বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন
হেলিকপ্টার থেকে গুলি ছোড়ার বর্ণনা দিলেন শহীদ শাওনের পিতা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:২১ অপরাহ্ন, ৭ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গত বছরের ২০ জুলাই দিনটি ছিল। পুরো যাত্রাবাড়ি ও শনির আখড়া এলাকার সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছিলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা। কোনভাবেই তাদের আন্দোলন থেকে সরাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ওইদিন বিকেলে দোকান থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামেন ইউনুছ আলী শাওন। তখনই ছাত্র-জনতার ওপর হেলিকপ্টার থেকে র্যাবের এলোপাথাড়ি ছোঁড়া দুটি গুলি শাওনের বুকে লাগে। শহীদ হন তিনি।
শহীদ ইউনুছ আলী শাওন (১৯) লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ মাগুড়ী গ্রামের কাজী বাড়ির হতদরিদ্র আবুল বাসারের সন্তান। তিনি ঢাকার শনির আখড়ার এক আত্মীয়ের কসমেটিকস দোকানের কর্মচারি হিসেবে কর্মরত ছিল। শাওনের গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ হাসপাতালের ২২টি লাশের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। সম্প্রতি সরেজমিনে শাওনের বাড়িতে গেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার বৃদ্ধ বাবা আবুল বাসার।
এ সময় তিনি বাসসকে বলেন, প্রথম স্ত্রী মারা যাবার পর কুলসুম বেগমকে বিয়ে করেন তিনি। এই সংসারে ইউনুছ আলী শাওন তার একমাত্র সন্তান। প্রথম সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। আগের সংসারের বড় ছেলে ওমর ফারুক (৪০) শ্রমিকের কাজ করে। দ্বিতীয় ছেলে কামরুল হোসেন (৩৫) প্রতিবন্ধি ও মেয়ে শিউলী বেগম(৩০) কে বিয়ে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন: ভারতের রাজ্য সভায় শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা
ইউনুছ আলী শাওন ও প্রতিবন্ধি ছেলে কামরুল হোসেন এবং স্ত্রী কুলসুম বেগমকে নিয়ে তার সংসার। বড় ছেলে ওমর ফারুক বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করছেন।
অভাব অনটনের সংসারের হাল ধরেছিলেন দ্বিতীয় সংসারের ছেলে ইউনুছ আলী শাওন। মাস শেষে যে বেতন পেতেন তা দিয়ে চলতো তাদের সংসার। শাওন ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
শাওনের পিতা বলেন, কিভাবে ছেলেকে ভুলব? সারাক্ষণ অনেক স্মৃতি সামনে এসে পড়ে। তাই যখন মনে পড়ে তখনই শাওনের ছবিগুলো দেখি। এর মাধ্যমে খুঁজে পাই তাকে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে পাখির মতো অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে হত্যা করছে। তাদের প্রত্যেকের বিচার না হলে শাওনসহ অন্য শহীদের আত্মা শান্তি পাবে না। দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।
জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দুই লাখ ও সরকারিভাবে পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান পাওয়ার কথা জানিয়ে শাওনের পিতা বলেন, এর বাইরে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আরো কিছু সহযোগিতা পেয়েছি।
আরও পড়ুন: এই বছরের শেষের দিকে নির্বাচন হতে পারে: প্রধান উপদেষ্টা
তিনি বলেন, ছেলেকে হারিয়েছি। কষ্ট থাকলেও দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু অনেক তাজা রক্তের বিনিময়ে।
শহীদ ও আহতেরা যেন সম্মান ও যথাযথ মর্যাদা পায় সে দাবি করেন তিনি।
ওই সময় কথা হয় প্রতিবেশী ও সংবাদকর্মী মো. রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, শনির আখড়ার একটি কসমেটিকস দোকানে পাঁচ হাজার টাকা বেতনে ইউনুছ আলী শাওন চাকুরি করতো। সে টাকা দিয়ে চলতো সংসার। কিন্তু সরকার পতনের আন্দোলনে হেলিকপ্টার থেকে র্যাবের ছোঁড়া গুলিতে শহীদ হন শাওন। তার বুকের দু’পাশে দুটি গুলি লাগে।
পরিবারটি নিরীহ ও খুবই অসহায়। শুধু শাওনই নয়, অনেক শহীদ পরিবারই নি:স্ব। তাদের পাশে সরকারকে দাঁড়ানোর আহবান জানান তিনি।
চন্দ্রগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন বাচ্চু বলেন, সরকার পতনের আন্দোলনে লক্ষ্মীপুরে যে ১৬ জন জীবন দিয়েছে, সেসব শহীদ পরিবারের পাশে বিএনপি দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতেও তাদের পাশে থাকবে।
জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার জানান, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের অনেকের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সাথে কথা বলেছেন তিনি।
আরও পড়ুন: ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বিধ্বস্ত বাড়ি দেখতে জনতার ভিড়
এছাড়া প্রত্যেক পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেলায় ১৬ জন শহীদ হয়েছে। এছাড়া আহত ২৫৯ জনের তালিকা করা হয়েছে। পাশাপাশি শহিদ ও আহতদের পরিবারের নিরাপত্তায় কাজ করছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। প্রশাসন সব সময়ে তাদের পাশে রয়েছে।
এদিকে লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন এ্যানী বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ বা আহত হয়েছেন, বিএনপি তাদের পাশে রয়েছে। তাদের পুনর্বাসন থেকে শুরু করে সব বিষয়ে যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। এটিই বিএনপির অঙ্গিকার। কোন হত্যাকারী ছাড় পাবে না। প্রত্যেকের বিচার হবেই হবে। কেউ ছাড় পাবে না। সূত্র: বাসস
এমএল/
বিজ্ঞাপন
পাঠকপ্রিয়
আরও পড়ুন

স্বাধীন ও দক্ষ বিচার বিভাগ গড়তে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ

সাবেক তিন সিইসির বিরুদ্ধে বিএনপির অভিযোগ দায়ের

সমুদ্র ও নাব্য জলপথের হাইড্রোগ্রাফিক জরিপ ও চার্ট প্রণয়ন নিশ্চিত করা হবে: নৌপরিবহন উপদেষ্টা

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংস্কারে বিশ্বব্যাংকের ৫০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন
