প্রকৃতির আঁচলে শাপলার হাসি, নীলফামারীর এক নিঝুম সৌন্দর্য


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫:২৯ অপরাহ্ন, ৬ই জুলাই ২০২৫


প্রকৃতির আঁচলে শাপলার হাসি, নীলফামারীর এক নিঝুম সৌন্দর্য
ছবি: প্রতিনিধি

স্নিগ্ধ-কোমল ও অপরূপ রূপের রানী জলজকন্যা শাপলা ফুল। আবহমান কাল ধরে গ্রামবাংলার অতিপরিচিত ও জনপ্রিয় ফুল এটি। এ ফুল জলের বুকে জন্ম নিয়ে তার শান্ত-সৌন্দর্য আর নির্মলতা দিয়ে প্রকৃতিকে মোহনীয় করে তোলে। তার এমন রূপের ছটায় মুগ্ধ হন আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা। যা প্রকৃতিমনা বাঙালির জীবনের সর্বত্রই শাপলা একটি চিরচেনা ও সম্মাণীয় ফুল।


আরও পড়ুন: মহেশপুরে ফলেছে কালো সোনা নামে পরিচিত ‘ভ্যানিলা মসলা’


তাই এর রূপ-সৌন্দর্যের কারণে শাপলা ফুলকে জাতীয় ফুল হিসেবে ভূষিত করা হয়েছে। শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এ লতানো জলজ উদ্ভিদ শুকনো মৌসুমে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকে। বর্ষা এলেই জাগ্রত হয়ে আপন মহিমায় বিশাল আকৃতির পাতা বিস্তার করে তার ওপরে লম্বা ডগার ওপর সারি সারি ফুলের সমাহার ঘটিয়ে জলের প্রকৃতিকে বর্ণিল ও মনোরম করে তোলে। 


বাংলা ক্যানেন্ডারের পাতা উল্টে দেখা গেছে, প্রকৃতিতে এখন বর্ষা ঋতুর রাজত্ব চলছে। এ বর্ষার থৈ থৈ জলে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে বিভিন্ন খাল-বিল, পুকুর-ডোবা, বদ্ধ জলে, আমন ফসলশূন্য জলমগ্ন মাঠে রাশি রাশি সাদা শাপলা ফুল ফুটে অপার সৌন্দর্য নিয়ে যেন আকাশ থেকে নেমে আসা এক ঝাঁক তারার মেলা বসেছে। এমন সৌন্দর্য উপভোগ করতে ওই জলাভূমিতে ফুলপ্রেমীসহ নানা বয়সি মানুষ ভিড় করছেন প্রতিনিয়ত।


মুগ্ধ নয়নে এ ফুলের দিকে তাকিয়ে তারা বিমোহিত হচ্ছেন। কেউ অপরূপ রূপের রানী শাপলা ফুলের সঙ্গে নিজেকে রাঙিয়ে ছড়িয়ে দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। স্থানীয় শিশু-কিশোরের দল ফুল তুলে খেলা করছে। মালা গেঁথে গলায় পড়ছে। দেখা গেছে, নিতাই ও বাহাগিলী ইউনিয়নের কোল ঘেঁষে বয়ে গেছে বিশাল এক জলাধার। 



যা স্থানীয়দের কাছে যৌবনশিরি বিল নামে পরিচিত। এ বিলের টইটুম্বর জলরাশির ওপর সবুজের ক্যানভাসে ফুটেছে অসংখ্য সারি সারির সাদা শাপলা ফুল। সাদা শাপলা, শালুক ফুল যৌবনশিরি বিলটিকে যেন রঙের তুলিতে আঁকা এক জীবন্ত নকশিকাঁথার মাঠে পরিণত করেছে। এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য উদাসি করে তুলছে সববয়সি মানুষকে। 



বিল পাড়ে ফুল দেখতে আসা রুহুল আমীন নামে এক শিক্ষক বলেন, অপরূপ সৌন্দর্যের কারণে সংবিধানে শাপলাকে জাতীয় ফুলের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতিতে বিভিন্ন রঙের শাপলা ফুটলেও সাদা রং আত্মাকে পরিশুদ্ধ আর পাপড়িগুলোর মতো দেশের মানুষকে একত্রিত করে বলেই সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল ও জনগণের প্রতীক। 


চিরন্তন গ্রামবাংলার শুভ্রতার প্রতীক। যা ইংরেজি নাম ওয়াটার লিলি। এর স্নিগ্ধ কোমল রূপ সৌন্দর্য যেকোনো বয়সি মানুষকে প্রথম দর্শনে মুগ্ধ করে তোলে। আমি এ ফুলের মনহরণী রূপ দেখে ভিষণ মুগ্ধ হয়েছি। শাপলা শুধু পরিবেশ প্রকৃতির সৌন্দর্যই বৃদ্ধি করে তা নয়, জীবিকার পাশাপাশি সবজি ও ঐতিহ্যবাহী নানা মুখরোচক পুষ্টিকর খাবার হিসেবে এর জুড়িমেলা ভার। 


শাপলার নরম ডাটার রান্না করা সবজি ভোজনরসিক বাঙালির রসনাতৃপ্তির একটি জনপ্রিয় তরকারি। শুধু কী তাই, শাপলার মাথায় জন্ম নেওয়া ড্যাপের খই, গোড়ার শালুক আগুনে পুড়ে বা সিদ্ধ করা খাদ্য একটি মুখরোচক পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য উপাদান। এসব খাদ্য উপাদানের স্বাদ বর্তমান প্রজন্মের জিহ্বায় না পরলেও প্রবীণরা আজও খুঁজে ফেরেন। আর হাতের নাগালে পেলে তারা শৈশবে ফিরে যান। অনেক নিম্নআয়ের মানুষ শাপলার নানা খাদ্য উপাদান বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। 


তিনি আরও বলেন, আগে খাল-বিল, পুকুর-ডোবাসহ বদ্ধ জলাশয়ে প্রচুর নানা প্রজাতির শাপলার আধিক্য ছিল। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনসহ মানব সৃষ্ট নানাবিধ কারণে দিন দিন ওইসব স্থান থেকে শাপলার পরিধি কমে যাচ্ছে। তবে প্রকৃতির ভারসাম্য ও সৌন্দর্যরক্ষার পাশাপাশি বাঙালি জাতিসত্তার প্রতীক শাপলার অস্তিত্বরক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। 


আরও পড়ুন: গাছে গাছে ঝুলছে রসালো লিচু


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনে সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় খাল-বিলে পানি না থাকায় শাপলাবীজ অঙ্কুরোদগম করতে না পারায় শাপলার বিস্তৃতি ঘটছে না। এ ছাড়াও কৃষক শাপলাকে জঞ্জাল মনে করে মাত্রারিক্ত কীটনাশক প্রয়োগসহ এর বীজ উপড়ে ফেলছে। এতে করে শাপলার ব্যাপক বিস্তৃতি দিন দিন কমে আসছে। আমাদের জাতীয় জীবনের প্রতীক শাপলাকে রক্ষায় সচেতন মহলসহ সবাইকে এগিয়ে আসা দরকার। তা না হলে বাঙালির জীবন থেকে হারিয়ে যাবে ফুল শাপলা।


এসডি/