সম্পদের পাহাড় গড়েছেন ডিপিডিসি’র ইমরোজ আলী


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ১২:২৮ অপরাহ্ন, ১৭ই মার্চ ২০২৫


সম্পদের পাহাড় গড়েছেন ডিপিডিসি’র ইমরোজ আলী
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া।

# নড়াইলে ১০০ বিঘার উপরে প্রমোদ ভিলা

# গ্রাহকদের জিম্মি করে ট্রান্সফরমার সরবরাহ

# একচ্ছত্র আধিপত্য ডিজিটাল পাওয়ার 

# নড়াইল নিজ গ্রামে আধুনিক বাড়ি নির্মাণ 


একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি’র (ডিপিডিসি) গ্রাহকদের জিম্মি করে ট্রান্সফরমার সরবরাহ করে আসছে ডিজিটাল পাওয়ার এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং। প্রতিষ্ঠানটির আধিপত্য বিস্তারের শক্তি হিসেবে কাজ করছেন ডিপিডিসি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইমরোজ আলী। কারণ, চাকরিবিধি ভঙ্গ করে তিনিই এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা করছেন। অভিযোগ আছে, স্বৈরাচারের দোসর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস সাইফুজ্জামান শেখরের ঘনিষ্ঠ সহোচর হওয়ার বদৌলতে পুরো ডিপিডিসি ছিলো ইমরোজের নিয়ন্ত্রণে। তার বাড়ি নড়াইল হওয়ায় শেখরের সঙ্গে ছিলো দারুন সখ্যতা। তাই নির্বাহী প্রকৌশলী ও তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীদের চাপ প্রয়োগ করে গ্রাহকদের ফাইল আটকে রেখে তার কোম্পানি থেকে গ্রাহকদের মালামাল ক্রয় করতে বাধ্য করতেন। ডিপিডিসিতে ইমরোজ আলী’র কোম্পানী ছাড়া কেউ সাব-স্টেশন ব্যবসা করতে পারেন না বলে অভিযোগ করেছেন অনেক ব্যবসায়ী। তারা বলেন, ডিপিডিসি মানেই ইমরোজকে বুঝায়। নিম্ন মানের হলেও এই কোম্পানির ট্রান্সফরমার ছাড়া ফাইল অনুমোদন দেওয়া হয় না। সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতি ও জালিয়াতির মাস্টার এই উপ-সহকারী প্রকৌশলী। 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ডিপিডিসি’র বড় কর্তাদের ম্যানেজ করেই এই ব্যবসা করছেন ইমরোজ। কেউ প্রতিবাদ করলেই তার ওপরে নেমে আসে হয়রানি-নির্মমতা। তাই সহসায় কেউ মুখ খুলতে চায় না।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করেছেন, ইমরোজের ক্ষমতার দাপটে ডিপিডিসির কোন ডিভিশনে কাজ পায় না ঠিকাদাররা। সব কাজ ইমরোজের কব্জায়। 


জানা গেছে, চাকরির আচরণবিধি ভঙ্গ করে ২০১৬ সালে জামিল (ছন্দ নামে) নামের এক ব্যবসায়ীকে পার্টনার করে ব্যবসা শুরু করেন ইমরোজ। ধীরে ধীরে পুরো ব্যবসা দখলে নিয়ে তাকে মালিকানা থেকে বাদ দিয়ে ওই পার্টনারে টাকা আত্মসাত করেন প্রকৌশলী ইমরোজ।


এ ব্যাপারে ভুক্তোভোগী ওই ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের বাড়ি একই এলাকায়। আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব ছিলো। এখন নাই। সে তার মত ব্যবসা করেন। আমি আলাদা ব্যবসা করি। চাকরির সঙ্গে সে ব্যবসাও করছে, সে বিষয়টা ডিপিডিসি দেখবে।


ডিপিডিসি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইমরোজ আলীর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল নিজ গ্রামে আধুনিক বাড়ি নির্মাণ করেছেন তিনি। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এপিএস সাইফুজ্জামান শেখরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকায় পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মাগুরা ও নড়াইলে বিঘা বিঘা জমিতে মাছের ঘের রয়েছে। মাতুয়াইলে রয়েছে ৪ টি ফ্ল্যাট। হাজী বাদশা মিয়া রোড আমিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার সাথের আধুনিক ফ্ল্যাটে বাস করেন তিনি। মাতুয়াইল কলেজ রোড রয়েছে তার আরেকটি ফ্ল্যাটে আছে ব্যবসায়ীক অফিস, মাতুয়াইল সাদ্দাম মার্কেটে বিশাল ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়েছে সিঙ্গার কোম্পানির কাছে। ওই ভবনে রয়েছে তার আরো বেশ কয়েকটি ফ্ল্যাট। এ ছাড়া স্ত্রীর নামে রয়েছে ১০টি’র মত ফ্ল্যাট। নামে-বেনামে রয়েছে একাধিক জমি। ব্যাংকে রয়েছে তার কাড়িকাড়ি টাকা। 


ডিপিডিসির একাধিক সূত্র জানায়, ইমরোজ আলীর কোম্পানি নিম্ন মানের মালামাল দিয়ে কাজ করার ফলে অন্যরা কোন কাজ পাচ্ছেন না। যেমন ২০০ কেভিএ এর কথা বলে ১৫০ কেভিএ সাব-স্টেশন দিচ্ছে। আবার কপার ক্যাবলের কথা বলে এলুমিনিয়াম ক্যাবল দিয়ে গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 


সূত্র জানায়, সরকারি ছুটি পেলেই ইমরোজ আলী ছুটে যান নড়াইলে। সেখানে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের এক ঝাঁক তারকা প্রকৌশলীরা থাকেন। নড়াইলে ১০০ বিঘার উপরে প্রমোদ ভিলা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে আলাদাভাবে মিনি মদের বার রয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস সাইফুজ্জামান শেখরের জন্য ছিলো আধুনিক বিলাশ বহুল ভিলা। সেই ভিলায় অনেক সময় রাত কাটাতেন শেখর। নানা ধরনের অসামাজিক কর্মকাণ্ড চলতো এই ভিলায়। ২০১৮ সাল থেকে এই এলাকার মানুষ উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইমরোজ আলী’র হাতে জিম্মি। কেউ কথা বললেই চলতো নির্যাতন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অনেকটা নীরব রয়েছে এই প্রকৌশলী। তবে তার ব্যবসা চলছে আগের মতই।  


স্থানীয়রা জানায়, ইমরোজ আলী একজন গডফাদার। বর্তমানে তিনি ডিপিডিসিতে চাকরি করেন। তার ব্যবসার পরিকল্পনা সুদূরপ্রসারী। শুধু আওয়ামী লীগই নয়, বোর্ড এবং পরিচালক হিসেবে আছেন বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সদস্যরা। যে দলই সরকার গঠন করুক না কেনো, সে দলের নেতাকে মুখপাত্র করে সামনে নিয়ে আশার পরিকল্পনা রয়েছে তার। 


অভিযোগ আছে, চাকরির শুরু থেকেই বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের নেতা ডিপিডিসি’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী ইমরোজ আলী গ্রীডে চাকরি করেন। গ্রীড তার খুব ভালো লাগার জায়গা। কারণ এখানে ডিউটি ফাঁকি দেওয়ার সুযোগ আছে। তাই তিনি কোনো ডিভিশনে যান না। তিনি চাকরি করেন অথচ বছরের পর বছর ডিউটি রোস্টার অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করে না। ডিজিটাল পাওয়ার নামে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ব্যস্ত থাকেন। সরেজমিনে গিয়ে একদিনও পাওয়া যায়নি তাকে।


তার এক সহকর্মী আক্ষেপ করে বলেন, ইমরোজ তো মিস কল দেয়। সে তো নিয়মিত অফিস করে না। সে তো বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা। তাই তার বিরুদ্ধে কথা বললে, বিপদে পড়তে হবে।


এসব দুর্নীতি ও সম্পদের বিষয়ে মন্তব্য জানতে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ না করায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।


এ ব্যাপারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সরকারি কর্মকর্তারা চাকরি করে বৈধভাবে ব্যবসা করার  সুযোগ নাই। কারণ নির্ধারিত বেতনের বাইরে টাকা পেলে সেটা হবে অবৈধ।   


প্রিয় পাঠক, আগামী পর্বে থাকছে শেখরের ঘনিষ্ঠ সহোচর ইমরোজের নিয়ন্ত্রণে ডিপিডিসি


আরএক্স/