লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাতেই ভবিষ্যৎ, রপ্তানি বৈচিত্র্য ও অর্থনৈতিক রূপান্তরের নতুন দিগন্ত: সাকিফ শামীম
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:২৬ অপরাহ্ন, ১৭ই জুলাই ২০২৫

বিশ্বব্যাপী দ্রুত শিল্পায়ন ও নগরায়ণের কারণে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাত ক্রমেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। সাইকেল ও মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ, কৃষিযন্ত্র, বৈদ্যুতিক তার, ব্যাটারি, স্যানিটারি ফিটিংস থেকে শুরু করে হালকা যন্ত্রপাতি ও ডাই-মোল্ডের মতো পণ্যসমূহের চাহিদা দিনদিন বাড়ছে। এই খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এক সম্ভাবনাময় রপ্তানি উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং খাত তিনটি দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে—জনসংখ্যাভিত্তিক কর্মসংস্থান, গ্রামীণ শিল্পায়ন ও আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়।
তবে বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে পণ্যের গুণগত মানে আপসহীন হতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ISO ও CE মার্ক সনদ প্রাপ্তি, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও বাজারভিত্তিক পণ্যের বৈচিত্র্যকেই সাফল্যের মূল চাবিকাঠি হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ প্রসঙ্গে শিল্প মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, গবেষণা ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ করলে এই খাত নতুন প্রযুক্তি গ্রহণে সক্ষমতা অর্জন করছে, যা রপ্তানি বাজারে টেকসই অবস্থান তৈরি করতে পারবে।’
তবে খাতে দক্ষ জনবল ঘাটতি এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন ও কর্মক্ষেত্রভিত্তিক প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেওয়ার সুপারিশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
এছাড়া প্রযুক্তিগত আধুনিকায়ন ও উৎপাদন ব্যবস্থায় অটোমেশন এবং রোবোটিক্স সংযোজন খাতের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রি ৪.০ এর আওতায় IoT, স্মার্ট ম্যানুফ্যাকচারিং এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
রপ্তানির ক্ষেত্রেও বাজার গবেষণার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে। টার্গেট মার্কেট বিশ্লেষণ, কাস্টমাইজড পণ্য পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণ পণ্য ও ব্র্যান্ডের পরিচিতি বাড়াবে। সেইসঙ্গে FTA ও PTA চুক্তিগুলোর কৌশলগত ব্যবহারে শুল্ক বাধা কমিয়ে সহজ প্রবেশাধিকার সম্ভব হবে।
সরকারি সহায়তা ছাড়া এই খাতের কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি সম্ভব নয় বলে মত দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা। রপ্তানি ভর্তুকি, কর অবকাশ, রেয়াতি ঋণ সুবিধা এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (SEZ) বিশেষায়িত লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং জোন প্রতিষ্ঠা করে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশেষ ফান্ড থেকে দীর্ঘমেয়াদি স্বল্পসুদে ঋণ প্রদানও এই খাতের নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হতে পারে। প্রযুক্তি অধিগ্রহণ ও পুঁজি বিনিয়োগের জন্য এমন সহায়তা খাতের প্রতিযোগিতামূলক ভিত্তি গড়ে তুলবে।
শিল্প বিশ্লেষকদের মতে, এই খাতের উন্নয়ন বাংলাদেশের রপ্তানি বহুমুখীকরণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি হতে পারে।
এসডি/