পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ বাধলে পাকিস্তান-ভারতের পরিণতি কী হবে


Janobani

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮:৪৩ অপরাহ্ন, ৯ই মে ২০২৫


পূর্ণমাত্রায় যুদ্ধ বাধলে পাকিস্তান-ভারতের পরিণতি কী হবে
ছবি: সংগৃহীত

কয়েক দশকের মধ্যে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সবচেয়ে বড় সামরিক সংঘাতের পর কোটি কোটি মানুষের মনে একটাই প্রশ্ন এখন ঘুরপাক খাচ্ছে—কী হতে পারে পাক-ভারত যুদ্ধের পরিণতি? 


এই প্রতিবেদনে ইতিহাস, সামরিক সক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক গবেষণার আলোকে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে—যেখানে সংঘাত মানেই শুধু সামরিক সংঘর্ষ নয়, বরং এটি ডেকে আনতে পারে চরম মানবিক বিপর্যয়, সেই সাথে পরিবেশগত ধস এবং অর্থনৈতিক সংকট।


বিশ্লেষকদের মতে, পরিস্থিতি এখন অনেকটাই ইসলামাবাদের পরবর্তী সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে। ভারতের পক্ষ থেকে কাশ্মীরে সামরিক হামলার পর পাকিস্তান প্রতিশোধের হুমকি দিলেও, সীমান্তে গোলাবর্ষণ ছাড়া বড় ধরনের পদক্ষেপ এখনো নেয়নি। তবে ভারত অভিযোগ করেছে, জম্মু, উধমপুর ও পাঞ্জাবে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। 


আরও পড়ুন: ৭৭টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করল পাকিস্তান

 

যদি ভারত-পাকিস্তান চলমান সংঘাত পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে পরিণত হয়, আর তা কেবল প্রচলিত অস্ত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, তবুও ফলাফল হবে বিপর্যয়কর। 


সামরিক বিশ্লেষক সংস্থা SIPRI ও Stratfor-এর তথ্য বলছে, প্রাণ হারাতে পারেন ২০ থেকে ৫০ হাজার ভারতীয় ও ১৫ থেকে ৪০ হাজার পাকিস্তানি সেনা। কিন্তু সবচেয়ে বড় আঘাত আসবে নিরীহ সাধারণ মানুষের ওপর। পারমাণবিক যুদ্ধ প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক চিকিৎসকদের সংগঠন IPPNW -এর হিসাবে, শুধু বোমাবর্ষণেই ভারতে ১ থেকে ২.৫ লাখ এবং পাকিস্তানে ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাতে পারে।

 

আর যদি যুদ্ধ পৌঁছে যায় পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের স্তরে তখন পরিস্থিতি হবে আরও ভয়াবহ। অন্যদিকে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা বলছে, ১০০টি পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করলে এক সপ্তাহেই প্রাণ হারাতে পারে ৫ থেকে  প্রায় ১৩ কোটি মানুষ। 


রাটগার্স জলবায়ু মডেলিং ল্যাব জানিয়েছে, এই বিস্ফোরণের ধোঁয়া সূর্যের আলোতে বাঁধা সৃষ্টি করে ডেকে আনবে এক দীর্ঘ ‘পারমাণবিক শীতকাল’, যা পুরো দক্ষিণ এশিয়ার কৃষি উৎপাদন থামিয়ে দিতে পারে, ফলে তৈরি হবে ভয়াবহ বৈশ্বিক খাদ্য সংকট। আর সেই সাথে ভয়াবহ অর্থনৈতিক পরিণতিও হবে। 


আরও পড়ুন: পাকিস্তানের আকাশসীমা এড়িয়ে চলার পরামর্শ


এডিবি ও আইএমএফ-এর তথ্য বলছে, প্রচলিত যুদ্ধেই ভারতের ক্ষতি হতে পারে ৩০ থেকে ৫০ লাখ কোটি টাকা, পাকিস্তানের ১০ থেকে ২০ লাখ কোটি। মুম্বাই, গুজরাট, করাচি, লাহোরের মতো বাণিজ্য শহর প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে এই যুদ্ধের ফলে। আর পরমাণু যুদ্ধে এই ক্ষতির পরিমাণ পৌঁছাতে পারে ৫ থেকে ১০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

 

তবে শেষমেষ যুদ্ধে সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ প্রকাশ পাবে চরম মানবিক বিপর্যয়ে। ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, কোটি কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে ঠাঁই নেবে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে, আর যেখানে খাদ্য, পানি ও ওষুধের অভাবে শুরু হবে মৃত্যুর মিছিল। 


পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের মতে, গঙ্গা ও সিন্ধুর মতো নদীতে পারমাণবিক ও রাসায়নিক দূষণে কৃষি ও পানীয় জল হয়ে উঠবে চরম মাত্রায় বিষাক্ত। অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতাও পৌঁছাবে চরম মাত্রায়। আন্তর্জাতিক সংকট গবেষণা সংস্থা ও ব্রুকিংস-এর গবেষণায় উঠে এসেছে, যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে দুই দেশেই বাড়তে পারে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও সামরিক অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা।


এমএল/