সীতাকুন্ডে হেনাস্তার শিকার মুক্তিযোদ্ধে নির্যাতিত নারী


Janobani

উপজেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:০৭ অপরাহ্ন, ২২শে ডিসেম্বর ২০২৪


সীতাকুন্ডে হেনাস্তার শিকার মুক্তিযোদ্ধে নির্যাতিত নারী
ছবি নির্যাতিত নারী

চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড স্বাধীনতা যুদ্ধেও অন্যতম গুরুত্বপূর্ন স্থান। শুভপুর ব্রীজে আক্রমনের মাধ্যমে হানাদার বাহিনী চট্টগ্রামে প্রবেশ করে। এ আক্রমনে গুরুত্বপূর্ন স্থান মহন্তর হাটে গুলা বর্ষনে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারায়। ধারবাহিক আন্দোলন শেষে কুমিরায় মুক্তি ও হানাদারদারের মুখোমুখী যুদ্ধে পিছু হাটে হানাদার বাহিনী। 


আরও পড়ুন: সীতাকুন্ডের টমেটোর খ্যাতি ছড়িয়েছে দেশ-বিদেশে


দুই বাহিনীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অনেক মুক্তিসেনা শহীদ হন, ঘর বাড়ি হারিয়ে নিস্ব হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। হত্যা ও নির্যাতনের বলি হয়ে হানাদার বাহিনীর হাতে বহু মা-বোন সতিত্ব হারাতে হয়। দেশ হানাদার মুক্ত হওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধাদের বীরের খেতাবে ভূষিত হয়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা রাষ্ট্রিয় খেতাব পেলেও বিরঙ্গনা খেতাব বঞ্চিত হয়েছেন সম্ভ্রম হারা মা-বোনরা। 


লোক-লজ্জায় মুখ বুঝে ঘুমরে ঘুমেও মুক্তিযোদ্ধে সম্ভ্রমহারারা। তবে স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্নত্যাগের কথা জনসম্মুখে ছড়িয়ে দিতে নড়েচড়ে উঠেছেন সৈয়দপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা সখিনা খাতুন। জীবনের শেষ সময়ে বীরত্বের খেতাব পেতে লড়ে যাচ্ছেন তিনি।


তিনি বলেন,‘ মুক্তিযোদ্ধের সময়কালে হানাদার বাহিনীর সদস্যরা অস্থ্রের ভয় দেখিয়ে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। মানুষরুপী হায়নাগুলো টেনে হেঁছড়ে পুরো শারীরিক ক্ষত-বিক্ষত করে। ক্যাম্পে নেয়ার ঘটনা আজও মানুষের মুখে মুখে প্রচারিত। এ কারনে মানুষের কাছে অবহেলার শিকার হতে হয়েছে। অথচ স্বাধীনতার জন্য ত্যাগ দিয়েও কোনো সন্মান পাওয়া যাইনি। শেষ পর্যন্ত স্বীকৃতি আদায়ে বীরঙ্গনা খেতাব পাওয়ার আশায় সমাজ সেবা কার্যালয়ে আবেদন দিয়েছি। অথছ আবেদনের প্রেক্ষিতে যাচাই-বাছাইয়ের পরিবর্তে সমাজ সেবা কর্মকর্তার হাতে হেনস্তা হয়েছি।



এদিকে,‘ বীরঙ্গনা খেতাব পাওয়ার আবেদনের কার্যকর পদক্ষেপ না নিয়ে সমাজ সেবা কার্যালয়ে ফাইলটি ফেলে রাখা হয়। দীর্ঘ ৪ বছর ধরে যাচাই বাছাই না করায় বীরঙ্গনা খেতাব হতে বঞ্চিত বয়োবৃদ্ধ সখিনা খাতুন। স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সুপারিশ থাকা সত্ত্বে আবেদনের কার্যকারিতা নেয়া হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সখিনা বেগমের সন্তানরা ও মুক্তিযোদ্ধারা। 



তার সন্তানেরা বলেন,‘স্বাধীন বাংলা অর্জনের পেছনে মা’র ত্যাগ অনেক বড় ছিল। তারপরও স্বাধীনতার ৫৫ বছর পার বীরঙ্গনার সন্মান পেতে আরেকটি যুদ্ধ করতে হচ্ছে। মানসিক শান্তির আশায় বীরঙ্গনার খেতাব পেতে সমাজ সেবা কার্যালয় আবেদন দেন। আবেদন অনুসারে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ না করে কুরুচীপূর্ন ভাষায় মাকে অপমান করেছে সমাজ সেবা কর্মকর্তা।’


আরও পড়ুন: সীতাকুন্ডে ৭ মামলার আসামী শীর্ষ সন্ত্রাসী পারভেজ গ্রেফতার


সখিনা বেগমকে বীরঙ্গনা খেতাবে ভূষিত করার সম্মতি দিতে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধের সম্মতি রয়েছে বলে একাধিক মুক্তিযোদ্ধা জানান। তারপরও নানা অযুহাতে রাজনৈতিক ইস্যূতে আবেদন ধামাচাপা দিয়ে রাখে। তবে কমিটির নির্দেশ না পাওয়ায় বীরঙ্গনা নিয়ে যাচাই-বাছাই করা হয়নি বলে জানান সমাজ সেবা কর্মকর্তা লুৎফুর নেচা বেগম। আর এভাবে দায়ীত্বে অবহেলার ফাঁদে পড়ে বীরঙ্গনা স্বীকতি পাচ্ছে না সখিনা খাতুন।


এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি ও নির্বাহী কর্মকর্তা কে এম রফিকুল ইসলাম বলেন,‘ বীরঙ্গনার স্বীকৃতির আবেদনের বিষয়ে জানা ছিল না। পরবর্তীতে বিভিন্ন মাধ্যমে জানার পর দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে। কি কারনে হেনাস্তার শিকার হয়েছেন তাও তদ্বন্ত হবে বলে জানান তিনি।



এসডি/