প্রেমের সম্পর্ক থেকে অন্তঃসত্ত্বা, বিয়েতে রাজি না হওয়ায় কিশোরীর আত্মহত্যা
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৫:০৯ অপরাহ্ন, ৩রা জানুয়ারী ২০২৫
মাদারীপুরের শিবচরে প্রতিবেশী কিশোরীর সাথে প্রথমে প্রেম। এরপর একাধিক বার শারীরিক সম্পর্ক থেকে অন্তঃসত্ত্বা। পরে বিয়ে করতে অস্বীকার ওই প্রেমিকের। এরপর সালিশ বৈঠকে সমাধান না হওয়ায় লোক-লজ্জায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে হাফিজা আক্তার(১৫) নামের এক কিশোরী।
বৃহস্পতিবার(২ জানুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে জেলার শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের বাবলাতলা কাইমুদ্দিন শিকদার কান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
আরও পড়ুন: শিবচরে পাচঁ শতাধিক রোগীকে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা
এই ঘটনায় প্রধান সালিশীকারী ইউপি সদস্য ও অভিযুক্তসহ ১০ জনের নামে থানায় মামলা করেছে মেয়েটির পরিবার।
জানা গেছে, দেড় বছর আগে শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের বাবলাতলা এলাকার চাঁনমিয়া মোল্লার মেয়ে ও বাবলাতলা জুনিয়র স্কুলের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী হাফিজা আক্তারের (১৫) সাথে প্রেম হয় প্রতিবেশী আবুল কালাম সরদারের বড় ছেলে পিয়ার সরদারের (১৯)। দুজনের শারীরিক সম্পর্ক হলে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। পরে পিয়ার সরদার বিয়ের আশ্বাস দিলে সম্প্রতি ওই শিক্ষার্থীকে গর্ভপাতও করানো হয়। এরপরই পিয়ার শুরু করে টালবাহানা।
বিষয়টি নিয়ে পিয়ারের পরিবারকে জানালে ৭ম শ্রেণির স্কুলছাত্রীকে বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। পরে বেশ কয়েকবার মেয়েটির পরিবার মীমাংসার চেষ্টা চালায়। অবশেষে গত মঙ্গলবার দ্বিতীয়বারের মতো বিকেলে প্রতিবেশী বাড়ির উঠানে আয়োজন করা হয় সালিশবৈঠকের। এতে দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোতাহার হোসেন, স্থানীয় মাদবর উজ্জল খান, তাজেল মাদবর, জাহাঙ্গীর খাঁসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে অভিযুক্ত পিয়ার সরদার বিদেশ যাবার প্রস্তুতি নেয়ার কারনে ঘটনা অন্যখাতে নিতে মেয়েটির সাথে পিয়ারের ছোটভাই আলীর সাথে বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সালিশকারীরা। বিয়ে না হলে অভিযুক্তের ১০ লাখ টাকা জরিমানার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পরে শুরু হয় হট্টোগোল। এরপর সেখান থেকে চলে যান সালিশকারীরা। এই ঘটনায় অপমানে ও ধর্ষণের ন্যায় বিচার না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গলায় রশিদ দিয়ে আত্মহত্যা করে মেয়েটি।
শিবচর থানা সূত্রে জানা গেছে,এই ঘটনায় মেয়েটির বড়ভাই নাসির মোল্লা বাদী হয়ে শিবচর থানায় প্রধান সালিশীকারী ইউপি সদস্য ও অভিযুক্ত পিয়ারসহ ১০ জনের নামে মামলা দায়ের করেছে। ঘটনার পর এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে অভিযুক্ত পিয়ার হোসেন। এদিকে শুক্রবার সকালে জেলা সদর হাসপাতালে নিহতের মরদেহ ময়না তদন্ত করা হয়েছে।
স্কুলছাত্রীর ছোট ভাই সজিব মোল্লা বলেন, 'দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোতাহার হোসেন, স্থানীয় মাদবর উজ্জল খান, তাজেল মাদবর, জাহাঙ্গীর খাঁসহ অনেকেই উপস্থিত থেকে এই সালিশবৈঠকের আয়োজন করে। সালিশকারীরা টাকা-পয়সা খেয়ে তাদের মত করে সিদ্ধান্ত নেয়। এটা আমরা ও আমার বোন মেনে নিতে পারিনি। তাই লজ্জায় আত্মহত্যা করেছে আমার বোন। আমরা এই ঘটনার সাথে জড়িত সবার বিচার চাই।'
শিবচরের দত্তপাড়া ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোতাহার হোসেন বেপারী বলেন, আমরা ৭/৮ জন সালিশীতে অংশ নেই। দুইপক্ষের কথা শুনে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করি। কিন্তু মেয়েটি বলছে পিয়ারের সাথে সম্পর্ক ছিল, কিন্তু পিয়ারের ছোটভাই আলী দাবি করে তার সাথে মেয়েটির প্রেম ছিল। এটি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হলে আর সমাধান হয়নি। পরে সবাই যার যার মতো করে সালিশী থেকে চলে যাই।'
আরও পড়ুন: বসুন্ধরা আই হসপিটালের সহযোগিতায় চিকিৎসা পেলেন শিবচরের ৫ শতাধিক মানুষ
আরেক সালিশীকারী উজ্জ্বল খান বলেন,'আমরা সালিশীতে সব কিছু শুনেছি। এখানে মেয়েটির সাথে পিয়ার আর ছোট ভাই আলী দুজনের সম্পর্কের কথা উঠলে বিষয়টি জটিলরূপ নেয়। তবে মেয়েটি পিয়ারের সাথে সম্পর্কের কথা জোর দিয়ে জানায়। কোন সিদ্ধান্তে যাওয়ার আগে আমরা একটু সময় নিই। এজন্য কোন সিদ্ধান্ত না দিয়েই ওই দিনের মতো সালিশ বৈঠক শেষ করা হয়। কিন্তু সন্ধ্যার পর শুনি মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে।'
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মো. মোকতার হোসেন জানান, 'স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামীদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। আর নিহতের ময়না তদন্তও সম্পন্ন হয়েছে।'
আরএক্স/