দৈনিক লাখ লাখ টাকার চাঁদাবাজি
অবৈধভাবে বালু-পাথর উত্তোলনে বিলিন হচ্ছে প্রকৃতি কন্যা জাফলং
উপজেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৩:০০ অপরাহ্ন, ৬ই জানুয়ারী ২০২৫
তানজিল হোসেন: সিলেটের ভারত সীমান্তবর্তী গোয়াইনঘাট উপজেলা পর্যটনে ভরপুর ও প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশ ঘেরা এ জনপদ প্রকৃতি কন্যা জাফলংয়ের প্রাকৃতিক দৃশ্যপট দেখতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিনিয়ত ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসু হাজারও মানুষ। কিন্তু পাথর ও বালখেকুদের কারণে জাফলং হারাচ্ছে তার অপরূপ সৌন্দর্য। পাথর ও বালু লুটপাটের কারণে বিলিন হচ্ছে জাফলংয়ের পরিবেশ।
আরও পড়ুন: গোয়াইনঘাটে প্রশাসনের উদ্যোগে ফুটবল টুর্নামেন্টের শুভ উদ্বোধন
এদিকে পর্যটনকেন্দ্রের পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর দীর্ঘদিন থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ রেখেছে। আর এই বন্ধের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিচ্ছে একটি প্রভাবশালী পাথরখেকু সিন্ডিকেট। তারা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে জাফলং ইসিএভুক্ত এলাকার স্তুপ স্তুপ করে প্রাকৃতিকভাবে সাজানো পাথরগুলো অবৈধভাবে উত্তোলন করে লুটপাটে নেমে পড়েছে । এসব লুটপাটকারী ও চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট চক্রের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ও ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশের পরও রহস্যজনক কারণে এদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। ফলে এরা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে।
সবশেষ জাফলংয়ের নয়াবস্তি এলাকার গ্রাম পুলিশ ও শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. ইউসুফ আলীর জমি দখল নিয়ে ঘটেছে লঙ্কা কাণ্ড। রাতভর অস্ত্রের মহড়া দেখেছে জাফলংবাসী। এ ঘটনায় জাফলংয়ে পাথরখেকো লুটপাটকারী শাহ আলম স্বপন ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন পূর্ব জাফলং ইউনিয়নের মৃত ইব্রাহিম আলীর ছেলে মো. ইউসুফ আলী। অভিযোগ দায়েরের ১২দিনেরও বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত অভিযোগটি রেকর্ড করেনি গোয়াইনঘাট থানা পুলিশ।
এজহার সূত্রে জানা যায়, মামলার আসামীগণ ইউসুফ আলীর মালিকানাধীন বালুরচর দখল করতে যান। বাদী এতে বাঁধা দিলে আসামীরা বাদী ও তার আত্মীয় স্বজনের উপর হামলা করেন। এ ঘটনার পর দিন দিবাগত রাত ২টার দিকে স্বপন বাহিনী পুনরায় অস্ত্রের মহড়া দিয়ে বাদি পক্ষের উপর সশস্ত্র হামলা করে।
শুধু এই একটি ঘটনাই নয়, স্বপন বাহিনী প্রতিদিনই জাফলং এলাকায় এই নৈরাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। ইউসুফ আলীর মামলা রেকর্ড না হওয়ার নেপথ্যে মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছিলো লুটপাটের মূলহোতা শাহ আলম স্বপনকে। সেই সুবাদে পুলিশ ভয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করছে না বলে দাবি করেছেন মামলার বাদি। এই মামলায় অন্যান্য আসামি হলেন উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মিজানুর রহমান হেলোয়ার, যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক ইউসুফ আহমদ, পূর্ব জাফলং ইউনিয়ন ছাত্রদলের বহিস্কৃত সভাপতি আজির উদ্দিন সহ একদল সন্ত্রাসী।
জাফলং বল্লাঘাট বল্লাপুঞ্জি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তর সীমানার পাশে পরিবেশ অধিদপ্তরের আশ্বাসে ফেলুডার দিয়ে গর্ত করে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় প্রভাবশালী বহিস্কৃত বিএনপি নেতা শাহ আলম স্বপন চক্রের বিরুদ্ধে। এই চক্রের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করা সাহস পায়নি। জোর পূর্বক নিরিহ মানুষের জমি থেকে যন্ত্রদানব ব্যবহার করে উত্তোলন করছেন পাথর। এতে পরিবেশের শাপাপাশি হারিয়ে যাচ্ছে মানুষের ঘর-বাড়ি ও সরকারি স্থাপনা। এসব নিরিহদের জায়গা থেকে পাথর উত্তোলন ও পাথর বোঝাই গাড়ি থেকে স্বপন বাহিনী ২৫শ থেকে ৩ হাজার টাকা আদায় করছেন এমনই অভিযোগ স্থানীয়দের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বল্লাপুঞ্জি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর ঘেষা মরিয়ম রেস্টুরেন্টের পূর্ব পাশে স্বপনের নেতৃত্বে ফেলুডার দিয়ে মাটি কেটে বড় বড় গর্ত করে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করছে স্থানীয় এলাকার আব্দুর রহিম মাস্টারের দুই ছেলে মানিক মিয়া ও ইসরাত মিয়া। পাথর উত্তোলনের ফলে ঝুঁকিতে রয়েছে বল্লাঘাট পর্যটনকেন্দ্রের দোকানপাট, বল্লাপুঞ্জি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকা।
এদিকে অবৈধ পাথর উত্তোলনের বিষয়ে মানিক মিয়া বলেন, ‘আমাদের রেকডীয় জমি থেকে পাথর উত্তোলন করছি। পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকের সঙ্গে আমাদের সমঝোতা হয়েছে। ওনি আশ্বাস দিয়েছেন তাই পাথর উত্তোলন করছি।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে শাহ আলম স্বপন ও রফিকুল ইসলাম শাহপরানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ হলে, তারা তাদের সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: গোয়াইনঘাটে অবৈধ বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধে টাস্কফোর্সের অভিযান
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক বদরুল হুদা জানান, তিনি অবৈধ পাথর উত্তোলনের জন্য কাউকে আশ্বাস দেননি এবং এ বিষয়ে কারও সঙ্গে সমবোঝতাও হয়নি। অবৈধ পাথর উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে পরিবেশ ধ্বংসের অভিযোগে মামলার প্রস্তুতি চলমান রয়েছে।
গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমেদ বলেন, অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এসডি/