হাসিনার ঘনিষ্ঠ ইকবাল আবারো এনআরবি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে!


Janobani

বশির হোসেন খান

প্রকাশ: ১২:৫৯ অপরাহ্ন, ২৫শে মার্চ ২০২৫


হাসিনার ঘনিষ্ঠ ইকবাল আবারো এনআরবি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে!
ছবি: পত্রিকা থেকে নেওয়া

# রাজনৈতিক বিবেচনায় মেলে ব্যাংকের অনুমোদন

# ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থাহীনতা

# অবৈধ সম্পদের উৎস খুঁজে আইনের আওতায় নেয়ার দাবি

# অর্থ লুটের সুনির্দিষ্ট অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ব্যাংকের পরিচালক করা হলে সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ হবে

-ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি


শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার অতিঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ইকবাল আহমেদ ওবি। প্রতিনিয়ত শেখ পরিবার এবং আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের সঙ্গে যোগাযোগের চিত্র তুলে ধরতেন ফেসবুকে। এভাবে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে পণ্য রপ্তানির আড়ালে দেশের বাইরে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ছত্রছায়ায় রাজনৈতিক বিবেচনায় গড়ে তোলেন এনআরবি ব্যাংক। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও ইকবাল আহমেদ ওবি রয়েছেন নির্ঝঞ্ঝাট। স্বৈরাচারের দোসর ও সুবিধাভোগী হয়েও আছেন বহাল তবিয়তে। দুর্নীতি-অনিয়ম করে পার পেয়ে যাওয়া ইকবাল পুনরায় স্থান পেয়েছেন এনআরবি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে। এ নিয়ে আর্থিক খাত ও ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের মাঝে বেঁধেছে ক্ষোভের দানা। নতুন বাংলাদেশে একজন পুরাতন চিহ্নিত লুটপাটকারীর জায়গা হওয়ায় সবাই হতবাক। এতে করে ব্যাংকটির ভবিষ্যৎ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে আস্থাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে। ইকবালের দুর্নীতি সংক্রান্ত ও অর্থপাচার সংক্রান্ত ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ থাকছে প্রথম পর্ব।


ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চতুর্থ প্রজন্মের এনআরবি ব্যাংকে সুশাসন ফিরিয়ে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাদের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করতে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু তার মধ্যেও রয়ে স্বৈরাচারের প্রেতাত্মা। পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিলেও নতুন পর্ষদে পরিচালক রাখা হয়েছে সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল আহমেদকে। এছাড়া স্বতন্ত্র পরিচালক করা হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ফেরদৌস আরা বেগম, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শেখ মো. সেলিম, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক এমডি কামরুল ইসলাম চৌধুরী, প্রাইম ব্যাংকের সাবেক ডিএমডি শেখ মতিউর রহমান, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শরীফ নুরুল আহকাম ও হিসাববিদ মিজানুর রহমানকে।


ব্যাংক সংশ্লিষ্টদের অভিমত, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের মতো জুলাই বিপ্লবে পাওয়া নতুন বাংলাদেশে ফের এই ইকবালদের মাধ্যমে লুটপাট হোক, তা চাইছেন না কেউ। তারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের লুটপাটের সহযোগী, হিমায়িত মাছ ব্যবসার আড়ালে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের মালিক বনে যাওয়া ইকবালকে কেন ব্যাংকের শীর্ষ পদে বসানো হলো? এখনো তার প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতার উৎস কী? তাদের দাবি, অতিদ্রুত ইকবাল আহমেদ এবং তার দুই ভাই কামাল আহমেদ ও বিলাল আহমেদের সম্পদের উৎস খুঁজে বের করে তাদের আইনের আওতায় আনা জরুরি।


অনুসন্ধানে জানা যায়, ইকবাল আহমেদ, কামাল আহমেদ ও বিলাল আহমেদ তিন ভাই এনআরবি ব্যাংকের উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার। ১৭ মার্চ ২০২৫ শেষে তারা যথাক্রমে ৩.৮০ শতাংশ, ১.৫১ শতাংশ ও ২.১৩ শতাংশ শেয়ারের অংশীদার। এ ছাড়া সিমার্ক (বিডি) লিমিটেড, আইবিসিও লিমিটেড, আইবিসিও এন্টারপ্রাইজ, আইবিসিও ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, ম্যানরু ইন্টারন্যাশনাল ও ম্যানরু শপিং সিটিতেও তাদের যৌথ বিনিয়োগ রয়েছে।


ইকবালের আওয়ামী ঘনিষ্ঠতা এবং নতুন পর্ষদে থাকা প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অর্থপাচার ও ব্যাংকের অর্থ লুটে কারো বিরুদ্ধে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, সেক্ষেত্রে এমন ব্যক্তিকে পুনরায় ব্যাংকের পরিচালক করা হলে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতের সংস্কার চলছে। বিতর্কিত ব্যক্তিকে ব্যাংকের শীর্ষ পদে দিয়ে ব্যাংকটির সংস্কার সম্ভব হবে না।


এ অভিযোগ প্রসঙ্গে ইকবাল আহমদ এর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। এমনি মুঠো ফোনে ক্ষুর্দে বার্তা পাঠিয়ে উত্তর মেলেনি। 


আরএক্স/