বড় যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশ: ১২:৩৫ অপরাহ্ন, ৭ই জুলাই ২০২৫

টানা ১২ দিনের তীব্র সংঘাতের পর আপাতত যুদ্ধবিরতি চলছে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ এই সংঘাতে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৯০০ ইরানি নাগরিক। নিহতদের মধ্যে ছিলেন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানসহ ২৪ জন শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও ১৪ জন পরমাণু বিজ্ঞানী।
এছাড়া লক্ষ্যবস্তুতে ছিলেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি এবং সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানও। বিশ্লেষকদের মতে, এই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল ইরানের নেতৃত্ব এবং কৌশলগত সামরিক ক্ষমতা একেবারে ভেঙে ফেলা।
যদিও বর্তমানে সংঘর্ষ বিরতি চলছে, তবে ইরান এই বিরতিকে শান্তির সুযোগ হিসেবে না দেখে একটি "কৌশলগত বিরতি" হিসেবে বিবেচনা করছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরান এখন দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের প্রস্তুতিতে মনোযোগী হচ্ছে।
ইরান মনে করে, এই যুদ্ধ তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, এবং এতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সবুজ সংকেত’ ছিল। তেহরান বিশ্বাস করে, অতীতের ইরান-ইরাক যুদ্ধের মতো ধৈর্য ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিজয় আসবে।
১২ দিনের যুদ্ধে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়লেও, পাল্টা হামলায় ইরান ইসরায়েলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বলে দাবি করেছে। যুদ্ধশেষে তেহরান এখন নিজেকে নতুনভাবে সংগঠিত করছে।
মূলত নিচের দিকগুলোতে গুরুত্ব দিচ্ছে ইরান:
- স্বল্প ও মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র মজুত বৃদ্ধি
- ‘ফাতাহ’ ও ‘খাইবার শেকান’ হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের সংযোজন
- বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়ন
- আকাশভিত্তিক নজরদারি প্রযুক্তির উন্নয়ন
এছাড়া রাশিয়ার এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং সু-৩৫ যুদ্ধবিমান কিনতে আগ্রহ দেখিয়েছে ইরান। একই সঙ্গে চীনের জে-১০ ও পঞ্চম প্রজন্মের জে-২০ যুদ্ধবিমান সংগ্রহের বিষয়েও ভাবছে দেশটি।
যুদ্ধের আগে ইরান বিপুল পরিমাণ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে রেখেছে বলে আন্তর্জাতিক মহলের ধারণা। তেহরান এই মজুত ইউরেনিয়ামকে ভবিষ্যতের কৌশলগত চাপে ব্যবহার করতে চায়। এরই অংশ হিসেবে ইরান আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করেছে।
তেহরান স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, চলমান যুদ্ধ-পরবর্তী বিচারিক ও কূটনৈতিক লড়াই শেষ না হওয়া পর্যন্ত তারা পারমাণবিক আলোচনায় ফিরবে না। এমনকি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা করার প্রস্তুতিও নিচ্ছে দেশটি।
বিশ্লেষকদের মতে, এই যুদ্ধবিরতি মূলত ইরানের জন্য সময়ক্ষেপণের সুযোগ। এই সময়কে কাজে লাগিয়ে ইরান নিজেদের সামরিক, কূটনৈতিক এবং প্রযুক্তিগতভাবে নতুন করে সংগঠিত করছে। তেহরানের ‘কৌশলগত ধৈর্য’ কেবল প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা নয়—বরং এটি একটি দীর্ঘমেয়াদি, পরিকল্পিত জবাবের প্রস্তুতি।
ফলে, এই বিরতি যতই স্থির দেখাক না কেন, ভেতরে ভেতরে আগুন জ্বলছে। এবং ইরানের দৃষ্টিতে এটি শুধুই শুরু।
আরএক্স/