বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণ করছে চীন, ভারতের কপালে চিন্তার ভাঁজ


Janobani

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ০৫:৩৪ অপরাহ্ন, ২০শে জুলাই ২০২৫


বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধ নির্মাণ করছে চীন, ভারতের কপালে চিন্তার ভাঁজ
ছবি: সংগৃহীত

তিব্বতের ইয়ারলুং সাংপো নদীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু করেছে চীন। 


শনিবার (১৯ জুলাই) তিব্বতের মালভূমিতে এই মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং। চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।


তিব্বতের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের শহর ন্যিংচি-তে অবস্থিত ইয়ারলুং সাংপো নদীর নিম্নপ্রবাহে এই বাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, এই নদীটি ভারতের অরুণাচল প্রদেশ ও আসাম রাজ্যে প্রবেশের পর ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত এবং পরবর্তীতে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়ে যমুনা ও পদ্মা নদীতে মিশে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়।


চীন এই বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করে ২০২০ সালে, তাদের পাঁচ বছরের উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে। বিশাল জলবিদ্যুৎ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পটি চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।


চীনের দাবি, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বছরে ৩০ হাজার কোটি কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে, যা বিশ্বের বর্তমান বৃহত্তম বাঁধ থ্রি গর্জেস ড্যাম-এর চেয়ে প্রায় তিন গুণ বড়। প্রকল্পটিতে থাকবে পাঁচটি ক্যাসকেড জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, এবং এতে খরচ হবে আনুমানিক ১৬৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।


এই মেগা প্রকল্প নিয়ে চীনের প্রতিবেশী দেশ ভারতে তীব্র উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বাঁধের কারণে ব্রহ্মপুত্র নদীর পানিপ্রবাহে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে, যা কোটি কোটি মানুষের জীবন, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার ওপর প্রভাব ফেলবে।


ভারতের অভিযোগ—চীন এটি ‘পানির মাধ্যমে চাপ সৃষ্টি’র কৌশল হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। ইচ্ছাকৃতভাবে অতিরিক্ত পানি ছেড়ে বন্যা, কিংবা পানি আটকে রেখে খরা তৈরি করার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশটি।


চীন অবশ্য এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, প্রকল্পটি বৈজ্ঞানিক ও পরিবেশগত মূল্যায়নের মাধ্যমে পরিকল্পিত, যা উজান ও ভাটির দেশের পরিবেশ বা পানির অধিকারকে কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না। বরং, এই বাঁধ জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো, দুর্যোগ প্রশমন এবং টেকসই উন্নয়নের সহায়ক হবে বলে দাবি বেইজিংয়ের।


নদীটির শেষ প্রান্তে অবস্থিত দেশ হিসেবে বাংলাদেশও সম্ভাব্য বিপদের মুখে। পানিপ্রবাহ কমে গেলে শুষ্ক মৌসুমে কৃষি, নদীভিত্তিক জীবিকা এবং খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে। যদিও এখনো বাংলাদেশ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও বিবৃতি দেয়নি, তবে বিশ্লেষকরা বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন।


এই প্রকল্পের জবাবে ভারতও ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর অরুণাচল প্রদেশে নিজস্ব জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলোর কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে। লক্ষ্য একটাই—এই নদীসম্পদের ওপর নিজেদের অধিকার ও নিয়ন্ত্রণ আরও জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠা করা।


চীনের এই বাঁধ প্রকল্প শুধু একটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নয়, এটি একে একে জড়িয়ে ফেলছে ভূরাজনীতি, নিরাপত্তা, পরিবেশ এবং আন্তঃদেশীয় সম্পর্ককে। একতরফা পদক্ষেপ না নিয়ে সব দেশের স্বার্থ বিবেচনায় এনে পারস্পরিক আলোচনা ও সহযোগিতাই পারে এই অঞ্চলের মানুষের ভবিষ্যৎকে নিরাপদ রাখতে।


আরএক্স/