শপিংমল-মার্কেটে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়, জমে উঠেছে ঈদের কেনাকাটা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৩৭ অপরাহ্ন, ১২ই মার্চ ২০২৫

আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ভিড় এড়াতে রমজানের শুরুতেই কেনাকাটায় বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন নগরবাসী। দেখে মনে হয় মার্কেটগুলোতে ঈদের আমেজ লেগে গেছে। রোজার দ্বিতীয় দশকেই রাজধানীর ঈদবাজার জমে উঠেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে ভিড়, মার্কেটগুলোতে বাড়ছে কেনাবেচার ব্যস্ততা। অভিজাত বিপণি বিতান, শপিং মল, মার্কেট, ছোট-বড় ব্র্যান্ডের দোকান-আউটলেট এমনকি ফুটপাতেও কেনাকাটার ধুম পড়েছে।
বুধবার (১২ মার্চ) রাজধানীর উত্তরার আজমপুর, রাজলক্ষ্মী, জসীমউদ্দিন, মিরপুরের ইসিবি চত্বর এবং নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
অন্য বছরগুলোতে রোজার সময় বিকেলে কিংবা সন্ধ্যার পর থেকে মার্কেটগুলোতে কেনাকাটার জন্য মানুষজনের উপস্থিতি দেখা গেলেও এ বছর দুপুরের আগে থেকেই মানুষজন মার্কেটে ভিড় করছেন। এতে করে আগেভাগেই ঈদের বাজারে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
আরও পড়ুন: নারী উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবী নারীমুক্তি কেন্দ্র’র নেত্রীদের
সরেজমিনে বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা গেছে, মার্কেট এবং শপিংমলগুলোতে সকাল থেকে শুরু হচ্ছে ব্যস্ততা। বিভিন্ন ধরনের অফার এবং ঈদ স্পেশাল কালেকশন বিক্রি করা হচ্ছে জনপ্রিয় শপিংমলগুলোতে।
পোশাকের দোকানগুলোতে পুরুষদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, শার্ট-প্যান্ট, গেঞ্জি, টিশার্ট, নারীদের শাড়ি, থ্রিপিস, ওয়ান পিস, কুর্তা এবং বাচ্চা ও শিশুদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, ফ্রক, গেঞ্জিসেটসহ আধুনিক ডিজাইনের পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। একইসঙ্গে কসমেটিকস, জুতা, ঘর সাজানোর সামগ্রী এবং গহনার দোকানগুলোতেও ভিড় জমাচ্ছেন মানুষজন।
দোকানগুলোতেও সিজনাল ডিসকাউন্ট ও ফেস্টিভ অফারের এবং নির্দিষ্ট ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করে কিংবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করলেও মিলছে ছাড় এবং ক্যাশব্যাক অফার।
দোকানিরা জানান, এ বছর ঈদের কেনাকাটা আগেভাগেই শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই বাড়ছে ভিড়। এবার নারী, পুরুষ ও শিশুর জন্য বিভিন্ন ডিজাইনের নতুন পোশাকগুলো ব্যাপক হারে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও মসলিন, সিল্ক, জামদানি, কাতান, কাশ্মীরি কাজ করা শাড়ি ও লেহেঙ্গা, পুরুষদের পায়জামা-পাঞ্জাবি, টিশার্ট এবং শিশুদের জন্য বিভিন্ন রঙের আরামদায়ক পোশাকের চাহিদা বেশি। গরমকে প্রাধান্য দিয়ে ক্রেতারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সুতি কাপড়কে প্রাধান্য দিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন: লালমাটিয়ায় তরুণীকে মারধরের প্রতিবাদ, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণ দাবি
রাজধানীর আড়ংয়ের বিক্রয়কর্মী বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার আগে থেকেই কেনাকাটার জন্য মানুষের ভিড় দেখতে পাচ্ছি। সকালে আউটলেট খোলার পর থেকে প্রচুর লোকসমাগম হচ্ছে। দুপুরের পর থেকে সেটি আরও বেড়ে যায়। সবচেয়ে জমজমাট সময় যায় বিকেল এবং সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত। পাঞ্জাবি, শাড়ি, ওয়ান পিস ও বাচ্চাদের পোশাকের পাশাপাশি বিভিন্ন কসমেটিকস আইটেম, গহনা, লেডিস ব্যাগ-পার্টস অনেক বেশি বিক্রি হচ্ছে। আমরা বিক্রয়কর্মীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছি।
মিরপুর ইসিবি চত্বরের ইজি ফ্যাশনের বিক্রয়কর্মী বলেন, সারাদিন বেচাকেনা যেমনই হোক না কেন ভিড় বাড়ে সন্ধ্যার পর থেকে। সবাই ইফতারের পর থেকেই কেনাকাটা করতে আসে। ঈদ উপলক্ষ্যে সুতি ও আরামদায়ক কাপড়ের শার্ট, টিশার্ট, প্যান্টের নতুন কালেকশনের চাহিদা অনেক বেশি। আশা করছি দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেচাকেনা আরও বেশি জমজমাট হবে।
এছাড়া, বেশ জমজমাট অবস্থা দেখা গেছে রাজধানীর সাইন্সল্যাব, নিউমার্কেট এবং এলিফ্যান্ট রোড এলাকায়। এসব এলাকাজুড়ে মার্কেট, শপিং মলের পাশাপাশি ফুটপাতেও বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের বাহারী পোশাক, গহনা ও কসমেটিকস। এরমধ্যে নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, ধানমন্ডি হকার্স মার্কেট এবং নূরজাহান ম্যানশনে মহিলা ক্রেতার পরিমাণ বেশি দেখা গেছে। চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট ও ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট এবং গ্লোব শপিং সেন্টারের শার্ট-প্যান্টের দোকানগুলোতে ভিড় বেশি ছিল তরুণ ক্রেতাদের। আর সাইন্সল্যাবের বাইতুল মামুর জামে মসজিদ মার্কেট, প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারে পাঞ্জাবি-পায়জামার দোকান এবং এলিফ্যান্ট রোডের জুতার দোকানগুলোতেও ক্রেতাদের ভিড় দেখা গেছে।
এসব মার্কেটের বিক্রেতারা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকায় দেশে একটি স্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। যা বেচাকেনার জন্য ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করছে। তবে মানুষের মধ্যে ছিনতাইয়ের একটি আতঙ্ক বিরাজ করছে, যার কারণে অনেকেই দিনের বেলাতে কেনাকাটা করার প্রতি বেশি ঝুঁকছেন। এতে করে আবার এই এলাকায় অন্য বছরের মতো মধ্যরাত পর্যন্ত কেনাকাটার পরিবেশে ভাটা পড়েছে। আবার ব্যবসায়ী ও দোকানিরাও কিছুটা আতঙ্কে সময় পার করছেন। সেজন্য, আগের তুলনায় এবারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বেশি জোরদার করার দাবিও জানিয়েছেন তারা।
আরও পড়ুন: শাহজাদপুরে আবাসিক হোটেলে আগুন, ৪ মরদেহ উদ্ধার
চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের এক বিক্রেতা বলেন, অন্য বছর সন্ধ্যার পর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ব্যাপক বেচাকেনা হয়েছে। এবার অধিকাংশ ক্রেতারাই দিনের বেলা কেনাকাটা করে ফেরত যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে। আমরাও ক্রেতার চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে দোকানে কাপড় তুলেছি। আশা করছি এবার অন্যবারের তুলনায় ব্যবসা ভালো হবে।
ক্রেতারা বলছেন, বরাবরের মতোই ঈদকে সামনে রেখে কাপড়ের বাড়তি দাম চাইছেন বিক্রেতারা। স্কুলকলেজ রোজার শুরু থেকেই বন্ধ থাকার কারণে অনেকেই আগেভাগে কেনাকাটা করে গ্রামের বাড়িতে চলে যাবেন। সেই বিষয়টি বুঝতে পেরে দাম ছাড়তে চাইছেন না বিক্রেতারা।
আরজিনা নামের এক ক্রেতা বলেন, যেহেতু বাচ্চার স্কুল বন্ধ সেজন্য শেষ সময়ে ঝামেলা এড়াতে আগেভাগেই গ্রামের বাড়িতে চলে যাব। তাই প্রিয়জনের জন্য কাপড় কেনাকাটা করছি। ব্যবসায়ীরা দাম কিছুটা বেশিই চাচ্ছেন। দামাদামি করে নিতে হচ্ছে। তাছাড়া এবার সবাই রোজা রেখে কষ্ট হলেও দিনের বেলাতেই কেনাকাটা শেষ করতে চাচ্ছেন। সেজন্য ভিড়ও একটু বেশি।
রুবেল হোসেন নামের আরেক ক্রেতা বলেন, প্রতিবছর রোজার ঈদেই সবার জন্য নতুন জামাকাপড় কেনাকাটা করা হয়। শেষ সময়ে ভিড় বেশি থাকে সেজন্য আগেভাগেই কেনাকাটা করছি। একটু বেশি ঘুরতে হচ্ছে, তারপরও পরিবার-পরিজনের খুশির কাছে এই কষ্ট কিছুই না।
আরও পড়ুন: ড. হাকীম মো. ইউছুফ হারুন ভূঁইয়া’র জন্মদিন উদযাপিত
অন্যদিকে, নিউমার্কেট থানার আওতাধীন পুরো এলাকাজুড়ে কেনাকাটা করতে আসা মানুষজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নিউমার্কেট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহসেন উদ্দীন। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ঢাকার অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে নিউমার্কেট এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো, আমাদের এখানে অপরাধের পরিমাণ নগণ্য। তারপরও কেনাকাটা করতে আসা মানুষজনের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা আরও সতর্ক হয়েছি। পুরো এলাকাজুড়ে দশটি স্পটে অবজারভেশন ফোর্স কাজ করছে। চারটি পেট্রোল টিম সার্বক্ষণিকভাবে ঘুরেফিরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। একইসঙ্গে মোবাইল-টাকা চুরিসহ ছোটখাটো অপরাধ ঠেকাতে সাদা পোশাকেও পুলিশ সদস্যরা কাজ করছেন।
এমএল/