ডিপিডিসি’র নির্বাহী পরিচালকের চেয়ারে টিবিইএর ডং সেন জ্যাকি


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ১২:২৯ পিএম, ৩রা মার্চ ২০২৫


ডিপিডিসি’র নির্বাহী পরিচালকের চেয়ারে টিবিইএর ডং সেন জ্যাকি
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া।

# বিপু’র প্রতিনিধি পরিচালক মোরশেদ

# অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ

# রুম বন্ধ করে ঘুষ ভাগাভাগি 

#নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে, সম্পর্ক তো দোষের নয়।

সাবেক সিনিয়র বিদুৎ সচিব হাবিবুর রহমান

#দুর্নীতিবাজদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে 

ড. ইকবাল মাহমুদ, সাবেক চেয়ারম্যান, দুদক 

# বৈধ ভাবে সম্পদশালী হওয়ার সুযোগ নাই

- ড. ইফতেখারুজ্জামান নির্বাহী পরিচালক টিআইবি


আইনের বিধি ভেঙে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসির) নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) মোরশেদ আলম খানের চেয়ারে জিটুজি প্রজেক্টের টিবিইএ কোম্পানির ডং সেন জ্যাকি বসেছেন। তিনি যখন এই কক্ষে প্রবেশ করেন এই সময় কক্ষে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। টানা কয়েক ঘন্টা তাদের বৈঠক চলে। তিনি ডিপিডিসি’র নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) না হয়েও এই চেয়ার তার দখলেই থাকে। 


মোরশেদ খানের ভাই আওয়ামী লীগে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। তার নাম মোঃ মুকসুদ আলম খান। তিনি বিএডিসি সার ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপব্যবস্থাপক (বিক্রয়)। মোরশেদ খানের পরিবারের প্রতিটি সদস্য কট্টর আওয়ামী লীগ। ওই পরিবারের সদস্যরা ক্ষমতার দাপটে নিজ এলাকায় সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।  আর এই ক্ষমতাকে পুজি করে পিজিসিবি থেকে ডিপিডিসিতে যোগ দেন মোরশেদ আলম খান। 


ডিপিডিসিতে যোগদান করে তিনি বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে দায়িত্ব পেয়ে শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। ডিপিডিসির যত মেগা প্রকল্প রয়েছে সব গুলো তার তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এই সংস্থার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ গুলো তার পছন্দের ঠিকাদাররা করে থাকেন। আর সেইখান থেকে মোরশেদ আলম খান শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। 


ডিপিডিসির একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমান বিএনপির নেতৃতা¡ধীন প্রকৌশলীদের এক প্রকার ম্যানেজ করেই তিনি এখন চেয়ার আকড়ে রেখেছেন। সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর প্রতিনিধি হিসেবে ডিপিডিসি’র গুরুত্বপূর্ন  এই চেয়ারটি তার দখলেই রেখেছেন।  এদিকে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ ও বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠেছে নির্বাহী পরিচালক (প্রকৌশল) মোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে। 


সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। এই ঘটনা তদন্তে মাঠে নামবে দুদক বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেন। অভিযোগ সূত্র বলছে, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর বন্ধু হওয়া সুবাদে ডং সেন জ্যাকি’র খুব কদর ডিপিডিসিতে। প্রতি মাসে দীর্ঘসময় পার করেন এই কক্ষে। তাদের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ন আলোচনা হয়। আলোচনার মূল বিষয় প্রতিমন্ত্রী বিপুর কমিশন ভাগাভাগি। জিটুজি প্রজেক্ট থেকে একটি অংশ প্রতিমাসে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী কাছে অফশোর ব্যাংক একাউন্টের মাধ্যমে কমিশনের টাকা পৌছে দেওয়া হয়। জিটুজি প্রজেক্টের কমিশনের টাকা বিপুর ক্যাশিয়ার ফয়সাল শরিফের একাউন্টে জমা দেন এই নির্বাহী পরিচালক। তারপর সেই টাকা সাবেক প্রতিমন্ত্রী বিপু’র হাতে চলে যায়।

    

ফয়সালের সঙ্গে প্রকৌশলী মোরশেদের সখ্যতা: সিঙ্গাপুর কোম্পানি এনার্জি এশিয়া মালিক ফায়সাল শরিফ পুরো বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয়ের ডন। তার ইশারা ছাড়া কিছু করতেন না সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বিপু। আর এই সুযোগে বিপু’র ক্যাশিয়ার ফায়সাল শরিফের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলেন ডিপিডিসি’র নির্বাহী পরিচালক মোরশেদ আলম খান। তিনি কট্টর আওয়ামী লীগ হওয়ায় আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ফায়সাল শরিফের মাধ্যমে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে ম্যানেজ করে পেয়ে যান নির্বাহী পরিচালক পদ। ওই সময় অনেকেই নিয়োগ পরিক্ষায় ভালো করেও নিয়োগ পায়নি। কিন্তু রিটেন-ভাইভা ভালো না করে পেয়ে যান চেয়ার। এমন অভিযোগ করেছেন একাধিক প্রকৌশলী। 


তৎকালীন সিনিয়র সচিব হাবিবুর রহমান এ বিষয়ে জনবাণীকে পরিস্কার করে কিছু বলতে পারেননি। তিনি শুধু একটা কথা বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সব হয়েছে। তবে কেউ প্রভাব বিস্তার করেছে কিনা আমার জানা নেই। ফয়সালের সঙ্গে নির্বাহী পরিচালক মোরশেদের সখ্যতা ছিলো কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সম্পর্ক থাকা দোষের কিছু নয়। বন্ধুত্ব থাকতে পারে আমার জানা নেই।


ডিপিডিসির প্রকৌশলীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নির্বাহী পরিচালক মোরশেদ স্যার ঘুষ লেনদেনের সময় এই কক্ষ বন্ধ করে দেন। শুধু ডং সেন জ্যাকি নয়, এই কক্ষে প্রতিনিয়তই আসা যাওয়া রয়েছে নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিবুল হাদী’র। 


এ ব্যাপারে ডিপিডিসি’র নির্বাহী পরিচালক মোরশেদ আলম খানের মুঠো ফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি ক্ষুর্দে বার্তা পাঠিয়ে উত্তর মেলেনি। 


টিবিইএ’র বাংলাদেশে প্রথম ভিজিটে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন: টিবিইএ কোম্পানির জেনারেশন ম্যানেজার ডং সেন জ্যাকি ও প্রজেক্ট ম্যানেজার সাও বাংলাদেশ ভিজিটে আসলে প্রথম পরিদর্শন করতেন বঙ্গবন্ধু জাদুঘর। তারা এক রকমের বঙ্গবন্ধু প্রতি প্রভু ভক্তের মত। সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর বন্ধু সুবাদে তারা এ সব কর্মকান্ড করতেন বলে জানা গেছে।


দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীদের সঙ্গে মোরশেদ খানের সখ্যতা: ডিপিডিসির নির্বাহী পরিচালক মোরশেদ আলম খানের সঙ্গে সখ্যতা থাকায় জিটুজি প্রকল্পের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বদলি আটকে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। সূত্র জানায়, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রনালয়ের কয়েকজন উপ সচিব ও যুগ্ম সচিবের সঙ্গে মোরশেদ আলম খানের ভালো সম্পর্ক থাকায় তিনি ডিপিডিসির এমডিকে তোয়াক্কা করেননা।  


বিএনপি’র প্রকৌশলীরা এমডিকে জিটুজি মেগা প্রকল্পের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত যে সকল কর্মকর্তাদের নাম এসেছে তাদের বদলি কতে অনুরোধ জানান। তাদের মধ্যে রয়েছেন  জিটুজির পিডি ফজিলাতুন্নেছা, জিটুজি’র নির্বাহী প্রকৌশলী রাজিবুল হাদী এবং বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী নেতা নির্বাহী প্রকৌশলী টুটুল চন্দ্র দাস। 


এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি যে কর্মকর্তা হউক। তাদের বৈধ ভাবে সম্পদশালী হওয়ার সুযোগ নাই। ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। তাছাড়া যদি বিদেশে টাকা পাচার করে থাকেন। সেটা হবে মানিলন্ডারিং এর অপরাধ। 


এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক চেয়ারম্যান ড. ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতিবাজ যতই ক্ষমতাধর হউক তাদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে দুর্নীতি করে তারা পার পেয়ে যাবে।

 

প্রিয় পাঠক, আগামী পর্বে থাকছে জিটুজি প্রকল্পের হরিলুটের নেপথ্যে কারা।