নতুন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কঠোর দুদক


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ১২:৫৩ অপরাহ্ন, ৩রা ফেব্রুয়ারি ২০২৫


নতুন চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে কঠোর দুদক
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া।

# দুর্নীতি ঠেকাতে গতি বাড়ছে তদন্তে 

# দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু 

# দুদকের জালে ধরা পড়ছে রাঘববোয়ালরা

# কোনো অপরাধী  ছাড় পাবে না

  - ড. মো. আব্দুল মোমেন, চেয়ারম্যান, দুদক  


ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। থেমে ছিল চলমান স্বাভাবিক কার্যক্রমও। নতুন চেয়ারম্যান ড. মো. আব্দুল মোমেন যোগদানের পরেই সক্রিয় হয়েছে সংস্থাটি। ইতোমধ্যে আইনের যথাযথ ব্যবহার করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে কমিশন। দুর্নীতি নিশ্চিহ্ন করতে নিচ্ছেন নানা পদক্ষেপ। শুরু করেছে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান।


সূত্র বলছে, নতুন কমিশন গঠনের পরেই প্রায় তিন শতাধিক দুর্নীতিবাজরা দুদকের জালে। প্রতিনিয়তই বাড়ছে দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তের গতি। বিগত সময়ে অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের পাহাড় গড়া ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকা ব্যক্তিদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দুদক। দুদক কর্মকর্তাদের ভাষ্য মতে, বিগত ১৫ বছর দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে নাই। অনেকে বলছে স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের কাছে তারা জিম্মি ছিলেন। কোনো কাজ করতে পারেননি। তাদের ইচ্ছায় কাজ করতে হয়েছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে তাদের সাথে। এখন তাদের চাওয়া, আমরা বিশ্বাস করি এই অন্তর্র্বতী সরকার আমাদের কাজ করার সুযোগ দেবেন। আমরা চাই দুর্নীতি মুক্ত দেশ হোক। আমাদের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং কমিশনার সবাই আমাদের সুষ্ঠুভাবে কাজ করে যেতে সাহস দিচ্ছেন। 


দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গঠন হয়েছিল ২০০৪ সালে। দুর্নীতি দমনে গতিশীলতা আনতে ‘দুর্নীতি দমন ব্যুরো’কে বিলুপ্ত করে কমিশন গঠন করে সরকার। সাংগঠনিক কাঠামোতে পরিবর্তন আনা হলেও দুর্নীতি দমনে তেমন একটা গতি পায়নি সংস্থাটি। হাসিনা সরকারের ইচ্ছায় পরিচালিত হতো কমিশন। সেই ধারা পাল্টে দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে নতুন কমিশন। 


সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নতুন চেয়ারম্যান যোগদানের পরেই প্রতিদিন চলছে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান। আর দুদকের জালে ধরা পড়ছে রাঘববোয়াল ও কালো টাকার মালিকরা। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে কারিকারি টাকা।   


অন্তর্বতী সরকারের সময়ে অনুসন্ধানগুলোর সঙ্গে যুক্ত করে এক হাজারের অধিক ব্যক্তিকে অনুসন্ধানের আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। যাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন, অর্থ পাচার, সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ, ঘুষগ্রহণ, সরকারি প্রকল্পে কারসাজিসহ দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয় পর্যন্ত যারা ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে অনিয়ম করেছেন দুর্নীতি করেছেন তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।


সচ্ছ ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্যে দুদক চেয়ারম্যান তার সহযোগীদের নিয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে নিজের সম্পদ বিবরণী প্রকাশ করেছেন স্বেচ্ছায়। চেয়ারম্যান বলেছেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি যে প্রধানমন্ত্রীও পালিয়েছেন একই সঙ্গে বায়তুল মোকাররমের খতিবও পালিয়েছেন। রাষ্ট্রের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। এই বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, দুদক তার নিজস্ব গতিতে চলবে। এই স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের এই ১৫ বছর সঠিকভাবে কেউই কাজ করতে পারেনি। আমরা তা করে দেখাব। আমি যদি কোনো ভুল করি তা-ও দেখবেন। কোনো অপরাধী ছাড় পাবে না। বিগত বছরগুলো নিয়ে নানা সমালোচনা আছে। আমি চাই নতুন কিছু করে দেখাতে। দুদক যার বিরুদ্ধে মামলা করবে আশা করি তার সঠিক বিচার হবে।


কুমিল্লা গণশুনানি অনুষ্ঠানে চেয়ারম্যান ড. মো. আব্দুল মোমেন বলেছেন, আমাদের আকাঙ্ক্ষা হলো একটা ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গঠিত হোক। সেই ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ যদি গঠিত হতে হয়, তাহলে সেক্ষেত্রে দুর্নীতি একেবারে নির্মূল হবে এখনো সেটা মনে করি না। দুর্নীতি সেই পুরোনো আমলেও ছিল, অদূর ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু আমরা অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারব। তার জন্য দরকার হচ্ছে আমাদের সদিচ্ছা। 


তিনি আরো বলেন, আজকে আমি আপনাদের সবাইকে বলব, আপনারা সবার আগে লক্ষ্য রাখবেন দুর্নীতি দমন কমিশনে আপনাদের সাথে আমরা যারা কাজ করছি আমরা দুর্নীতিগ্রস্ত কিনা। এটা যদি নিশ্চিত করতে পারেন তাহলে মনে করবেন যে বেশ খানিকটা অগ্রগতি হয়েছে। 


তিনি বলেন, আমরা সেবাদাতা এবং সেবাগ্রহীতার কথা বলি, সংকটটা সেবাগ্রহীতাকে নিয়ে নয়, সেবাদাতাকে নিয়ে। সেবাগ্রহীতার প্রত্যাশা থাকতেই পারে। কিন্তু সেবাদাতা কতটা সদিচ্ছা রাখেন সেবা দিতে সেটাই হচ্ছে বিষয়। আমরা বিশ্বাস করি আমরা যদি ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই, তাহলে আমাদের ক্ষমতার প্রয়োগটা, ক্ষমতা আমরা যেটাকে অনুভব করি সেই প্রয়োগটা আমাদের কমিয়ে আনতে হবে। দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন দুদকের চেয়ারম্যান।


দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর জনসংযোগ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, নতুন চেয়ারম্যান স্যার যোগদানের পর থেকে কাজের গতিশীলতা ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে নিয়মিত বিভিন্ন অফিসে অভিযান পরিচালনা চলমান রয়েছে। নিয়মিত এই অভিযান অব্যহত থাকলে দুর্নীতিবাজরা ভীতহয়ে দুর্নীতি করতে সাহস পাবে না। 


জানা গেছে, ২০২১ সালের ৩ মার্চ দুদকের সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের স্থলাভিষিক্ত হন মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ। তিনি এর আগে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ছিলেন। ওই সময় তার সঙ্গে জহুরুল হককে কমিশনার (তদন্ত) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। দেড় বছর পর আছিয়া খাতুনকে কমিশনার (অনুসন্ধান) মোজাম্মেল হক খানের স্থলে নিয়োগ পান। দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের স্মরণীয় বছর ছিল ‘২০০৭-২০০৮’ সাল। ‘সামরিক বাহিনী-সমর্থিত’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলে দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসান মশহুদ চৌধুরী। তার নেতৃত্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন যে প্রবল গতিশীলতা অর্জন করেছিল। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দুর্নীতিবাজ, ‘পুঁজি-লুটেরা’ রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙা এবং দুর্নীতিবাজদের গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়েছিল।