জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন জেনেভায় উপস্থাপন
জনবাণী ডেস্ক
প্রকাশ: ০৮:২৪ অপরাহ্ন, ৫ই মার্চ ২০২৫

বাংলাদেশে ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই-আগস্ট বিক্ষোভের সঙ্গে সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের ওপর জাতিসংঘের মানবাধিকার তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক উপস্থাপন করবেন।
বাংলাদেশ সময় বুধবার (৫ মার্চ) সন্ধ্যা ৬টার পর জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানটি জেনেভা থেকে সংস্থাটির ইউটিউব চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুলও বক্তব্য দেন।
মঙ্গলবার (০৪ মার্চ) জানানো হয়, বাংলাদেশে জবাবদিহিতা, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার সংস্কারের লক্ষ্যে তথ্য অনুসন্ধান ও সুপারিশ নিয়ে সদস্য রাষ্ট্র ও নাগরিক সমাজের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবেন বলেও জানানো হয়।
আরও পড়ুন: সরকারি উদ্যোগে পাকিস্তান থেকে এলো আমদানি করা চাল
ভলকার তুর্ক আশা প্রকাশ করেন, তাদের স্বাধীন তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন বাংলাদেশের প্রকৃত ও বাস্তব চিত্র তুলে ধরায় এটি জবাবদিহি, ক্ষতিপূরণ এবং এ অবস্থা থেকে উত্তরণ ও সংস্কারকে সমর্থন করবে।
জেনেভায় মানবাধিকার কাউন্সিলের ৫৮তম অধিবেশনে একটি বিশ্বব্যাপী আপডেট উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, ‘ফৌজদারি মামলায় যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা ও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক সহিংসতার তদন্ত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তুর্ক বলেন, গত বছর বাংলাদেশে সহিংসতায় এক ব্যাপক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। তৎকালীন সরকার ছাত্র আন্দোলনকে ‘নৃশংসভাবে দমনে’ মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।
তিনি আরও বলেন, দেশ এখন একটি নতুন ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করছে। গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সম্পর্কে তাদের সাম্প্রতিক স্বাধীন তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদন এ ক্ষেত্রে ‘গুরুত্বপূর্ণ অবদান’ রাখবে।
আরও পড়ুন: অবশেষে ভাগ্য খুলল ইবতেদায়ী শিক্ষকদের
গত জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার ওপর শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগ যে দমন-নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর)। এ প্রতিবেদনের বলা হয়েছে, বিক্ষোভ চলাকালে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই মিলিটারি রাইফেল এবং প্রাণঘাতী মেটাল প্যালেটস লোড করা শটগানে নিহত হয়েছে।
এই ধরনের শটগান সাধারণত বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে থাকে। বিক্ষোভে কয়েক হাজার মানুষ গুরুতরভাবে আহত হয়েছে, কেউ কেউ আজীবনের জন্য কর্মক্ষমতা হারিয়েছে।
প্রতিবেদনে গত জুলাই-আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দ্বারা সংঘটিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেফতার, নির্যাতন এবং অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের মতো ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উঠে এসেছে।
এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন গোষ্ঠী, সংগঠন এবং বিভিন্ন নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা জড়িত ছিল বলে প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হয়েছে।
আরও পড়ুন: বিশ্বমান বজায় রেখে শ্রম আইন সংস্কারের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার
প্রতিবেদনে বলা হয়, পুলিশ এবং র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ১১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি মানুষকে গ্রেফতার এবং আটক করা হয়েছিল। নিহতদের মধ্যে প্রায় ১২-১৩ শতাংশ শিশু বলে জানা গেছে। পুলিশ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী শিশুদের টার্গেট করে হত্যা করেছে, ইচ্ছাকৃতভাবে পঙ্গু করেছে, নির্বিচারে গ্রেফতার, অমানবিকভাবে আটক-নির্যাতন এবং অন্যান্য ধরনের নিপীড়ন করেছে। বিশেষ করে শুরুর দিকে বিক্ষোভের সম্মুখসারিতে থাকা নারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকরা মারাত্মকভাবে আক্রমণ করেছে।
নারীরা যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন, যার মধ্যে ছিল লিঙ্গভিত্তিক শারীরিক সহিংসতা ও ধর্ষণের হুমকি। কয়েকটি ডকুমেন্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে।
এমএল/