ফুলবাড়িয়ায় হলুদের বাম্পার ফলন


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০২:৩১ অপরাহ্ন, ১৩ই জানুয়ারী ২০২৫


ফুলবাড়িয়ায় হলুদের বাম্পার ফলন
ছবি: প্রতিনিধি

কাঁচা হলুদে সমৃদ্ধ ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চল। লাল মাটি অধ্যুষিত এই পাহাড়ি অঞ্চলের চারটি ইউনিয়নে অধিক পরিমাণ হলুদ উৎপাদন করে চাষিরা যুগ যুগ ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাহিদা পূরণে অবদান রেখে চলছে।


আরও পড়ুন: ফুলবাড়িয়ার ইউএনও পিতার মৃত্যুতে জেলা প্রশাসকের শোক


তবে মসলা জাতীয় এই ফসল চাষে নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। ফলে সম্ভাবনাময় এই ফসলটি কৃষি প্রণোদনার আওতায় আনা হলে উৎপাদন বাড়িয়ে দেশে মসলার ঘাটতি পূরণে অবদান রাখা সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট চাষিরা ও কৃষি কর্মকর্তারা।


সম্প্রতি ঘুরে দেখা যায়, টাঙ্গাইলের মধুপুর অঞ্চল ঘেঁষা ময়মনসিংহ জেলার সীমান্তবর্তী এই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ১ নং নাওগাও  ইউনিয়ন এছাড়াও বাক্তা,রাঙ্গামাটিয়া ও এনায়েতপুর ইউনিয়নের কৃষি সমৃদ্ধ লাল মাটির এই এলাকাটিতে চাষাবাদের বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে হলুদের আবাদ।


এই এলাকার প্রায় সবাই কম-বেশি হলুদ চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফলে প্রতি বছর এই উপজেলায় ৮ থেকে ১০ শতাধিক হেক্টর জমিতে হলুদ উৎপাদন হয় ৫থেকে ৬ হাজার টন।যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের ঘাটতি পূরণে অবদান রেখে আসছে।


সফল হলুদ চাষি আ.আজিজ চাষি বলেন, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ৪ একর জমিতে হলুদ আবাদ করেছি আর দশ একর হলুদ ক্ষেত কিনেছি, এই এলাকার মাটির রস ও আবহাওয়া হলুদ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ফলে এলাকার বেশির ভাগ কৃষক হলুদ চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এতে উৎপাদিত হলুদ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বাজারজাত করা হয়। কিন্তু মসলা জাতীয় লাভজনক এই ফসলটি চাষে সরকারি কোনো পৃষ্ঠপোষকতা নেই। এই অবস্থায় অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি হলুদ চাষটিও কৃষি প্রণোদনার আওতায় আনা হলে উৎপাদনের আগ্রহ আরো বাড়বে। তখন আর ভারত বা বার্মা থেকে হলুদ আমদানির প্রয়োজন হবে না।    


চলতি বছরে হলুদ চাষে আগের চেয়ে উৎপাদন খরচ অনেক গুণ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষক তোফায়েল আহমেদ সহ আরও অনেকেই। তারা বলেন, এই এলাকার বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে বনবিভাগের জমি। ফলে ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির পাশাপাশি বনের জমি লিজ নিয়ে হলুদ চাষ করতে হয়। এতে জমি লিজ খরচের সঙ্গে সার, বীজ ও শ্রমিক খরচ এখন অনেক বেশি। 


কৃষকেরা জানায়, হলুদ বছরি ফসল হিসেবে পরিচিত। এটি আবাদে পর পরিপক্ব হতে সময় লাগে প্রায় ১০ মাস। এর মধ্যে বছরের চৈত্র ও জ্যৈষ্ঠ মাসে হলুদের কন্দ জমিতে রোপণ করার পর পৌষ থেকে ফাল্গুন মাসব্যাপী শ্রমিক দিয়ে জমি থেকে মাটি খুঁড়ে হলুদ তোলা হয়। এরপর তা বাছাই করে গরম পানিতে সিদ্ধ করে শুকানো হয় রোদে। পরে শুকনো হলুদ মেশিনে পরিষ্কার ও প্রক্রিয়াজাত করে আর্দ্রতা বুঝে তা বস্তায় সংরক্ষণ করে বাজারে তোলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় খাটুনি (পরিশ্রম) অনেক বলেও জানান তারা।  


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জমি থেকে হলুদ সংগ্রহে সম্পৃক্ত শ্রমিকদের মধ্যে বেশির ভাগ নারী। তবে এটি বাছাই ও পরিষ্কার পক্রিয়ায় পুরুষ শ্রমিকেরা বেশি জড়িত। তবে পারিশ্রমিক দিক থেকে পুরুষদের চেয়ে নারীদের মজুরি অর্ধেক বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্ট নারী শ্রমিকেরা।  


চাষিরা আরও জানান, জেলার ফুলবাড়ীয়া ও পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলাটি হলুদের রাজ্য বলে সারাদেশে সমধিক পরিচিত। এতে তিন ধরনের হলুদ চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে পাটনাই, মালা ও বীনা-১ জাতের হলুদ রয়েছে। তবে বাজারে চাহিদার দিক থেকে পাটনাই ও মালা জাতের কদর বেশি।  


উপজেলা কৃষি বিভাগের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নিকলু চন্দ্র ধর জানান, চলতি এ বছরে হলুদের আবাদ ভালো হয়েছে।

আমরা কৃষকদের কাছে গিয়ে সঠিক পরামর্শ দিয়ে থাকি। হলুদ খেতে জেন কোন রোগ বালাই না হয়। আমরা কৃষি মাঠে দেখা শোনা করে থাকি।


ফুলবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, হলুদ চাষে ফুলবাড়িয়া উপজেলার ব্যাপক খ্যাতি দেশজুড়ে। তবে উপজেলার লাল মাটি অধ্যুষিত পাহাড়ি অঞ্চল রাঙ্গামাটিয়া, এনায়েতপুর, বাক্তা ও নাওগাঁও ইউনিয়নে হলুদের চাষ বেশি হয়। এটি লাভজনক ফসল এবং বাজারের এর চাহিদা অনেক। চলতি বছরে এই উপজেলা থেকে প্রায় ৪৫ কোটি টাকা হলুদ বাজারে বিক্রি হবে। উপজেলায় হলুদ ৬৫০হেক্টর, মোট উৎপাদন ১০৯৮৫ মেট্রিক টন।  


 আরও পড়ুন: ফুলবাড়িয়ায় আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসের র‌্যালি


তবে মাঠ ফসলে (ধান, গম, ভুট্টা) কৃষি প্রণোদনার আওতায় নেই মসলা জাতীয় এ ফসলটি। ফলে নতুন জাত সম্প্রসারণে কৃষি প্রদর্শনী এবং পরামর্শ ছাড়া হলুদ চাষিদের জন্য তেমন কিছু করার নেই কৃষি বিভাগের। তাই হলুদ ফসলটি কৃষি প্রণোদনার আওতায় আনা হলে চাষে আগ্রহ বাড়বে কৃষকদের। 


এসডি/