আটাবের উদ্যোগে দেশীয় পর্যটনে নবজোয়ার
বশির হোসেন খান
প্রকাশ: ০২:২৯ অপরাহ্ন, ১২ই জুলাই ২০২৫

# ঢাকা থেকে কুয়াকাটা চার ঘণ্টায় দক্ষিণাঞ্চলে পর্যটনের নতুন দুয়ার
# দেশি এয়ারলাইন্স শক্তিশালী হলেই টিকিটের ভাড়া কমবে
# ‘ভিজিট বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইন ও বৈদেশিক পর্যটক আকর্ষণ
# টিকিট সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর ব্যবস্থা দরকার
# নতুন ফ্লাইট ও এয়ারলাইন্স বাড়াতে চাইছে আটাব
বিদেশগামী যাত্রী ও প্রবাসীদের ভোগান্তি লাঘবে এবং অভ্যন্তরীণ পর্যটনকে আরও গতিশীল করতে দেশের ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) বহুমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্য নিয়ন্ত্রণ, নতুন এয়ারলাইন্স আনার প্রস্তাবনা এবং দেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে সহজ ও সাশ্রয়ী যাতায়াত ব্যবস্থার ওপর গুরুত্বারোপ করছে সংগঠনটি। গতকাল শুক্রবার দৈনিক জনবাণীকে এক সাক্ষাৎকারে আটাব প্রেসিডেন্ট ও এটিটিআই (আটাব ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট) এর প্রিন্সিপাল আবদুস সালাম আরেফ বলেন, দেশের ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের বিকাশে আমাদের সংগঠনের চার হাজার ৫০০ সদস্য সরাসরি অবদান রাখছেন। আমরা সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে এই খাতের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতা বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
টিকিট সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর ব্যবস্থা দরকার: বিমান ভাড়ার অতিরিক্ত মূল্য ও কৃত্রিম সংকট তৈরির জন্য দীর্ঘদিন ধরে কিছু এয়ারলাইনস ও এজেন্সির টিকিট সিন্ডিকেট দায়ী। এই বিষয়ে জানতে চাইলে আবদুস সালাম আরেফ বলেন, “আমরা দেখেছি পাসপোর্ট ছাড়া, যাত্রীর নাম ছাড়া অগ্রীম টিকিট বুকিংয়ের মাধ্যমে ম্যানিপুলেশন হতো। একেকটি রুটে টিকিটের সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানো হতো। সরকার ১১ফেব্রুয়ারি যে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে পাসপোর্ট ও ভিসা ছাড়া বুকিং না করার নির্দেশনা তা এই সিন্ডিকেট ভাঙার পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তিনি আরও বলেন, এই খাতে প্রতিবছর প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হলে নিয়মিত মনিটরিং ও কঠোর ব্যবস্থা প্রয়োজন। এয়ারলাইন্সগুলোর রেগুলেশন মানা হচ্ছে কি না, তা দেখা দরকার। সিন্ডিকেটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্হা নেয়া হচ্ছে না এবং আবারো সিন্ডিকেট মাথাচারা দিয়ে উঠেছে। সরকার এই সেক্টরকে সিন্ডিকেট মুক্ত না করলে আর্থিক ক্ষতিতে পরবে বিদেশগামী ও প্রবাসী শ্রমীক যাত্রী। ওমরাহ যাত্রীদের ও অতি উচ্চমূল্য দিয়ে এয়ার টিকেট ক্রয় করতে হচ্ছে। এবিষয়ে দ্রুত উপযুক্ত আমরা বিমান উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার সুদৃষ্টি কামনা করছি।
নতুন ফ্লাইট ও এয়ারলাইন্স বাড়াতে চাইছে আটাব: আটাব প্রেসিডেন্ট মনে করেন, এয়ার টিকিটের দাম সহনীয় রাখতে এয়ারলাইন্স সংখ্যা ও ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। তিনি বলেন, “যত বেশি ফ্লাইট হবে, তত প্রতিযোগিতা বাড়বে। তখন ভাড়া নিজে থেকেই কমে আসবে। আমরা চাই বাংলাদেশ বিমান ও অন্যান্য দেশীয় এয়ারলাইন্স তাদের সক্ষমতা বাড়াক। পাশাপাশি নতুন আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স যেন বাংলাদেশে আসে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করাও জরুরি।
অভ্যন্তরীণ পর্যটনে ‘ট্যুর প্যাকেজ’ দিয়ে সাড়া দিচ্ছে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো: দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলোর উন্নয়নেও আটাব সক্রিয়। কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সিলেট, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি কিংবা সুন্দরবনের মতো গন্তব্যে ঢাকার ট্রাভেল এজেন্সিগুলো ট্যুর প্যাকেজ দিয়ে পর্যটকদের আকৃষ্ট করছে। আরেফ বলেন, সড়ক ও রেল যোগাযোগ যেমন উন্নত হয়েছে, তেমনি নদীমাতৃক পর্যটনকেও এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমাদের ট্রাভেল এজেন্টরা এসব জায়গায় পর্যটকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তিনি পদ্মা সেতুর প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এই একটি সেতু দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটনের মানচিত্রই বদলে দিয়েছে। এখন চার ঘণ্টায় সুন্দরবনে পৌঁছানো সম্ভব। সেখানে নতুন রিসোর্ট, হোটেল ও নৌবিহারের কার্যক্রম বাড়ছে। আমরা চাই সরকার ও প্রাইভেট সেক্টর মিলেই এই উন্নয়ন ত্বরান্বিত করুক।
‘ভিজিট বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইন ও বৈদেশিক পর্যটক আকর্ষণ: বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের বড় সম্ভাবনা হিসেবে পর্যটন খাতকে তুলে ধরতে আটাব শুরু করেছে ‘ভিজিট বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইন। এর উদ্দেশ্য, বিদেশি পর্যটকদের বাংলাদেশে ভ্রমণে উৎসাহিত করা। আরেফ বলেন, দেশের সৌন্দর্য, ঐতিহ্য, ইতিহাস, প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য সবকিছু মিলিয়ে আমরা যদি একটি সমন্বিত প্রচারণা চালাতে পারি, তাহলে বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করা সম্ভব। তিনি বলেন, থার্ড টার্মিনালের কাজ প্রায় শেষ। আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর থাকলে আরও বেশি এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে আসতে আগ্রহী হবে। এতে প্রতিযোগিতা বাড়বে, টিকিটের দাম কমবে।
‘ড. ইউনূসের নেতৃত্বে আশার আলো দেখছি’: বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন জনাব শেখ বশির উদ্দীন কে। এ বিষয়ে আবদুস সালাম আরেফ বলেন, তিনি অত্যন্ত দূরদর্শী ও স্বচ্ছ ভাবনার মানুষ। তাঁর নেতৃত্বে এভিয়েশন ও ট্যুরিজম সেক্টরে স্বচ্ছতা ও উন্নয়ন আসবে বলে আমরা আশাবাদী। টিকিট সিন্ডিকেট ভাঙা থেকে শুরু করে তৃতীয় টার্মিনাল চালু সহ এভিয়েশন, ট্রাভেল এজেন্সি ও টুরিজমের বিভিন্ন আইন ও বিধিমালা সংশোধন করে জনগনের সুবিধা বৃদ্ধিতে তিনি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবেন।
আরএক্স/