ভাড়া করা লোক দিয়ে দেশ চালানো যায় না: ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৫৮ অপরাহ্ন, ২৬শে জুলাই ২০২৫

বিদেশ থেকে কয়েকজনকে ভাড়া করে নিয়ে এসে দেশ চালানো যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ভাড়া করা লোকদের দিয়ে দেশ চালানো যায় না।
তিনি বলেছেন, “এখন আমরা নির্বাচন করতে গেলেই বলবে যে- বিএনপি শুধু নির্বাচন চায়। নির্বাচন কেন চাই- সে দিকটা কেউ ভালো করে চিন্তা করার অবকাশ পায় না।
“নির্বাচন না হলে আমি প্রতিনিধি নির্বাচন করব কী করে? আর প্রতিনিধি নির্বাচিত না হলে সে পার্লামেন্টে যাবে কী করে? আর পার্লামেন্টে না গেলে জনগণের শাসনটা প্রতিষ্ঠিত হবে কোত্থেকে?
“কয়েকজন ব্যক্তিকে দেশ-বিদেশ থেকে ভাড়া করে নিয়ে এসে কি দেশ চালানো যায়? যায় না। এই যে সহজ-সরল কথা, আমাদেরকে উপলব্ধি করতে হবে।”
আরও পড়ুন: পুলিশের আচরণে এখনো ইতিবাচক পরিবর্তন আসেনি: মির্জা ফখরুল
শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে জিয়া পরিষদ আয়োজিত ‘ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার পতন ও জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে বর্ষপূর্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন মির্জা ফখরুল। তার ভাষ্য, দেশে এখন সংখ্যানুপাতিক হারে ভোটের নামে জগাখিচুড়ি চলছে।
“বাংলাদেশে এখন একটা জগাখিচুড়ি ঘটনা চলছে। কিছু কিছু লোক, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল তারা বিভিন্ন রকম কথা বলতে শুরু করেছেন এবং যে বিষয়গুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্কই নেই। যেমন আপনি দেখুন- খুব জোর করে বলছে, জোর গলায় বলছে যে- সংখ্যানুপাতিক হারে নির্বাচন। অর্থাৎ আনুপাতিক হারে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমাদের সাধারণ মানুষ তো বোঝেই না যে- আনুপাতিক হারে নির্বাচনটা কী? তারা (জনগণ) জানে যে- একজন প্রার্থী দেবে পার্টি, সেই প্রার্থীর যেই মার্কাই হোক- ধানের শীষ অথবা দাঁড়িপাল্লা অথবা কুলা, পাতা যাই হোক- সেখানে গিয়ে সে ভোটের দিন ভোট দেবে, ভোট দিয়ে নির্বাচন করবে। এখন ইনারা বলতে শুরু করেছেন আনুপাতিক হারে নির্বাচন হবে।”
ফখরুল বলেন, “আনুপাতিকটা কী জিনিস? সাধারণ মানুষকে জিজ্ঞাসা করেন, তারা বলতে পারবে না। আমরা যারা রাজনীতি করি, কিছুটা বোঝার চেষ্টা করিৃতাতে করে ভোট হবে, জনগণ ভোট দেবে; যে দলটি সবচেয়ে বেশি ভোট পাবে, তারা তাদের নমিনেশন দেবে পার্লামেন্টে যাওয়ার জন্য।
আরও পড়ুন: পুরোনো সিস্টেমে আইন বাংলাদেশ আর চলবে না: নাহিদ ইসলাম
“এতে করে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ যারা, তাদের এলাকায় একজন নেতা চায়, প্রতিনিধি চায়; তাদের কাজগুলো করার জন্য একজন নেতৃত্ব খোঁজে; সেটা কোনো মতেই এই পদ্ধতিতে সম্ভব হবে না। আমরা এই কারণেই বলেছি যে, নিম্নকক্ষের যে পার্লামেন্ট, সেই পার্লামেন্টে আমরা আনুপাতিক হারে নির্বাচনের কথা চিন্তা করি না।”
‘সংস্কার রাতারাতি হয় না’
২০১৬ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ এর মাধ্যমে সংস্কার কর্মসূচি এবং ২০২২ সালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফার রাষ্ট্র কাঠামোর আমূল সংস্কার কর্মসূচি তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “এখন এটা রাতারাতি সম্ভব না। অনেকে বলছেন যে, কজন লোক সংস্কার যারা করছেন, তারা কতগুলো বৈঠক করে সংস্কারের কতগুলো বিষয় নিয়ে এসে জনগণকে এগিয়ে দিলেন, আর সংস্কার হয়ে গেল; সেইভাবে সংস্কার হয় না।
“সংস্কার হতে হবে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েৃইটস এ কনটিনিউয়াস প্রসেস। আপনি চাইলেন আর কালকে পুলিশ ঘুষ খাওয়া বন্ধ করে দেবে- এটা মনে করার কোনো কারণ নাই। কাঠামোটা তৈরি করতে হবে এমনভাবে- যাতে করে সে ঘুষ না খায়।”
আরও পড়ুন: আগে ১ লাখ টাকা ঘুষ নিলে এখন নিচ্ছে ৫ লাখ: মির্জা ফখরুল
‘নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসি বদলাতে হবে’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘ঠিক একইভাবে আমাদের যে আমলাতন্ত্র, এই আমলাতন্ত্র- এটা আমাদের উন্নয়নের পথে একটা বড় বাধা; ইটস এ নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসি। এই নেগেটিভ ব্যুরোক্রেসিকে পজেটিভ ব্যুরোক্রেসি করতে হলে তার জন্য যা যা করা দরকার, অর্থাৎ মূল কাজ হচ্ছে জনগণের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা- সেই বিষয়গুলো করতে হবে।
“অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলোর মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত জনগণের কাছে চলে যাওয়া। জনগণের কাছ থেকে তাদের কী প্রয়োজন, তাদের থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে সেটাকে নিয়ে এসে দেশ পরিচালনা করার ব্যবস্থা করা।”
‘দেশে ক্রান্তিকাল চলছে’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজ গোটা জাতি একটা ক্রান্তিকালে পৌঁছেছে। এখন আমরা অপেক্ষা করছি ট্রান্সজিশনাল পিরিয়ড- গণতন্ত্র উত্তরণের একটা পথ খুঁজছি আমরা। কিছু আগে একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম আমাদের বাংলাদেশের স্বনামধন্য অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান; তার একটি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানে।
“বাংলাদেশে যে একটা ভয়াবহ সংকট উপস্থিত হয়েছে, আমরা যে এখন একটা রাজনৈতিক শূন্যতা এবং অর্থনৈতিক বিরূপ একটা প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি; সেখান থেকে বেরিয়ে এসে একটা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামো- যেটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য কল্যাণকর হবে, তাকে নিরূপণ করার ব্যাপারটা।
“আসলে আওয়ামী লীগ যে ফ্যাসিস্ট শক্তি, তারা যে ক্ষতিটা বাংলাদেশের করে দিয়ে গেছে- সেই ক্ষতিটা পূরণ এতো সহজে হবে না। তারা সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। শুধুমাত্র বিচার বিভাগ, প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুধু ধ্বংস করেনি; তারা রাজনৈতিক দলগুলোকেও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।”
আরও পড়ুন: অন্তর্বর্তী সরকারের অনভিজ্ঞতা দায়ী: গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
প্রয়াত জিয়াউর রহমানের জীবন-কর্মের ওপর গবেষণা করে তা জনগণের মাঝে ছড়িয়ে দিতে জিয়া পরিষদের নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।
জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস অসুস্থ হয়ে দীর্ঘদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তার অনুপস্থিতিতে সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।
আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় এই আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জিয়া পরিষদের এমতাজ হোসেন, মজিবুর রহমান হাওলাদার, আবদুল্লাহ হিল মাসুদ, খন্দোকার শফিকুল হাসান, আলী নূর রহমান, এম জাহীর আলী, মনোয়ারুল ইসলাম এনাম, রুহুল আলম।
এমএল/