আমরা এক চাঁদাবাজ খেদাই আরেক চাঁদাবাজ এসে হাজির হয়: হান্নান মাসউদ
জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৯:৫১ অপরাহ্ন, ২৩শে জুলাই ২০২৫

এক চাঁদাবাজ খেদাই আরেক চাঁদাবাজ এসে হাজির হয় বলে জানিয়েছেন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদ। আমাদের ব্যবসায়ীরা নিরাপদ নেই, চাঁদা না দিলে তাদেরকে রাস্তায় পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আমরা একটি নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য বারবার জীবন দিচ্ছি, কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
বুধবার (২৩ জুলাই) সন্ধ্যায় কুমিল্লা টাউন হল মাঠে জাতীয় নাগরিক পার্টির জুলাই পদযাত্রা ও শোক র্যালি শেষে পথসভায় এসব কথা বলেন এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতা।
আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, আমরা স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার চাই। যেভাবে আমাদের মায়েরা আমাদের স্বাভাবিকভাবে জন্ম দিয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার চাই। কিন্তু আমরা প্রতিদিন ঘর থেকে বের হই রাতে জীবিত, ঘরে ফিরব কিনা এই নিশ্চয়তা আমাদের নেই। কখন কারে মেরে দেয়, বিমান এসে মেরে দেয়, কখন আমাদেরকে ইট মেরে, পাথর মেরে হত্যা করা হয় তার নিশ্চয়তা নাই। কথা একটাই বারবার শোক যাত্রা না, আজ থেকে আমাদের দাবি হবে একটাই- এই বাংলাদেশের জনগণ, স্বাধীন দেশের জনগণ স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার চায়। স্বাভাবিকভাবে জন্ম নিয়েছি স্বাভাবিকভাবে মরতে চাই, কোনো দুর্ঘটনায় মরতে চাই না।
আরও পড়ুন: ড. ইউনূসের স্বজনপ্রীতির বড় উদাহরণ বর্তমানের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা: হাসনাত
তিনি বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা ২০০ বছর লড়াই করে ব্রিটিশদের খেদিয়েছে তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে একটি শান্তির জীবন উপহার দেওয়ার জন্য। আমাদের পূর্বপুরুষরা পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশকে আলাদা করেছে যাতে করে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম একটি নিরাপদ বাংলাদেশে বসবাস করতে পারে। আমাদের পূর্বপুরুষরা ১৯৯০ সালে জীবন দিয়েছে স্বৈরাচার থেকে যেন বাংলাদেশের মানুষ নিরাপদে বাঁচতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় ব্রিটিশ খেদানোর ৭৫ বছর পরে, পাকিস্তানি হানাদারদের খেদানোর ৪৫ বছর পরে, এরশাদ খেদানোর প্রায় ৩০ বছর পরে আজ আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই।
আব্দুল হান্নান মাসউদ বলেন, আমাদের রাস্তায় নিরাপত্তা নেই। মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি আমাদেরকে চাপা দিয়ে চলে যায়। আমাদের হসপিটালে নিরাপত্তা নেই, আমরা ভালো চিকিৎসা পাই না। শ্রেণিকক্ষে নিরাপত্তা নেই বিমান এসে আমাদের ছাত্র-ছাত্রী ভাইবোনদের হত্যা করে চলে যায়। আমাদের নিরাপত্তা ঘরে নেই, সেখান থেকে আমাদেরকে ধরে নিয়ে গুম করা হয়। যখন আমাদের ডাক্তাররা আমাদেরকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা কিন্তু মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ দিয়ে আমাদেরকে হত্যা করে। পুরো দেশটাই দুর্নীতিতে ভরে গেছে। তারপর যত ঘটনাই ঘটে প্রত্যেক ঘটনার পরে আমরা একটা শোক র্যালি করি, শোক যাত্রা করি, এরপরই শেষ।
রানা প্লাজার স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, রানা প্লাজার গার্মেন্টসের শ্রমিকরা নিরাপদ ছিল না। আইন অমান্য করে রানা প্লাজা তৈরি করা হয়েছে। আমরা তাসিন গার্মেন্টসের কথা ভুলে যাই নাই। সেখানে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা না থাকার কারণে শত শত গার্মেন্টস কর্মী নিহত হয়েছে।
আরও পড়ুন: যাত্রী ছাউনির মুখোশে ফুটপাতে কর্পোরেশনের অবৈধ দোকান
এনসিপির এই নেতা বলেন, বাংলাদেশের রাস্তায় প্রতিদিন শতজন নিহত হয় এক্সিডেন্ট করে। আমরা বাংলাদেশকে নিরাপদ করে গড়বার জন্য এই প্রজন্ম আপনাদের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। আমার সামনে যে প্রজন্ম দাঁড়িয়ে আছে, এই প্রজন্ম বাংলাদেশকে ৫০ বছর ধরে জিম্মি করে রাখা একটি পরিবার থেকে দেশকে মুক্ত করেছে। এনসিপির নেতৃত্বে আগামীর বাংলাদেশে যেন আর শোক যাত্রা না করতে হয়। আমরা বারবার শোক যাত্রা করতে চাই না, আমরা নিরাপত্তা চাই।
এ সময় এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সার্জিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুউদ্দীন পাটওয়ারী, সিনিয়র মুখ্য সংগঠক সাদিয়া ফারজানা দিনা, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, যুগ্ম সদস্যসচিব জয়নাল আবেদীন শিশিরসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
এমএল/