শেখ রাসেল হল

বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠতম সন্তান শেখ রাসেলের নামে এই হলটির নামকরন করা হয়েছে। সেন্সরিং অটোমেটিক লাইট এবং লিফটসহ আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পূর্ণ ১০ তালা বিশিষ্ট হলটি চালু হয় ২০২৪ সালে। বর্তমান শেখ রাসেল হলে প্রভোস্টের দায়িত্বে আছেন প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন।


শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ হল

বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ এর নামে এ হলের নামকরণ করা হয় শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ হল। লিফটসহ আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পূর্ণ ১০ তলা (মাটির নিচে তলাসহ ১১ তলা) বিশিষ্ট হলটির আসন সংখ্যা ১০০০। শেখ রাসেল হল এবং তাজউদ্দীন হল পাশাপাশি অবস্থান করছে। শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলে প্রভোস্টের দায়িত্বে আছেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. খোঃ লুৎফুল এলাহী।


জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল

বাংলাদেশের জাতীয় কবির নামে এ হলের নামকরন করা হয় জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল। ১০ তালাবিশিষ্ট অত্যাধুনিক সুবিধা আর জাবির প্রাণ প্রকৃতি উপভোগ করতে এই হলের জুরি নেই। হলটির আসন সংখ্যা ১০০০। এই হলটি ২০২৪ সালেই চালু হয়েছে। হলের বর্তমান প্রভোস্ট আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবদুল্লাহ হেল কাফী।