উচ্চমূল্যের মালবেরিতে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন সোহেল রানা


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৫ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


উচ্চমূল্যের মালবেরিতে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন সোহেল রানা

নওগাঁর সাপাহার উপজেলার বরেন্দ্র এগ্রো পার্কের উদ্যোক্তা সোহেল রানা। প্রথমবারেই ভালো ফলন দেখে ব্যাণিজ্যিকভাবে এই ফল চাষের পরিকল্পনা করছেন তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, গাছ ভর্তি থোকায় থোকায় ঝুলে রয়েছে মালবেরি। পাতার চেয়ে ফল বেশি ধরে আছে। গাছের পাতা ডিম্বাকার, চমৎকার খাঁজযুক্ত এবং অগ্রভাগ সূঁচাল। আকারে আঙুরের চেয়ে কিছুটা বড় মালবেরি এই ফল। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ফুল আসে এবং মার্চ-এপ্রিলেই ফল পাকে। প্রথম অবস্থায় সবুজ পরে লাল এবং সম্পূর্ণ পাকলে কালো রঙ ধারণ করে। দেখতে খুবই সুন্দর, আকর্ষণীয়। পাকা ফল রসালো এবং টক-মিষ্টি। প্রতিটি গাছ থেকে ৮-১০ কেজি সংগ্রহ করা যায়। এবং চারাও তৈরি করা যায়। এবং খুব সহজেই ছাদে ও এর চাষ সম্ভব। এ ফল চাষে রোগবালাই খুবই কম। কীটনাশকও তেমন লাগে না। উৎপাদন খরচও কম। শুধু জৈব সার দিলে প্রায় সারা বছরই এই ফল পাওয়া যায়। যেহেতু এই মালবেরি আমদানি নির্ভর ফল। তাই বাজারেও মালবেরি এই ফলের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এই ফল ঢাকা শহরে সুপার শপগুলোতে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

এ বিষয়ে কথা হয় উদ্যোক্তা সোহেল রানার সঙ্গে। তিনি জনবাণীকে বলেন, বিদেশি উচ্চমূল্যের পুষ্টিগুণসম্পন্ন মালবেরি এই ফল। এই ফলটি বিদেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয় এবং বাজারজাত করা হয়। বাজারেও এর ব্যাপক এর চাহিদা রয়েছে। নতুন এই ফলটি আমি পরীক্ষামূলকভাবে থাইল্যান্ড, ভারত, তুরস্ক, অস্ট্রেলিয়া ও ইতালি সহ বিভিন্ন দেশ থেকে বিভিন্ন জাতের ৮টি জাত সংগ্রহ করে এই মালবেরি চাষ করেছি। এবং পরীক্ষামূলকভারে প্রতিটা গাছে সাফল্য এসেছে। এবং প্রচুর পরিমাণে ফল ধরেছে। 

সোহেল রানা আরও বলেন, এ ফল চাষে বাণিজ্যিক ভাবে এই মালবেরি ফল চাষের কথা জানিয়ে এই কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, আসছে বছর চারা তৈরি করে বাণিজ্যিকভাবে এই মালবেরি ফল চাষ করবো। এরই মধ্যে চারটি জাত পছন্দ করেছি। চারা তৈরি করে এক বিঘা জমিতে ৪শ গাছ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে এই মালবেরি চাষ করবো। আমার এই ফল দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে এই বিদেশি ফল দেখতে অনেকেই আসছে। এরই মধ্যে নওগাঁয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আমার এই মালবেরি বাগান পরিদর্শন করেছেন। তিনি বাণিজ্যিকভাবে বাগান তৈরি করতে উৎসাহিত করেছেন। তাই আমরা যদি বাণিজ্যিকভাবে এই মালবেরি ফলের চাষ করতে পারি তাহলে স্থানীয় ভাবে পুষ্টির যোগান দেওয়া যাবে এবং স্থানীয় পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে এর বাজারজাত করা যাবে। যেহেতু এই ফলটি আমদানি নির্ভর এবং বাজারে ও এর দাম বেশি। তাই ব্যাণিজ্যিকভাবে এর চাষাবাদ করলে ১ হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করবো। যাতে করে মানুষ এই পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফলটি কিনে খেতে পারে।’

বাগানে মালবেরি ফল দেখতে আসা আব্দুল আলিম বলেন, ‘আমি সোহেল রানার বরেন্দ্র এগ্রো পার্কে বিদেশি নতুন জাতের মালবেরি ফলের চাষ হচ্ছে তাই দেখার জন্য আসছি। ফলটি খুবই আকর্ষণীয়। খেতেও সুস্বাদু। শুনলাম ছাদে নাকি এই গাছ লাগানো যাবে। তাই আমিও সোহেল রানার কাছ থেকে চারা নিয়ে গিয়ে আমার বাসায় টপে  লাগাবো।’

বরেন্দ্র এগ্রো পার্কে ঘুরতে আসা শোসাঃ ময়না খাতুন জনবাণীকে বলেন, ‘বরেন্দ্র এগ্রো পার্কে ঘুরতে এসে দেখলাম এই বিদেশি মালবেরির গাছ লাগানো হয়েছে। গাছগুলোতে প্রচুর পরিমাণে ফল ধরেছে। দেখে খুবই ভালো লাগলো। থোকায় থোকায় ধরে থাকা ফল দেখতেই ভালো লাগছে। একটা ফল খেয়েও দেখলাম, বেশ ভালো। আমি এখান থেকে চারা নিয়ে আমার বাড়িতে টপে  লাগাবো বলে নিয়ত করেছি। আমি সোহেল রানার বরেন্দ্র এগ্রো পার্কে বিদেশি নতুন জাতের মালবেরি ফলের চাষ হচ্ছে তাই দেখার জন্য আসছি। ফলটি খুবই আকর্ষনীয়। খেতেও সুস্বাদু। শুনলাম ছাদে নাকি এই গাছ লাগানো যাবে। তাই আমিও সোহেল রানার কাছ থেকে চারা নিয়ে গিয়ে আমার বাসায় টপে লাগাবো। 

আঃ আহাদ, দর্শনার্থী স্থানীয় মোসাব্বের আহম্মেদ বলেন, ‘সোহেল ভাইয়ের বাগানে মালবেরি এই ফলের গাছটি দেখে খুবই অবাক হয়েছি। এই ফলটি আমাদের এলাকায় আগে কখনও দেখি নাই বা চাষাবাদ করা হয় নাই। সোহেল ভাইয়ের কাছ থেকে শুনলাম বাজারে নাকি এর চাহিদা অনেক। এবং দামও ভালো। তাই আমি মনে করি কৃষকরা যদি মালবেরি এই ফলটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে তাহলে তারা ব্যাপকভাবে লাভবান হতে পারবে।’ 

কৃষক জয়নাল বলেন, ‘আমার বাড়ি জয়পুরহাটে। সোহেল ভাইয়ের এই বাগান ঘুরতে এসে দেখি মালবেরি গাছ। কয়েকটি ফল খেলাম, খুব সুন্দর লাগলো। এখান থেকে আমি মালবেরি কয়েকটি চারা কিনলাম। লাগানোর পর ভালো ফল ধরলে, বেশি পরিমাণ জমিতে এই মালবেরি চাষ করবো।’

সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাসরুর জনবাণীকে জানান, আমাদের দেশে মালবেরি এখনো বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়নি। তাই এখনও এই ফল সব এলাকায় সেইভাবে পাওয়া যায় না। তবে রাজধানীর সুপার শপগুলোতে ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকায় এই ফল বিক্রি হয়। চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে এটি চাষাবাদ করে লাভবান হতে পারবেন আমাদের দেশে মালবেরি এখনো বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ শুরু হয়নি। তাই এখনও এই ফল সব এলাকায় সেইভাবে পাওয়া যায় না। তবে রাজধানীর সুপার শপগুলোতে ১৫শ থেকে ২ হাজার টাকায় এই ফল বিক্রি হয়। চাষিরা বাণিজ্যিকভাবে এটি চাষাবাদ করে লাভবান হতে পারবেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পরিচালক কৃষিবিদ শামছুল ওয়াদুদ জনবাণীকে বলেন, সোহেল রানা একজন সফল বাগানি। দীর্ঘদিন থেকেই বিভিন্ন ফল, ফুল, আম সহ নানা ধরনের বাগান আছে তার। সম্প্রতি তিনি ৮ রকম জাতের মালবেরি গাছ পরীক্ষামূলকভাবে লাগিয়েছেন। বর্তমানে গাছ থেকে ফল তোলার উপযোগী হয়েছে। প্রতিটি গাছে থেকে প্রায় ৮-১০ কেজির মত ফল পাওয়া যাবে। এখানকার মাটিও মালবেরি চাষের উপযোগী। এছাড়া বাড়ির ছাদে টবেও এর চাষ করা যাবে। এই প্রথম সোহেল রানা বেশি সংখ্যক মালবেরি গাছ লাগিয়েছেন। সাপাহারে  মালবেরি চাষ যেন আগামী বৃদ্ধি পায় সে জন্য চাষিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

এসএ/