সূর্যমুখী চাষে পীরগঞ্জের কৃষকদের মুখে হাসি


Janobani

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০১:৪৬ অপরাহ্ন, ২২শে সেপ্টেম্বর ২০২২


সূর্যমুখী চাষে পীরগঞ্জের কৃষকদের মুখে হাসি

সুর্যমূখী চাষে আগ্রহী এখন পীরগঞ্জের কৃষকরা। আর মাত্র অল্প কিছুদিন পরেই জমিন থেকে সূর্যমুখী ফসল ঘরে উঠবে। তাই সূর্যমুখীর হাসির মতো কৃষকের মুখে হাসি মিলেছে।  অল্প সময়ে ও লাভজনক ফসল হওয়ায় ইতোমধ্যে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের মধ্যে সুর্যমূখী চাষের আগ্রহ বেড়েছে। ৯০-১১০দিনের মধ্যে উত্তোলন, বাজারে উচ্চ মুল্যের লাভজনক ফসল হওয়ায় জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা ২০২০ সালে সুর্যমুখী ফসল চাষে উৎসাহিত হয়েছিল। খবর বাসসের।

সূর্যমুখী ফসলে উন্নতমানের তৈল থাকে ও বীজে লিনোলিক এসিড বিদ্যমান। হৃদরোগীদের জন্য সূর্যমুখীর তৈল খুবই উপকারী। এছাড়াও সূর্যমুখীর খৈল গরু ও মহিষের উৎকৃষ্টমানের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর বীজ ছাড়ানোর পর মাথাগুলো গরুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। গাছ ও পুষ্পস্তবক জ্বালানী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। 

পীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাদেকুজ্জামান সরকার জানান, ‘কৃষি বান্ধব সরকারের প্রণোদনা কর্মসূচি ও  কৃষক উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে এ বছর পীরগঞ্জের ১৫টি ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হেক্টর জমিতে ১৮০ জন কৃষক সূর্যমুখী ফসলের চাষ করেছে। ২০২০ সালের আগে এই উপজেলায় সূর্যমুখী ফসলের চাষ হয়নি। এ ধরণের কর্মসূচি অব্যাহত রাখার মাধ্যমে একদিকে যেমন উৎকৃষ্ট মানের ভোজ্যতেল উৎপাদন করা সম্ভব হবে অন্যদিকে কৃষিকে একটি লাভজনক পেশায় নিয়ে যাওয়া সম্ভবপর হবে। আমরা প্রতিনিয়ত সম্পৃক্ত-অসম্পৃক্ত তেল ভোজ্য হিসেবে ব্যবহার করছি। অথচ সূর্যমূখীর তেলে কোলেস্টেরোল মাত্রা নেই, স্বাহ্যের জন্য ভাল, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সম্পন্ন তেল ব্যবহারে সুর্যমুখী উৎপাদন ও বাজার জাত করা দরকার।’  

মিঠিপুর ইউনিয়নের দুরামিঠিপুর গ্রামের মাসুদ রানা, ফয়জার রহমান, মাজেদা, গোলাপ, রফিকুন্নবী, নুরতাজ, পীরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের কেশবপুর গ্রামের সাইদুর রহমান, আব্দুস সালাম, রিয়াদ, পাইলট, মমতাজ আলী, টুকুরিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ দুর্গাপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান, রামনাথপুর ইউনিয়নের সয়েকপুর গ্রামের শাহজাহান আলী, আনিছুর রহমান, মিলন কুমার ও শানেরহাট ইউনিয়নের পাহাড়পুর গ্রামের বিপিন চন্দ্রসহ সূর্যমুখী চাষকৃত কৃষকদের সাথে কথা হলে বাসসকে জানান, নিজেরা ৩০, ৩৩ ও ৩৫ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফসল চাষ করেছি। বর্তমানের বাজারদর অনুপাতে সূর্যমূখী ফসল চাষে ভাল মুনাফার সম্ভাবনা দেখছেন কৃষকরা। 

রংপুর জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ওবায়দুর রহমান মন্ডল জানান, ‘সূর্যমুখী একটি উচ্চমূল্যের বাণিজ্যিক তেলজাতীয় ফসল, কৃষিকে বাণিজ্যিকভাবে লাভবান ও শস্য বৈচিত্রকরণ বৃদ্ধিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রংপুর জেলা উক্ত ফসল চাষাবাদে কৃষকদের উৎসাহিত করে যাচ্ছে।’

রংপুর অঞ্চলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ এমদাদ হোসেন শেখ জানান, ‘সরকার প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ ভোজ্যতেল আমদানি করে থাকে। বর্তমানে দেশে চাষ উপযোগী সূর্যমুখী ফসল উৎপাদনের মাধ্যমে উৎকৃষ্টমানের ভোজ্যতেল উৎপাদনের সুযোগ তৈরী হয়েছে। ফলে দেশের প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।’ 

স্থানীয় এমপি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী জানান, ‘কৃষি প্রণোদনা ও পুর্ণবাসন কার্যক্রমের আওতায় এই বছর উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের ১২ হাজার জন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকের মাঝে ভুট্টা, সুর্যমুখী, গম, সরিষা, হাইব্রিড ধান ও পেঁয়াজের বীজ এবং প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার বিনামুল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এর ফলে পীরগঞ্জে পানি সাশ্রয়ী ফসল চাষে সম্প্রসারণ হবে। আশা করছি এতে একদিকে যেমন পানি সাশ্রয়ী পরিবেশ বান্ধব ফসলের চাষাবাদ বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে ওই সব ফসল বাজারজাতে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হবে।’

এসএ/