যেসব শব্দে ‘কবুল’ বলা ছাড়াও বিয়ে হয়ে যায়


Janobani

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০১:৩২ অপরাহ্ন, ২২শে এপ্রিল ২০২৫


যেসব শব্দে ‘কবুল’ বলা ছাড়াও বিয়ে হয়ে যায়
প্রতীকী ছবি

বিয়ের মাধ্যমে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈধ এবং পবিত্র সম্পর্ক স্থাপন হয়। এ সম্পর্কের মাধ্যমে মানুষ ধর্মীয় বিধান পালনের নিকটবর্তী হয় এবং তার জন্য গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সহজ হয়। এক হাদিসে রাসুলে কারিম (সা.)বলেছেন -


‘যে ব্যক্তি বিয়ে করল সে তার অর্ধেক ইমান (দ্বীন) পূর্ণ করে ফেলল। অতএব, বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’ (বায়হাকি, শুআবুল ইমান)


আরও পড়ুন: পরীক্ষায় সফল হওয়ার জন্য যেসব আমল করতে পারেন


অপর এক হাদিসে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘হে যুবক সকল! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম সে যেন বিয়ে করে। কারণ, বিয়ে করলে দৃষ্টিকে নিচু রাখা যায় এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করা যায়। আর যে ব্যক্তি বিয়ের দায়িত্ব পালন করতে পারবে না সে যেন রোজা রাখতে থাকে। কারণ রোজা তার খাহেশকে কমিয়ে দেবে (বুখারি, মুসলিম)।


হানাফির দৃষ্টি মতে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার জন্য ‘ইজাব’ (প্রস্তাব) ও ‘কবুল’ (গ্রহণ) আবশ্যক। তবে ‘কবুল’ শব্দটি ছাড়াও এমন কিছু শব্দ আছে যেগুলোর মাধ্যমে বিয়ের গ্রহণযোগ্যতা প্রকাশ পায় এবং বিয়ে বিশুদ্ধ হয়ে যায়।


বিয়ে সম্পাদনের মৌলিক শর্তসমূহ

১. কবুল। অপর পক্ষের সম্মতিসূচক জবাব।

২. ইজাব। পক্ষবিশেষের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রস্তাব।

৩. সাক্ষী। দুজন পুরুষ অথবা এক পুরুষ ও দুই নারী সাক্ষীর উপস্থিতি। 

৪. স্পষ্ট বাক্য। এমন শব্দ ব্যবহার করতে হবে যার মাধ্যমে নিকাহ বোঝা যায়। 


যেসব শব্দে ‘কবুল’ না বলেও বিয়ে সম্পন্ন হয়


১.ক্ববিলতু। আমি (গ্রহণ করলাম) ইজাবের জবাবে যদি বর বা কনে বলে  ক্ববিলতু, তাহলে এটি পূর্ণ কবুল হিসেবে গণ্য হবে।


২.তাজায়াজ্জাত্তুহা।  আমি তাকে বিবাহ করলাম। বর নিজেই যদি বলে, অর্থাৎ, আমি তাকে বিবাহ করলাম — তাহলে এটি বিবাহের জন্য স্পষ্ট স্বীকৃতি।


৩. রদ্বিতু। আমি সন্তুষ্ট / রাজি হলাম। এই শব্দটি সরাসরি কবুল না হলেও, ইজাবের পর ব্যবহার হলে তা কবুল ধরা হবে।


৪. আজাযতুহু। আমি একে অনুমোদন করলাম বা। প্রতিনিধির মাধ্যমে করা ইজাব যদি মূল ব্যক্তি অনুমোদন করে, তাহলেও নিকাহ সহীহ ।


৫. আনকাহতু নাফসি ইয়্যাহু। আমি তার সাথে বিবাহ করলাম। এই শব্দতেও কবুলের অর্থ পাওয়া যায়।



ফিকহি কিতাবসমূহের দলিল


১. الهداية: হেদায়া (২য়)—


ويعتبر الإيجاب والقبول بلفظ يدل عليه صريحاً

(الهداية، ج، ص)


অর্থ: ইজাব ও কবুল এমন শব্দে হতে হবে, যা দ্বারা স্পষ্টভাবে নিকাহ বোঝায়।



২. الفتاوى الهندية: ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া—


 ويجوز النكاح بألفاظ هي صريحة في النكاح، كأنكحت، وتزوجت، وقبلت، ورضيت، ونحوها

(الفتاوى الهندية، ج، ص)


বাংলা অনুবাদ: নিকাহ সেই সব স্পষ্ট শব্দ দ্বারা জায়েয হয়, যেমন أنكحتُ, تزوجتُ, قبلتُ, رضيتُ ইত্যাদি।


৩. الدر المختار مع رد المحتار: ফতোয়ায়ে শামী —



ويصح النكاح بكل لفظ صريح يدل على التمليك في الحال، كزوجتك، أنكحتك، وتزوجت ونحوها

(الدر المختار، ج، ص؛ رد المحتار)

কোরআন থেকে দৃষ্টান্ত—


فَإِمْسَاكٌ بِمَعْرُوفٍ أَوْ تَسْرِيحٌ بِإِحْسَانٍ


অর্থ, ভদ্রভাবে স্ত্রীর সঙ্গে জীবন যাপন করো, কিংবা সম্মানের সঙ্গে তাকে বিদায় দাও। (সূরা বাকারা, ২:২২৯)


এখানে “إِمْسَاكٌ” দ্বারা দাম্পত্য জীবনে সম্মতি ও স্বীকৃতির বিষয়টি প্রকাশ পায়, যা কবুলের মর্ম বোঝায়।


হাদিস শরিফ থেকে দলিল-


النكاح عن تراض


অর্থ: নিকাহ পরস্পরের সম্মতির ভিত্তিতে সম্পন্ন হয়। (সুনান ইবনু মাজাহ)


আরও পড়ুন: পবিত্র মাহে রমজানের শেষ মুহূর্তের আমল সমূহ


এ হাদিস থেকে বুঝা যায়, সরাসরি ‘কবুল’ শব্দ ছাড়াও সম্মতির প্রকাশ থাকলে এবং প্রেক্ষাপট পরিষ্কার হলে নিকাহ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।


ফিকহে হানাফি মতে, ‘কবুল’ শব্দটি ছাড়া অন্য শব্দ বা বাক্য দিয়ে যদি সম্মতির প্রকাশ ঘটে এবং তা স্পষ্টভাবে বিবাহের ইঙ্গিত দেয় তাহলে সেই বিয়া বৈধ ও সহীহ। তবে এসব ক্ষেত্রে সাক্ষী, প্রেক্ষাপট, এবং স্পষ্টতা অপরিহার্য।


যদিও শরয়ী দৃষ্টিতে বিভিন্ন বিকল্প শব্দে নিকাহ (বিবাহ) সম্পন্ন হয়, তবে সমাজে ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে ‘আমি কবুল করলাম শব্দ ব্যবহার করায় উত্তম।


এসডি/