আবারও ভয়াবহ দাবানলের কবলে আমেরিকার ন্যাশনাল পার্ক


Janobani

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৮:৪৮ অপরাহ্ন, ১৪ই জুলাই ২০২৫


আবারও ভয়াবহ দাবানলের কবলে আমেরিকার ন্যাশনাল পার্ক
ছবি: সংগৃহীত

জ্বলছে, পুড়ছে, পুড়ে ছারখার হচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র! কিছু দিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের ভয়াবহ দাবানল গ্রাস করেছিলো দেশটির গুরুত্বপূর্ণ শহর লস এঞ্জেলেসকে। এবার আবারো দাবানলের পূর্ণ থাবায় রীতিমতো জ্বলছে দেশটির বিভিন্ন অঞ্চল। জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্ক এবার ভয়াবহ দাবানলের কবলে পড়েছে। ইতোমধ্যে ৫ হাজার একর এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এটি। যা জ্বালিয়ে দিয়েছে আমেরিকার অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও। এটি দেখে নেটিজেনরা তাই বলছেন, এ যেনো প্রকৃতিরই নির্মম প্রতিশোধ। যারা কট্টর ইসলাম বিদ্বেষী ইহুদিদের ফিলিস্তিনের অসহায় নিরীহ মুসলিমদের গণহত্যার পথ থেকে ফেরায়নি তাদের সাথে তো এমনটা হবারই ছিলো।


স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের নর্থ রিম পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং শত শত পর্যটক ও বাসিন্দাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।


সিবিএস নিউজের খবরে বলা হয়, দুটি দাবানল ‘ড্রাগন ব্রাভো ফায়ার’ ও ‘হোয়াইট সেজ ফায়ার’ বর্তমানে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের নর্থ রিম ও তার আশপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ড্রাগন ব্রাভো ফায়ার সরাসরি গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন লজ এবং আশপাশের স্থাপনাগুলোকে পুড়িয়ে দিয়েছে।


আরও পড়ুন: পাকিস্তানে বৃষ্টি ও ভয়াবহ বন্যায় অন্তত ১১১ জনের প্রাণহানি


আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ৪ জুলাই হঠাৎ এক বজ্রপাত থেকে দাবানলটির সূত্রপাত হয় গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ন্যাশনাল পার্কের উত্তরাঞ্চলে। উত্তর প্রান্তে ছড়িয়ে পড়া আগুনে পুড়ে যায় শত বছরের পুরনো গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন লজ, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ঐতিহ্যের অংশ ছিল। ১৯৩৭ সালে নির্মিত গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন লজ ছিল উত্তর আমেরিকার অন্যতম পুরনো পার্ক লজ। ইউনেস্কো ঘোষিত এই ভবনটিকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার ‘জাতীয় ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এটি থেকে গ্র্যান্ড ক্যানিয়নের একান্ত সৌন্দর্য উপভোগ করতেন হাজারো দর্শনার্থী। এই দাবানলের ফলে আজ যেনো তা শুধুই স্মৃতি।


জানা গেছে, সপ্তাহখানেকের মধ্যেই এটি ৫০০ একর (প্রায় ২০০ হেক্টর) এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এই আগুন ঘণ্টায় ৩২ কিমি বেগে ছড়িয়ে পড়ে এবং মাঝে মাঝে দমকা হাওয়ার গতি ছিল ৬৪ কিমি।


অপর দাবানল হোয়াইট সেজ ফায়ার শুরু হয় ৯ জুলাই এবং ১৩ জুলাই পর্যন্ত এটি ৪০,১৮৬ একর এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিস জানিয়েছে, দাবানলে এখন পর্যন্ত কোনো প্রাণহানি ঘটেনি এবং সকল বাসিন্দা ও পর্যটক নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।


আরও পড়ুন: নাইজেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি আর নেই


গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন লজ ছিল একটি মৌসুমি হোটেল, যা ১৯২৮ সাল থেকে নর্থ রিমে পর্যটকদের আতিথ্য দিয়ে আসছিল। ১৯৩২ সালে একটি রান্নাঘরের আগুনে আগের লজটি ধ্বংস হয়; পরে ১৯৩৭ সালে পুনর্র্নিমাণ করা হয়।


প্রতি বছর মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত খোলা থাকে এই লজ। চলতি বছর এটি ১৫ মে চালু হয়েছিল এবং ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত চালু থাকার কথা ছিল। তবে দাবানলে লজের মূল ভবন ও আশপাশের ১২০টি কেবিন এবার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।


স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, ৫০০ জন ফায়ারফাইটার হোয়াইট সেজ ফায়ার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন। আকাশপথেও আগুন ঠেকানো রাসায়নিক স্প্রে করা হচ্ছে। ড্রাগন ব্রাভো ফায়ার নিয়ন্ত্রণেও কার করছেন ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। তবে পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে চলমান গরম, শুষ্ক বাতাস এবং ঝোড়ো হাওয়া।


অতি ভয়ংকর এই দাবানলে চিকিৎসার বর্জ্যপ্ল্যান্ট পুড়ে যাওয়ায় ক্লোরিন গ্যাস ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকায় ইতিমধ্যে ঐ এলাকাজুড়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। এর ফলে শ্বাসকষ্ট ও চোখ জ্বালাপোড়া এমনকি চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়ার মত ঘটনা ঘটতে পারে বলে সতর্ক করেছে আমেরিকার স্বাস্থ্য বিভাগ।


এমএল/