মাগুরায় পাটের ভালো ফলন, লাভে টান পড়ছে শ্রমিক সংকটে


Janobani

জেলা প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১২:৪৭ অপরাহ্ন, ৭ই জুলাই ২০২৫


মাগুরায় পাটের ভালো ফলন, লাভে টান পড়ছে শ্রমিক সংকটে
পাট কাটায় ব্যাস্ত কৃষক। ছবি: প্রতিনিধি

মাঠে পাকা নেই,কাস্তে চালাতে হচ্ছে তবু মাগুরার কৃষকরা আজ এই বাস্তবতায়। চলতি  মাসেই যেসব মাঠে থাকবার কথা ছিল কাঁচা-সবুজ পাটের পুষ্ট ছায়া,সেখানে এখন চলছে কাস্তের শব্দ। মাটিতে শুয়ে পড়ছে অপরিপক্ব আঁশ।কারণ একটাই,শ্রমিক নেই।


আরও পড়ুন: প্রকৃতির আঁচলে শাপলার হাসি, নীলফামারীর এক নিঝুম সৌন্দর্য


মাগুরার সদর উপজেলার কৃষক নাসির শেখ জানান,আর এক সপ্তাহ দেরি করলেই শ্রমিক পাওয়া যাবে না। কেউ ঢাকায় যাবে,কেউ ইটভাটায়,আবার কেউ ধান রোপণে। বুঝে শুনেই পাট পাঁকেনি,তবু কাটতে বাধ্য হচ্ছি। শুধু নাসির শেখ নয়, এমন অবস্থার মুখে পড়েছেন জেলার শত শত কৃষক। জুলাইয়ের শেষ সময় যেখানে পাট কাটার মৌসুম শুরু হয়,সেখানে শ্রমিক সংকটের ভয়ে কৃষকরা এখন জুনেই কাস্তে হাতে মাঠে। শ্রমিক সংকটের প্রভাব কোথায়?পাঁকেনি পাট,তাই আঁশ খারাপ। আঁশ খারাপ মানে বাজারে দাম কম। কমদামে বিক্রি হলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত।


সদরের একাধিক কৃষক,যেমন নাকোল জোৎ দোহা মাট এলাকার মো. বাসের শেখ (১০ বিঘা), দাউদ হোসেন (১৫ বিঘা), টিকো (২০ বিঘা তোষা জাত), মো. আলিয়ার রহমান (১৪০ শতক), এবং মুকুল (১৮ বিঘা) জানিয়েছেন—প্রতি বছর পাট উৎপাদন করলেও তারা সরকারি কোনো সহায়তা পাননি। এবারের মৌসুমে এই কৃষকদের আশঙ্কা,ভালো ফলন হলেও সঠিক সময়ে কাটতে না পারায় লাভ কমে যাবে।


সরকারি তথ্য ও বাস্তব চিত্র,মাগুরা জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা শেখ মো. মাহাবুব-উল ইসলাম জানান, এ বছর জেলার ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। সম্ভাব্য উৎপাদন ৪ লাখ ৫৪ হাজার বেল। তবে শ্রমিক সংকটে পাট কাটায় গতি কম।


মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তোজাম্মেল হক বলেন, বর্তমানে প্রতি মণ পাটের বাজারমূল্য প্রায় ৪,০০০ টাকা। সঠিক সময়ে কাটলে কৃষকরা আরও লাভবান হতেন। শ্রমিক সংকট: মূল কারণ কোথায়? ঢাকাসহ শহরে অধিক মজুরির লোভে শ্রমিকরা চলে যাচ্ছে। তরুণদের কৃষিকাজে অনাগ্রহ,ইটভাটা,গার্মেন্টস ও নির্মাণশিল্পে মৌসুমি শ্রমিকদের ব্যস্ততা।পাট কাটার উপযুক্ত প্রশিক্ষিত শ্রমিকের ঘাটতি। কৃষকের দাবি: প্রযুক্তি ও তালিকা দরকার সদরের কৃষক মো.আবু জাফরের বক্তব্য,“সরকার যদি মৌসুমি শ্রমিকের তালিকা তৈরি করে এবং পাট কাটার যন্ত্র দেয়, তবে কৃষকের কষ্ট কমবে। জেলার অন্যান্য কৃষকরাও পাট কাটার জন্য যান্ত্রিক সহায়তা এবং স্থানীয় শ্রমিক ব্যবস্থাপনার দাবি তুলেছেন। বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে পাটের গুণগত মান হারানোর ঝুঁকি ক্রমেই বাড়বে।


আরও পড়ুন: মহেশপুরে ফলেছে কালো সোনা নামে পরিচিত ‘ভ্যানিলা মসলা’


বাংলাদেশের সোনালী আঁশ পাট আবারও পরিবেশবান্ধব পণ্যের বিশ্ববাজারে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ভারত ও চীনে পাটজাত পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু উৎপাদক কৃষকেরা রয়ে গেছেন সংকটে।এই বাস্তবতায় যন্ত্রায়ন ও প্রশিক্ষণ ছাড়া পাটচাষে স্থিতিশীলতা আসবে না এমনটাই বলছেন বিশ্লেষকরা।মাগুরার মাঠে কাস্তে চলছে আগেভাগে। শ্রমিক সংকট শুধু একটি মৌসুমি সমস্যা নয় এটি হয়ে উঠেছে একটি কাঠামোগত দুর্বলতা। যদি এখনই কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে কৃষি ও পাটশিল্প দুই-ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কৃষক তাকিয়ে আছেন সমাধানের দিকে যন্ত্র, নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনার।



এসডি/