নিষিদ্ধের পর ছাত্রলীগের নির্যাতনের ফিরিস্তি প্রকাশ করেছে জাবি শিক্ষার্থীরা


Janobani

ক্যাম্পাস প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:২৫ অপরাহ্ন, ২৪শে অক্টোবর ২০২৪


নিষিদ্ধের পর ছাত্রলীগের নির্যাতনের ফিরিস্তি প্রকাশ করেছে জাবি শিক্ষার্থীরা
ফাইল ছবি

সজীবুর রহমান: সরকার কর্তৃক ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়া পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রলীগের নির্যাতনের ফিরিস্তি প্রকাশ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।


বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মওলানা ভাসানী হলের ফেসবুক গ্রুপে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ৪ তারিখ রাতের ঘটনা উল্লেখ করে বলেন, ঐদিন রাত দশটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নিবিড় এবং ৪৯তম ব্যাচের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী আদর ভাসানী হলের ১১৮ নাম্বার রুমে, রুম খালি করার ব্যাপারে কথা বলতে আসেন।


আরও পড়ুন: রাবিতে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বিষয়ক সেমিনার


ছাত্রলীগের নেতারা যখন রুমে ঢুকেছিল খালিদ সাইফুল্লাহ তখন ফোনে কথা বলার কারণে তারা ঢোকার সাথে সাথেই সে দাঁড়িয়ে সালাম জানাতে পারেনি। বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মী আদর খুব বাড়াবাড়ি করেন। ছাত্রলীগ নেতা নিবিরকে তেল মারার জন্য পিছন থেকে আদর বলে উঠেন, 'ঐ তোর দাঁড়াইতে দেরি হইল কেন? রুমে কে ঢুকসে তুই চিনস? কত ব্যাচ তুই? হলে কয়দিন ধইরা আছস?

শিক্ষার্থী খালিদ সাইফুল্লাহ ভদ্রভাবে পরিচয় দিয়ে উত্তর দিলেও নিবির উচ্চস্বরে বলতে থাকে, 'মুখে মুখে উত্তর দেস। তরে ম্যানার শিখায় নাই? তোর সিনিয়র কে?সিনিয়র রে ডাক। তোর হল কোনটা"? এর পর সে হুমকি দিয়ে বলে, 'কালকে সকালের মধ্যেই হল থেকে চলে যাবি, তোরে যেন এই হলে আর না দেখি, যদি দেখি তাহলে তোর কী ব্যবস্থা নিতে হয় হল প্রশাসনকে দিয়ে, সেটি দেখতে পারবি।'


জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইমরান শাওন আমরাই জাহাঙ্গীরনগর ফেসবুক গ্রুপে লিখেন, ক্যাম্পাস লাইফে কারণ ছাড়াই ছাত্রলীগের হাতে চড়-থাপ্পড় খাইছেন কেউ?


তার পোস্টের প্রতিক্রিয়ায় অনেকে তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। আল হেলাল লিখছেন, আমার হলের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের নাইম, দর্শন বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের সৈকত কারন ছাড়াই গায়ে হাত তুলছিল। সৈকত এখন নেশা করতে করতে আধামরা হয়ে গেছে, সুস্থ থাকলে ওরে একদিন পিডাইতাম, আর নাইম সরি বলছিল, ক্ষমা করে দিছি।


সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী এইস এম আলমগীর লিখেছেন, ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী  নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দ্রুভ! গাঁজা খেয়ে মাতাল হয়ে থাকতো! সেদিন গরণরুমে কয়টা থাপ্পড় মেরেছিলেন ভাইয়া..? আমার মাথা গরম হচ্ছিল না! শরীরে বারবার পানির বোতল ছুড়েছিলেন কেন.?? মাথায় বোতলের পানি ঢেলে খুব মজা নিচ্ছিলেন..? কয়েকদিন পর তো আপনাকেই মেরে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।


সম্রাট লিখেছেন, গেস্টরুমে যেতে দেরি হওয়ার আমাকে সহ আরো দুই জনকে মুখে ২টা করে চড় মারছিল।


কায়সার আহমেদ সাব্বির লিখেন, একটা রিকশা ডাকছিলাম, সেই রিকশায় হুট করেই এক ছাত্রলীগের নেতা উঠে পড়ে, আমি বললাম -ভাই এই মামাকে আমি ডাকছিলাম, আমার ক্লাস শুরু হয়ে গেছে, আপনি কোনদিকে যাবেন? সে বলছিলো-দাঁড়ায় থাক শুয়োরের বাচ্চা।


সাগর রহমান লিখেছেন, ছাত্রলীগের এক ভাই কারন ছারাই থাপ্পড় দিয়ে কানের পর্দা ফাটায়ে দিছে। ৭ বছর পার হয়ে গেল এখোনো ভালো হয়নি।


রওশন আলি লিখেছেন, ফাইনাল পরীক্ষার আগের রাতে পড়তে দেয়নি, হলে ছাত্রলীগের অনুষ্ঠান ছিল, অনুষ্ঠানের ডেকোরেশনের কাজ করাইছে। আর ফাপর, ধমক কানে ধরেনি যারা হলে থেকেছে এমন কাউকেই পাওয়া যাবেনা।


আরও পড়ুন: রাবিতে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষার সুযোগ বিষয়ক সেমিনার


তওফিক আল সাকিব লিখেন, প্রচুর  ফাঁপড় খেয়েছি , এমন নিম্ন  স্তরের বাজে ব্যবহার করতো বলার মতো না, নিয়ম মানতে জীবন তেজপাতা হয়ে গেছিলো, রাতের ঘুম  উড়ে  গেছিলো, ফাঁপড় খাওয়ার  ভয়ে  মানসিক  অবস্থার চরম বিপর্যয়  ঘটেছিলো, চড় থাপ্পড় নিয়মিত রুটিন ছিল, এক ফ্রেন্ডকে মেরেছিলো, মুরগি বানানো, চেয়ার বানানো এসব ছিলো নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা।


এ এম তওহিদ হাসান লিখেছেন, বঙ্গবন্ধু হলের সামনের বটতলা দিয়ে হেটে আসার সময় লোকপ্রশাসন বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কৌশিকের গায়ে সামান্য টাচ লাগায় আমাকে মারতে উদ্যত হয়েছিলো, কোনরকম মান ইজ্জত নিয়ে ফিরে আসছি। আর ভাসানী হলের ৩৬ ব্যাচের আব্দুল মালেক যখন হার্ট এটাক করে মারা গেলেন, তখন রাস্তায় নেমেছিলাম প্রশাসনের বিরুদ্ধে, তখন ছাত্রলীগের বেধড় মার খেয়েছিলাম।


এস এম রিয়াজুল ইসলাম রিদয় লিখেছেন, ক্ষমতার অপব্যবহারই ছাত্রলীগ সহ পূর্ববর্তী সকল ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলোর জনবিচ্ছিন্নতার প্রধান কারণ। সাধারণছাত্র কিংবা বিপক্ষ রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপর দমন পীড়ন করবার নেতিবাচক মানসিকতার কারণে এই দেশের জনসাধারণ সবসময় ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনগুলোকে নিয়ে আতঙ্কিত থেকেছে, কিন্তুু আফসোসের বিষয় এই যে ক্ষমতাহীন থেকে ক্ষমতাসীন হওয়া মাত্র পূর্ববর্তী সকল ছাত্র সংগঠনগুলোর চরিত্রে কোন পরিবর্তন দেখা যায়নি।সাধারণ ছাত্রসমাজের প্রতিনিধি না হয়ে তাদের প্রভু হয়ে উঠবার জঘন্য মানসিকতা আসলে এই দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর শিষ্টাচারহীনতার বহিঃপ্রকাশ মাত্র।


আরএক্স/