১০ বছর বয়সী নাগরিকদেরকেও স্মার্ট এনআইডি কার্ড দেওয়ার সুপারিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:১৬ অপরাহ্ন, ১৬ই জানুয়ারী ২০২৫
আইডিইএ প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে ১০ বছর অথবা তদূর্ধ্ব বয়সী নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেওয়ার প্রস্তাব তৈরি করেছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন। সেইসঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে নেওয়ার আইন জরুরি ভিত্তিতে বাতিল করতেও প্রস্তাব দিয়েছে কমিশন।
আরও পড়ুন: মানসম্মত প্রাণিজ আমিষ নিশ্চিতকরণে কাজ করতে হবে: ফরিদা আখতার
প্রধান উপদেষ্টার কাছে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের সুপারিশ জমা দিয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো:
জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবস্থাপনা
১। জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন ২০২৩ এর মাধ্যমে এনআইডি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে তা বাতিল করা।
২। জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০১০ এ প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে পুনর্বহাল করা, যাতে এটি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রস্তাবিত আধুনিক আইডেন্টিটি সিস্টেমকে আইনি ভিত্তি দিতে পারে। যার মাধ্যমে প্রতিটি নাগরিক তার আইডেন্টিটি তথ্যের মালিকানা এবং তার সব আইডেন্টিটি তথ্যের উপরে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেতে পারেন।
৩। জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত বিদ্যমান স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর (এসওপি) পর্যালোচনা করে সকল অব্যবস্থাপনা, হয়রানি ও অনিয়মের অবসান ঘটিয়ে এ কার্যক্রমকে জনবান্ধব করা।
৪। ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত সব নাগরিককে হালনাগাদ ছবিযুক্ত এনআইডি স্মার্টকার্ড প্রদানের লক্ষ্যে এখনই প্রয়োজনীয় কার্যক্রম শুরু করা, যাতে ভোটার শনাক্তকরণে এটি ব্যবহার করা যায়।
৫। বাংলাদেশের প্রায় সকল গণমাধ্যমে লাখ লাখ বাংলাদেশি নাগরিকের এনআইডি তথ্য ফাঁস হওয়া এবং বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ম্যাসেজিং প্ল্যাটফর্ম থেকে নামমাত্র মূল্যে বা এমনকি বিনামূল্যে এই তথ্যগুলো ফাঁসের অভিযোগের প্রেক্ষিতে, এই দাবিগুলোর সত্যতা সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ এবং এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁসের অন্তর্নিহিত কারণ, প্রভাব এবং পরিণতি নির্ধারণ করতে স্বাধীন তদন্তের ব্যবস্থা করা। দোষী ব্যক্তিদের প্রচলিত আইনে শাস্তির ব্যবস্থা করা।
৬। বর্তমানের ১৬ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী বাংলাদেশি নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানের পাশাপাশি ভবিষ্যতে ১০ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী শিশুদের জন্য পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম গ্রহণ করা।
৭। সারাদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে এনআইডি সংক্রান্ত সব সেবা সুচারুরূপে সম্পন্নের নিমিত্তে দেশের বৃহত্তম জাতীয় তথ্য ভাণ্ডারের নিরবচ্ছিন্ন অপারেশন, আপগ্রেডেশন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিবর্তে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংস্থা নামে একটি স্বতন্ত্র স্বাধীন সংবিধিবদ্ধ সংস্থা গঠন করা, যার দায়িত্ব হবে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রণয়ন, সংরক্ষণ ও বিতরণ। এই সংস্থার অর্গানোগ্রাম ও জনবল কাঠামো নির্ণয়ে একটি আন্তর্জাতিক অডিট ফার্মের মাধ্যমে নিরীক্ষণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
৮। বর্তমানে পরিচালিত সম্পূর্ণ এনআইডি সিস্টেমকে তথা সংশ্লিষ্ট ডাটা সেন্টার, হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার/ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, ডাটাবেজ ক্রেডেনশিয়ালস্ (Credentials) ভেন্ডর প্রতিষ্ঠান থেকে প্রস্তাবিত জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংস্থার নিকট হস্তান্তরের ব্যবস্থা করা। প্রস্তাবিত আধুনিক আইডেন্টিটি সিস্টেমের জন্য একই ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
আইডেন্টিটি এবং আইডেন্টিটি সিস্টেম:
১.জাতীয় পরিচয়পত্রকে ডিজিটাল (ভার্চুয়াল) ভার্সনে রূপান্তরের ব্যবস্থা করা এবং Self-sovereign Identity (SSI)-ভিত্তিক সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করা।
২.SSI-ভিত্তিক সিস্টেম বাস্তবায়ন ও আইনি কাঠামো প্রতিষ্ঠা, যাতে সরকারি এবং বেসরকারি পরিষেবাগুলো নিরাপদভাবে রূপান্তরিত হতে পারে।
৩.স্মার্টফোন এবং ফিচার ফোনের জন্য SSI ওয়ালেট ডেভেলপ করা এবং এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত নিরাপত্তা নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্বারা অডিট করা।
আরও পড়ুন: ৪০ শতাংশ ভোট না পড়লে আবারও নির্বাচনের প্রস্তাব
বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত নিরাপত্তা নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্বারা অডিট করা।
আরও পড়ুন:
৪.জাতীয় পরিচয় ব্যবস্থার সুরক্ষা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে একটি প্রাইভেসি আইন প্রণয়ন করা, যা ভবিষ্যতে ব্যক্তিগত তথ্য অপব্যবহার রোধ করবে।
কমিশনের এই সুপারিশগুলো নিয়ে দলের সঙ্গে আলোচনা পরবর্তী সংস্কার কার্যক্রম শুরু করবে অন্তর্বর্তী সরকার।
এসডি/