বাংলাদেশে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে
বশির হোসেন খান
প্রকাশ: ০৮:২৯ অপরাহ্ন, ১৩ই জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশের পর্যটনের সম্ভাবনার কথা বহুবার উচ্চারিত হলেও সেগুলো বাস্তবে রূপ পেয়েছে খুবই সীমিতভাবে। অথচ এই খাতেই রয়েছে দেশের বিশাল সম্ভাবনা। পর্যটনকে কেন্দ্র করে দেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান, সংস্কৃতির বিকাশ এমনকি আন্তর্জাতিক পরিচিতিও বাড়ানো সম্ভব। এই সম্ভাবনার কথা দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছেন অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)-এর সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ।
তিনি শুধু একজন সংগঠক নন, বরং একজন চিন্তক ও পর্যটন উন্নয়নের কৌশলগত নকশাকার। তাঁর মুখে যখন উচ্চারিত হয়‘পর্যটনের শক্তি দিয়েই গড়ে তুলতে পারি একটি উন্নত, পরিচ্ছন্ন, মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশ’, তখন তা কেবল স্লোগান নয়, হয়ে ওঠে একটি বিকল্প উন্নয়ন কাঠামো।
আটাবের নেতৃত্বে তিনি পর্যটন খাতকে প্রযুক্তিনির্ভর, বেসরকারি বিনিয়োগবান্ধব এবং তরুণবান্ধব করার স্বপ্ন দেখছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকায় আটাব কার্যালয়ে বসে তাঁর সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেন দৈনিক জনবাণীর বিশেষ প্রতিনিধি বশির হোসেন খান।
সাক্ষাৎকারের নির্বাচিত অংশ নিচে তুলে ধরা হলো:
জনবাণী: বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা কীভাবে দেখছেন?
আব্দুস সালাম আরেফ: বাংলাদেশে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের দেশের আছে কক্সবাজারের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত, ইউনেস্কো স্বীকৃত সুন্দরবন, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়-ঝরনা, প্রাচীন নিদর্শন ও সমৃদ্ধ লোকসংস্কৃতি। সঠিক পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক মানে রূপান্তরের মাধ্যমে এগুলোকে ঘিরে দেশের অন্যতম বৈদেশিক আয় খাত হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
জনবাণী: পর্যটন উন্নয়নের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো কী
আরেফ: অবকাঠামোগত দুর্বলতা, দক্ষ জনবলের ঘাটতি, প্রচারণার অভাব, বিদেশিদের জটিল ভিসা প্রক্রিয়া এবং স্থানীয় সেবার মানহীনতা প্রধান বাধা। অনেক সম্ভাবনাময় গন্তব্যে এখনো কোনো পরিকল্পিত উদ্যোগ নেই।
জনবাণী: পর্যটনে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়ছে না কেন
আরেফ: মূলত দীর্ঘমেয়াদি নীতির অভাব এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থার সংকট বড় কারণ। পর্যাপ্ত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও সরকারি সমন্বয়ের অভাব ও প্রকল্প ভিত্তিক সহায়তা না থাকায় অনেকে এগিয়ে আসছেন না।
জনবাণী: বেসরকারি খাত কোন কোন ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে?
আরেফ: হোটেল-রিসোর্ট ছাড়াও থিম পার্ক, অ্যাডভেঞ্চার ট্যুর, জলক্রীড়া, স্কাইডাইভিং, বোটেল, ফ্লোটিং রেস্টুরেন্ট, ফোক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে বেসরকারি খাত বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
জনবাণী: বিদেশি পর্যটক আনতে কী করা প্রয়োজন
আরেফ: প্রথমেই বিমানভাড়া কমাতে হবে, যাতে বাজেট পর্যটকরা আকৃষ্ট হন। এরপর দরকার সহজ ও অনলাইনভিত্তিক ভিসা প্রক্রিয়া, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী আবাসন, তথ্য সহায়তা, গাইড সেবা, ও আন্তর্জাতিক মানের সাইনবোর্ড ও পরিবহন।
জনবাণী: সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কী ভূমিকা থাকা উচিত?
আরেফ: পর্যটন মন্ত্রণালয় ছাড়াও স্বরাষ্ট্র, রেল, সড়ক পরিবহন, সংস্কৃতি, আইনশৃঙ্খলা, ইমিগ্রেশনসহ সব দপ্তরের সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন। একটি আন্তঃমন্ত্রণালয়িক ট্যুরিজম কমিটি গঠন হলে কাজ হবে গতিশীল।
জনবাণী: নদীভিত্তিক পর্যটনে কী পরিকল্পনা নেওয়া যেতে পারে
আরেফ: ঢাকা, বরিশাল, কুয়াকাটা, চাঁদপুর, সুন্দরবন ইত্যাদি রুটে বিলাসবহুল ইনল্যান্ড ক্রুজ চালু করা যেতে পারে। ওয়াটার কটেজ, সানসেট ক্রুজ, ফিশিং ট্যুর চালু করেও বৈচিত্র্য আনা সম্ভব। এই খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ এবং সরকারিভাবে সহজ শর্তে লাইসেন্স জরুরি।
জনবাণী: কমিউনিটি ট্যুরিজমে আপনারা কী ভাবছেন?
আরেফ: আটাব ইতোমধ্যে কিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যেখানে গ্রামবাসীদের ঘর গেস্ট হাউস হিসেবে ব্যবহার, স্যানিটেশন উন্নয়ন, ফোক সংস্কৃতি প্রশিক্ষণ ও স্থানীয় হস্তশিল্প বিকাশের পরিকল্পনা রয়েছে। এতে স্থানীয় জনগোষ্ঠী উপকৃত হবেন এবং পর্যটকরাও পাবেন নতুন অভিজ্ঞতা।
জনবাণী: বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন সংস্কারে আপনার মত কী?
আরেফ : কর্পোরেশনকে আমলাতান্ত্রিক কাঠামো থেকে বের করে এনে উদ্যোক্তাবান্ধব ও ট্রান্সপারেন্ট কর্পোরেট মডেলে রূপান্তর করতে হবে। পরিচালনা পর্ষদে পর্যটন খাতের পেশাদারদের যুক্ত করতে হবে।
জনবাণী: বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সংস্কার প্রয়োজন আছে কি?
আরেফ: অবশ্যই। বাজেট বাড়ানো, জেলা পর্যায়ে কার্যক্রম বিস্তৃত করা, ট্যুরিজম পেশাজীবী সদস্য নিয়োগ, উপদেষ্টা ও পরামর্শক হিসেবে পর্যটন ব্যবসায়ীদের অন্তর্ভুক্ত করা এবং বিদেশে বাংলাদেশের পর্যটন ব্র্যান্ডিং জোরদার করা দরকার।
জনবাণী: আটাব ভবিষ্যতে কী পরিকল্পনা করছে
আরেফ: আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর ট্যুরিজম চালু করাই আমাদের লক্ষ্য। স্মার্ট অ্যাপ, ই-ভিসা, অনলাইন বুকিং, ভার্চুয়াল ট্যুর, উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলায় অংশগ্রহণ সবই আমাদের অগ্রাধিকারে রয়েছে।
জনবাণী: তরুণদের জন্য আপনার বার্তা কী?
আরেফ: পর্যটন তরুণদের জন্য বিশাল সুযোগ। গাইড, ডিজিটাল মার্কেটিং, ফটোগ্রাফি, কনটেন্ট ক্রিয়েশন সবখানেই তারা কাজ করতে পারে। আমি তরুণদের বলব আপনার এলাকার সৌন্দর্য তুলে ধরুন, নিজেই হোন বাংলাদেশের পর্যটনের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।
জনবাণী: সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
আরেফ: আপনাকেও ধন্যবাদ, আর জনবাণীর পাঠকদের জন্য রইল আন্তরিক শুভেচ্ছা।